সোরিয়াসিস চিরতরে সারানোর উপায়

সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘমেয়াদি চর্মরোগ যা ত্বকে লাল দানা এবং সাদা আঁশের মতো আবরণের সৃষ্টি করে। এটি তীব্র প্রদাহ এবং জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে, যা অনেক সময় তীব্র চুলকানি ও রক্তপাতও ঘটাতে পারে। সোরিয়াসিস নিরাময় একটি জটিল প্রক্রিয়া হলেও, নিয়মিত সঠিক সোরিয়াসিস চিকিৎসা মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিচে সোরিয়াসিস সারানোর কিছু কার্যকর সমাধান আলোচনা করব।

Contents show

সোরিয়াসিস কী এবং এর লক্ষণ

সোরিয়াসিস হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি এবং অ-সংক্রামক ত্বকের রোগ যা ত্বকের কোষগুলির অতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে লাল দাগের সাথে সাদা স্কেল তৈরি হয়। এটি সাধারণত ত্বকে লাল, খসখসে ক্ষেত্র তৈরি করে যা প্ল্যাক হিসেবে পরিচিত। সোরিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই অতিরিক্ত উপসর্গ অনুভব করেন যা দৈনন্দিন জীবনে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।

সোরিয়াসিসের সাধারণ লক্ষণসমূহ

সোরিয়াসিস চিহ্নিতকরণ করতে গেলে সম্ভাব্য লক্ষণগুলোর প্রতি সচেতন হওয়া জরুরি। এটি আপনাকে সঠিক সময়ে চিকিত্সার প্রয়োজনীয়তা সনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে। সোরিয়াসিসের সাধারণ লক্ষণগুলো হল:

  • ত্বক চুলকানি যা সাধারণত শুষ্ক এবং ফাটাযুক্ত হয়।
  • লাল প্যাচ যা শুষ্ক এবং ছাল ওঠে।
  • নখের খসখসে এবং গর্ত তৈরি হওয়া।
  • ব্যথা ও কোমল জয়েন্ট।
  • জরুরি ক্ষেত্রে নখ বা ত্বকে ফোসকা তৈরি হওয়া।

30% পর্যন্ত সোরিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা জয়েন্টে ব্যথার অভিজ্ঞতা পান যা কর্মদক্ষতায় প্রভাব ফেলতে পারে। সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলো বোঝা এবং সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া এই রোগ পরিচালনায় সহায়তা করে।

রোগটি কিভাবে শনাক্ত করবেন

সোরিয়াসিস চিহ্নিতকরণ সহজতর করতে রোগীর উল্লেখিত উপসর্গগুলো পর্যবেক্ষণ করা দরকার। ত্বকের প্ল্যাক, নখের অসুস্থতা, এবং জয়েন্টের ব্যথা এর প্রধান লক্ষণ। ত্বকের লাল দাগ বা খসখসে দাগ দেখলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। সঠিক প্রয়োজনীয় চিকিত্সার লক্ষ্য হল উপসর্গগুলি হ্রাস করা এবং ত্বকের কোষগুলির অতিরিক্ত উত্পাদনকে ধীর করা। চিকিত্সা পরিকল্পনাগুলি সাধারণত রোগীর বয়স, সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং লক্ষণগুলির তীব্রতার উপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়।

সোরিয়াসিসের কারণ ও ট্রিগার ফ্যাক্টর

সোরিয়াসিস হচ্ছে এমন একটি চর্মরোগ যা হাজার হাজার মানুষকে ভুগতে বাধ্য করে। যদিও সোরিয়াসিস সংক্রামক নয়, তবুও এটি সম্পর্কিত ব্যথা, জ্বালাপোড়া এবং রক্তপাত অনেকেই সহ্য করে থাকেন। সোরিয়াসিসের কারণসোরিয়াসিস ট্রিগার বিভিন্ন হতে পারে, যা আমরা এখানে বিশদভাবে আলোচনা করব।

বংশগত কারণ

পরিবারে যদি কোন ব্যক্তি সোরিয়াসিসে আক্রান্ত থাকেন, তাহলে পরিবারের অন্যদেরও এটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রায় ৩% জনসংখ্যার মধ্যে সোরিয়াসিস দেখা দেয়, এবং এক্ষেত্রে এটি বংশগত কারণ হতে পারে। এর ফলে জিনগতভাবে এই রোগের প্রভাব অন্যান্য সদস্যদের উপর সহজেই পরতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  পায়ের ব্যথা তাৎক্ষণিক মুক্তির উপায়

অটোইমিউন ডিসঅর্ডার

অটোইমিউন রোগ হল সেই ক্ষেত্র যেখানে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজের শরীরের কোষকে আক্রমণ করে। সোরিয়াসিসের কারণ হিসেবে অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া এর প্রভাবকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে। অটোইমিউন ডিসঅর্ডারের জন্য, শরীরের প্রতিরোধকসমূহ ত্বকের অতিরিক্ত কোষ তৈরী করে। এ কারণে, প্লেক সোরিয়াসিস রোগের মধ্যে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে দেখা যায় ৮০% লোকের।

পরিবেশগত ফ্যাক্টর

পরিবেশগত ফ্যাক্টর যেমন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকজনিত ইনফেকশন সোরিয়াসিস ট্রিগার হিসেবে কাজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্কুল্প সোরিয়াসিস ৬০% লোকের মধ্যে দেখা যায় যা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের ফলস্বরূপ হতে পারে। এছাড়া, ফ্লেক্সুরাল বা ইনভার্স সোরিয়াসিস রোগের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে বেদনাদায়ক সাদা, পুঁজ-ভরা বাম্প, মসৃণ ত্বক ও আঁশযুক্ত নয়।

উপরোক্ত ফ্যাক্টরগুলির মধ্যে বংশগত কারণ, অটোইমিউন ডিসঅর্ডার এবং পরিবেশগত ফ্যাক্টর সোরিয়াসিসের কারণ ও ট্রিগার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক প্রতিরোধ ও সাবধানতা অবলম্বন করে এই ফ্যাক্টরগুলি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

How to Cure Psoriasis Permanently

সোরিয়াসিস চিরতরে নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়, যা প্রদাহ ও ত্বকের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। বর্তমান গবেষণা অনুযায়ী, সোরিয়াসিস মুক্তির উপায়সমূহ অনেকাংশেই নির্ভর করে বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি ও সঠিক নিয়ম মেনে চলার উপর।

সোরিয়াসিস ট্রিটমেন্ট এর মধ্যে প্রধানত নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি ব্যবহৃত হয়:

  • স্টেরয়েড ক্রিম: প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
  • সালিসাইলিক এসিড: স্কেলস কমাতে সাহায্য করে।
  • ক্যালসিপোট্রিয়ল: ত্বকের কোষের বৃদ্ধি হ্রাস করে।
  • ইমিউনোমডুলেটরস: ইমিউন সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  • বায়োলজিক্স: অটোইমিউন ডিসঅর্ডার নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক কার্যকর। এগুলি সাধারণত TNF ইনহিবিটরস, IL-২৩ ইনহিবিটরস, IL-১৭ ইনহিবিটরস, এবং IL-১২/২৩ ইনহিবিটরস নামক বিভিন্ন গোষ্ঠীতে ভাগ করা হয়।

অতিরিক্তভাবে, UVB থেরাপি, মিথোট্রেক্সেট, সাইক্লোসপোরিন, এবং এনজাইম ইনহিবিটরস (যেমনঃ এপ্রেমিলাস্ট) চিরতরে সোরিয়াসিস মুক্তি পাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। দৈনন্দিন জীবনে কিছু সহজ পদ্ধতি যেমন সল্ট বাথ, কোলয়েডাল ওটমিল, অ্যালো ভেরা এবং আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করে সোরিয়াসিসের উপসর্গগুলি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

অনেক ক্ষেত্রে রোগী নিরিধারিত চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসও বজায় রেখে সফল হয়েছেন। তবে, এটা মনে রাখা জরুরি যে প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে সোরিয়াসিস ট্রিটমেন্ট ভিন্ন হতে পারে এবং নিয়মিত মনিটরিং সহ প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী চিকিৎসার পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে।

সোরিয়াসিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

সোরিয়াসিস যাদের রয়েছে, তাদের জন্য প্রাকৃতিক উপায়ের মাধ্যমে নিরাময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সোরিয়াসিস প্রাকৃতিক উপচার হিসেবে বিভিন্ন হারবাল চিকিৎসা ব্যবহার করে ত্বকের সমস্যাগুলি লাঘব করা সম্ভব। এ কারণে হারবাল চিকিৎসা এখন অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, কারণ এতে পঞ্চাশের অধিক ভেষজ গুণাবলী থাকে যা ত্বকের জন্য উপকারী।

তাহলে জেনে নেওয়া যাক কীভাবে সোরিয়াসিস প্রাকৃতিক উপচার প্রয়োগ করা যেতে পারে:

  • অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরা জেলের প্রাকৃতিক স্যপ্তাশ্রুতির জন্য পরিচিত এবং এটি ত্বককে ঠান্ডা করে। এটি সোরিয়াসিসের জ্বালা ও চুলকানির উপশম করে।
  • মাছের তেল: এই উপাদানে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা প্রদাহ কমায় এবং ত্বকের শুষ্কতা দুর করে।
  • হলুদ: হলুদে থাকা কারকিউমিন দাগগুলিকে স্বাভাবিক আকারে ফিরিয়ে আনে এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।

মনে রাখতে হবে, সোরিয়াসিস প্রাকৃতিক উপচার বা হারবাল চিকিৎসা শুধুমাত্র ত্বকের উপর কার্যকরী নয়, বরং শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপেও প্রভাব ফেলে। নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সঠিক ডায়েট মেনে চলা এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসা ব্যবহার করে এই রোগটির বিরুদ্ধেই ব্যবস্থাপনা সহজতর করা যেতে পারে। যেমন প্রোটিন যুক্ত খাবার খানার অভাব থেকে এক ধরনের ত্বক সমস্যা হতে পারে তাই খাবারের মেনুতে প্রোটিনসহ অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার যোগ করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ  ওভুলেশন কি? জানুন বিস্তারিত তথ্য

আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার

সোরিয়াসিস থেকে মুক্তি পেতে প্রাকৃতিক পদার্থগুলি ব্যবহার করা অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। আপেল সিডার ভিনেগার অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং এর বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এটি ত্বকের প্রদাহ ও চুলকানি কমাতে বড় ভূমিকা পালন করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপেল সিডার ভিনেগারের অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য ত্বকে রক্ষা করতে সহায়ক।

আপেল সিডার ভিনেগারের স্বাস্থ্য উপকারিতা

  • শরীরের রক্তচাপ হ্রাস করা এবং হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নত করা
  • ওজন কমাতে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক
  • রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী
  • অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে সংক্রমণ প্রতিরোধ
  • পিএইচ মাত্রা ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে এবং ব্রণ প্রতিকার করতে সহায়ক
  • যৌথ ব্যথা হ্রাস করতে অন্তি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাগুণ
  • লিভার ডিটক্সিফিকেশনে সহায়ক
  • পাচনতন্ত্রে ভাল ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি প্রমোট করতে সহায়ক

ব্যবহারের নিয়মাবলি

আপেল সিডার ভিনেগার সোরিয়াসিস এ ব্যবহারের কয়েকটি পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:

  1. আপেল সিডার ভিনেগারকে পানির সাথে মিশ্রিত করে স্নানের জল হিসেবে ব্যবহার করুন। এটি ত্বকের প্রদাহ ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।
  2. আপেল সিডার ভিনেগারের ১ চামচকে ১ গ্লাস পানির সাথে মিশ্রিত করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। এটি শরীরের ভিতর থেকে রক্ত পরিশোধন করতে সাহায্য করে।
  3. আপেল সিডার ভিনেগারের উপাদান হিসাবে তৈরি লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
  4. ত্বকের উপরে প্রয়োগ করার আগে, একবার প্যাচ টেস্ট করে নিন।

অতিরিক্ত ভিনেগার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং যেকোনো ভিন্ন লক্ষণ দৃষ্টিগোচর হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। নিয়ম মেনে আপেল সিডার ভিনেগার সোরিয়াসিস এর উপশমে সহায়ক হতে পারে।

সোরিয়াসিসে ডেড সি বা ইপসম লবণ

সোরিয়াসিস নিরাময়ে প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে ডেড সি বা ইপসম লবণ ব্যবহার জনপ্রিয়। এই লবণের গুণাগুণ ত্বকের শুষ্কতা এবং প্রদাহ কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী।

লবণের উপকারিতা

ডেড সি লবণে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ, যা ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ইপসম লবণ সোরিয়াসিস আক্রান্ত ত্বক শান্ত করতে কার্যকর। এ লবণ দেহের অতিরিক্ত শুষ্কতা দূর করে, যার ফলে ত্বক নির্মল ও মসৃণ থাকে।

গরম পানির সঙ্গে ব্যবহার

ডেড সি অথবা ইপসম লবণ গরম পানির সঙ্গে মেশালে ত্বকের আরাম প্রদান করে। এই ধরনের স্নান ত্বকের অতিরিক্ত আঁশ উঠা ও শুষ্কতা কমিয়ে আনে। নিয়মিত গরম পানিতে ডেড সি লবণ ব্যবহার করলে ত্বকের অন্তর্ভেদ ক্ষীণ হয় এবং প্রদাহ কমে যায়।

ময়েশ্চারাইজারের প্রয়োজনীয়তা

লবণযুক্ত স্নানের পর ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই স্নানের পর ত্বক মসৃণ রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন। ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগালে তা লবণের শুষ্কতাগুলো প্রতিরোধ করে এবং ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।

হলুদের প্রভাব

হলুদ দীর্ঘকাল ধরে তার অ্যান্টি-ইনফ্লেম্যাটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলির জন্য পরিচিত। বিশেষ করে সোরিয়াসিসে হলুদ ব্যবহারের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য উপকার পাওয়া যেতে পারে। হলুদের কুরকুমিন যৌগ প্রদাহ কমাতে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক।

হলুর উপকারিতা

হলুদ, বিশেষত সোরিয়াসিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিবেচ্য। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেম্যাটরি গুণাবলি প্রদাহ প্রশমিত করে এবং ত্বকের পুনর্নির্মাণে সাহায্য করে। সোরিয়াসিসে আক্রান্তদের মধ্যে নিয়মিত হলুদ ব্যবহার প্রদাহ হ্রাস ও লক্ষণগুলির উন্নতিতে সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে।

খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার উপায়

খাদ্য তালিকায় হলুদ অন্তর্ভুক্ত করার সহজ কিছু উপায় হলো:

  • হলুদ দুধ: প্রতিদিন এক গ্লাস দুধে সামান্য হলুদ মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।
  • হলুদ চা: চায়ের পানীয়তে কিছু হলুদ মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।
  • কারি পদ: প্রতিদিনের খাবারে হলুদ মিশিয়ে রান্না করা, যেমন সবজি বা মাংসের কারি।
আরও পড়ুনঃ  কিভাবে পোড়া নিরাময় করবেন: সহজ উপায়

সোরিয়াসিসে হলুদ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদাহ ও ত্বকের সমস্যা কমে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে হলুদকে খাবারের সাথে যোগ করে নিয়মিত গ্রহণ করা হলে সোরিয়াসিসে অভূতপূর্ব পরিবর্তন লক্ষ করা যেতে পারে।

চা গাছের তেলের ব্যবহার

সোরিয়াসিসের চিকিৎসায় প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে চা গাছের তেল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই তেলের অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেম্যাটরি গুণাবলী সোরিয়াসিসের উপশমে কার্যকর বলে প্রমাণিত। চা গাছের তেল সোরিয়াসিস কাটাতে যোগ্যতা রাখে।

প্রতিদিন নিয়মিতভাবে চা গাছের তেলের চিকিৎসা করলে ত্বকের প্রদাহ কমে আসে। এটি সরাসরি ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে প্রয়োগ করা যেতে পারে অথবা ক্যারিয়ার তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। জনসাধারণের মধ্যে চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, চা গাছের তেল সোরিয়াসিস ব্যবহারে বেশিরভাগ ব্যবহারকারী সন্তুষ্ট।

তেলের ব্যবহারকারী এবং বিজ্ঞানীদের মতে, চা গাছের তেলের অ্যান্টিসেপ্টিক ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাবলী ত্বকের ক্ষত সারাতে সহায়তা করে এবং নতুন ক্ষত সৃষ্টিতে বাধা দেয়। ফলে ত্বক আরও সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর থাকে। একই সঙ্গে, অন্যান্য সোরিয়াসিস ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি এই প্রাকৃতিক উপাদানটি সম্পূর্ণ করতে পারে চমৎকার সমাধান হিসেবে।

FAQ

সোরিয়াসিস কী এবং এর লক্ষণ কী কী?

সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘমেয়াদি চর্মরোগ, যা মানুষের ত্বকে লাল লাল দানা এবং আঁশের মতন সাদা আবরণের সৃষ্টি করে। এ রোগের প্রদাহ এবং জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয় এবং চুলকানি হলে রক্তপাতও ঘটতে পারে। সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলো হলো ত্বকে লাল প্যাচ, শুষ্ক ত্বক যা খসখসে এবং ছাল ওঠা।

সোরিয়াসিসের সাধারণ লক্ষণসমূহ কী?

সোরিয়াসিসের সাধারণ লক্ষণসমূহ হল ত্বকে লাল প্যাচ, শুষ্ক এবং খসখসে ত্বক, এবং ত্বকের ছাল ওঠা। এটি প্রদাহ এবং চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে যা কখনও কখনও রক্তপাতের কারণ হয়।

সোরিয়াসিস কিভাবে শনাক্ত করা যায়?

সোরিয়াসিস শনাক্ত করার জন্য প্রধানত ত্বকের অবস্থা এবং ইতিহাস বিবেচনা করা হয়। ডার্মাটোলজিস্ট বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ত্বকের বায়োপসি করে নিশ্চিত হতে পারেন।

সোরিয়াসিস কেন হয়?

সোরিয়াসিস সাধারণত বংশগত হয়ে থাকে এবং এর প্রকোপ অটোইমিউন প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে বাড়ে। পরিবেশগত ফ্যাক্টর যার মধ্যে ব্যাকটেরিয়াল, ভাইরাস এবং ছত্রাকজনিত ইনফেকশন সোরিয়াসিসের উপসর্গের জন্য দায়ী।

কীভাবে সোরিয়াসিস চিরতরে সারানো যায়?

সোরিয়াসিস চিরতরে নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয় যা প্রদাহ ও ত্বকের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এর মধ্যে মেডিকেশন, থেরাপি এবং লাইফস্টাইল পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সোরিয়াসিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা কীভাবে করা যায়?

সোরিয়াসিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসায় মূলত বিভিন্ন ধরনের হারবাল পণ্য, আয়ুর্বেদিক উপাদান এবং বিশেষ ডায়েট প্রয়োগ করা হয়।

আপেল সিডার ভিনেগার কীভাবে সোরিয়াসিসের উপকারে আসে?

আপেল সিডার ভিনেগারের অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য ত্বকের প্রদাহ ও চুলকানি কমাতে সহায়ক। এটি ত্বকের জন্য ত্রাণ প্রদান করে।

ডেড সি বা ইপসম লবণ সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে কিভাবে সহায়ক?

ইপসম এবং ডেড সি লবণ পানিতে মিশিয়ে গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা এবং আঁশ উঠা কমাতে সাহায্য করে।

হলুদের উপকারিতা কী কী?

হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেম্যাটরি গুণ সোরিয়াসিসের প্রদাহ হ্রাস করে। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় হলুদ অন্তর্ভুক্তি ত্বকের স্বাস্থ্য এবং এর পুনর্গঠনে সাহায্য করে।

চা গাছের তেলের কী ভূমিকা সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে?

চা গাছের তেলের অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেম্যাটরি গুণাবলী সোরিয়াসিসের প্রদাহ এবং সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button