আহসান মঞ্জিল

আহসান মঞ্জিল হচ্ছে ঢাকার ঐতিহাসিক এক স্থাপনা যা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। ২৩°৪২′৩০.৯৫″ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৪′২১.৮১″ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত এই প্রাসাদটি একটি পরিচিত নবাব প্রাসাদ এবং বর্তমানে জাতীয় জাদুঘর হিসাবে সংরক্ষিত হয়েছে। নির্মাণকাজ ১৮৫৯ সালে শুরু হয়ে ১৮৭২ সালে সম্পন্ন হয়।

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে পরিচিত এই প্রাসাদটি প্রথমে নবাবদের আবাসস্থল এবং জমিদারীর কাচারি হিসেবে ব্যবহৃত হত। পরবর্তীতে এটি জাতীয় জাদুঘরে রূপান্তরিত হয় এবং প্রতিদিন বহু পর্যটক এখানে ঘুরে দেখতে আসে। ১৯৮৬ সালে “আহসান মঞ্জিল পুনর্নির্মাণ, উন্নয়ন ও জাদুঘর স্থাপন” প্রকল্প শুরু হয় এবং ১৯৯২ সালে সম্পন্ন হয়।

আহসান মঞ্জিলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

ঢাকার বিখ্যাত আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস ব্যাপক এবং আকর্ষণীয়। এই প্রাসাদের নির্মাণকাল শুরু হয়েছিল ১৮৫৯ সালে এবং সম্পন্ন হয় ১৮৭২ সালে। ১২৫.৪ মিটার লম্বা এবং ২৮.৭৫ মিটার চওড়া এই প্রাসাদ, যা পরবর্তীতে একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়। আহসান মঞ্জিলের একটি অন্যতম বড় আকর্ষণ হলো এর অনন্য গম্বুজ যা মাটির থেকে ২৭.১৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।

প্রথম নির্মাণ

প্রাসাদের নির্মাণকাল ১৮৫৯ সালে শুরু হয় এবং ১৮৭২ সালে শেষ হয়। নওয়াব আবদুল গনি এই প্রাসাদের নির্মাণ শুরু করেছিলেন। ১৮৮৮ সালে একটি প্রবল ভূমিকম্পের কারণে আহসান মঞ্জিল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে প্রাসাদের পশ্চিম অংশটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে নতুন করে নির্মাণ করা হয়।

নামকরণ

নওয়াব আবদুল গনি প্রাসাদটির নামকরণ করেছিলেন তার প্রিয় পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামে, যিনি পরবর্তীতে নওয়াব হয়েছিলেন। এই নামকরণের ইতিহাস আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রাসাদের ইতিহাস শুধু নির্মাণকাল ও নামকরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর অনন্য স্থাপত্যশৈলী এবং গম্বুজ ও তোরণের উচ্চতাও উল্লেখযোগ্য। আরও জানা যাবে কিভাবে এই প্রাসাদটি একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান থেকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়েছে।

নবাবদের আবাসস্থল হিসেবে আহসান মঞ্জিল

নবাবদের আতিথেয়তা এবং ঐশ্বর্যের প্রতীক আহসান মঞ্জিল, ঢাকার ঐতিহাসিক আবাসস্থল হিসেবে সুপরিচিত। এই প্রাসাদটি সম্পূর্ণ হয়েছিল ১৮৭২ সালে এবং এর ইন্দো-সারাসেনিক পুনর্জাগরণ স্থাপত্যশৈলী মুগ্ধ করেছিল সকলকে। ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাকে পরিণত করার জন্য ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল, যা এই ভাস্কর্যের গুরুত্বকে ফুটিয়ে তোলে। আহসান মঞ্জিলের গম্বুজটি এক মিটার উঁচু এবং পুরো প্রাঙ্গণটি ৪০৭৭টি নিদর্শন সহ মোট ৩১টি কক্ষের প্রদর্শনীতে পরিপূর্ণ।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন

নওয়াব আবদুল গনি

নওয়াব আবদুল গনি ছিলেন আহসান মঞ্জিলের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর দক্ষ নেতৃত্বে ঢাকার নবাব পরিবারটি উল্লেখযোগ্য প্রশংসা পেয়েছিল। দারিদ্র্য থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে শহরটা মধ্যযুগের ঢাকাকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে জোরালো প্রভাব ফেলেছিল। তাঁর সাপেক্ষে, এই ঐতিহাসিক আবাসস্থল সত্যিকারের অনন্য এবং বংশানুক্রমিক সম্পত্তি দিয়ে পরিপূর্ণ। আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস গভীরভাবে বোঝার জন্য নবাব আবদুল গনির গুরুত্ব অপরিসীম।

খাজা আহসানুল্লাহ

নওয়াব আবদুল গনির প্রিয় পুত্র হিসেবে খাজা আহসানুল্লাহ ছিলেন পরিবারের আরও এক গর্বিত সদস্য। আহসান মঞ্জিলের নামটি আসলে তাঁর নামেই রাখা হয়েছে। সমাজের প্রতি তার অবদান এবং অসাধারণ নেতৃত্ব দক্ষতার কারণে, তাঁর সময়কালে প্রাসাদটি একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল। এভাবেই খাজা আহসানুল্লাহ ঢাকায় একটি ঐতিহাসিক আবাসস্থল গড়ে তুলেছিলেন, যা আজকের দিনে একটি মর্যাদাপূর্ণ পর্যটক আকর্ষণ হিসেবে পরিচিত।

১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের প্রত্যাবর্তন

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষে নির্মাণকৃত আহসান মঞ্জিল ঢাকার পুরাতন শহরের একটি ঐতিহাসিক দালান। এটি ছিল একটি প্রধান কেন্দ্র যখন ১৯০৬ সালে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক বৈঠকটি এখানে সম্পন্ন হয়। ১৯০৬ মুসলিম লীগ গঠনের সিদ্ধান্ত, একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, এই প্রাসাদেই গৃহীত হয়।

১৮৫৯ সালে নির্মাণকাজ শুরু করে ১৮৭২ সালে সমাপ্ত হওয়া আহসান মঞ্জিলের স্থানে ২৩°৪২′৩০.৯৫″ উত্তরে এবং ৯০°২৪′২১.৮১″ পূর্বে অবস্থিত, এই প্রাসাদটি ব্যাপক ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। ৩০ লক্ষ বর্গফুট জমির ওপর নির্মিত এই প্রাসাদটি মোট ৩১টি কক্ষ নিয়ে বিস্তৃত, যেখানে মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠার সময়কার প্রদর্শনী উপস্থাপন করা হয়।

  • জমি: ৩০ লক্ষ বর্গফুট
  • প্রতিষ্ঠাবর্ষ: ১৮৫৯-১৮৭২
  • মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার বছর: ১৯০৬
  • কক্ষ সংখ্যা: ৩১

প্রাঙ্গণের আভিজাত্য আর ইন্দো-সারাসেনিক স্থাপত্যশৈলী এখানে মুসলিম লীগের প্রথম বৈঠককে একটি অসামান্য ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের নেপথ্যে থাকা এই আহসান মঞ্জিল আজও বাঙালি জাতির গর্ব হিসাবে পরিচিত।

আহসান মঞ্জিলের স্থাপত্যশৈলী

আহসান মঞ্জিলের স্থাপত্যশৈলী বাংলার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ১৮৫৯ সালে শুরু হওয়া আহসান মঞ্জিল নির্মাণকাজ ১৮৭২ সালে শেষ হয়। এর স্থাপত্যশৈলী মুঘল ও ইউরোপীয় শৈলীর মিশ্রণে গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে, ইন্দো-সারাসেনিক স্থাপত্যের পুনর্জাগরণ এর মূল বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রতীয়মান।

ইন্দো-সারাসেনিক পুনর্জাগরণ স্থাপত্য

আহসান মঞ্জিলের ইন্দো-সারাসেনিক স্থাপত্যকলা ১৯শ শতাব্দীতে একটি নতুন রূপ পায়। মঞ্জিলের উঁচু ছাদ এবং আড়ম্বরপূর্ণ প্রাঙ্গণ অনন্য নকশার উদাহরণ। এর নির্মাণে ১৩ বছর সময় লেগেছিল এবং মুঘল ও ভিক্টোরিয়ান স্থাপত্যের স্নিগ্ধ মিশ্রণ দেখা যায়। এই ইন্দো-সারাসেনিক পুনর্জাগরণ থিমটি স্থানীয় রীতিনীতি ও পশ্চিমা প্রভাবের সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিফলন দেখা যায়।

গম্বুজ ও তোরণ

আহসান মঞ্জিলের অন্যতম আকর্ষণ হল এর গম্বুজ এবং রাজকীয় তোরণ। মূল ভবনের উপরে থাকা বড় গম্বুজটি পাহাড়ের মতো উঁচু হয়ে দৃষ্টিনন্দন রূপ তৈরি করে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে থাকা তোরণ এ স্থাপত্যশৈলীতে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে। গম্বুজ এবং তোরণ উভয়ই যথাযথভাবে ইন্দো-সারাসেনিক স্থাপত্যের উদাহরণ তুলে ধরে। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শক এই স্থাপত্যকলার অপূর্ব সৌন্দর্য দেখতে আসেন।

আরও পড়ুনঃ  উত্তরা গণভবন

আহসান মঞ্জিলের সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী ৪ হাজার ৭৭টিরও বেশি, এবং দর্শনার্থীদের জন্য টিকেট মূল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা, ১২ বছরের নিচে বাচ্চাদের জন্য ১০ টাকা, এবং সার্কভূক্ত বিদেশের নাগরিকদের জন্য ৫০০ টাকা। আপনি অনলাইনে টিকেট করতে পারেন এই ওয়েবসাইট থেকে।

আহসান মঞ্জিল: ভূমিকম্প ও পুনর্নির্মাণ

আহসান মঞ্জিলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১৮৫৯ সালে এবং ১৮৭২ সালে এটি সম্পন্ন হয়। তবে ১৮৮৮ এবং ১৮৯৭ সালে দুটি প্রবল ভূমিকম্পের কারণে ঐতিহাসিক ক্ষতি ঘটে। এই ভূমিকম্পের ফলে আহসান মঞ্জিল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দেয়। পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং এতে ভবনের স্থাপত্যে কিছু পরিবর্তন আনা হয়।

১৮৮৮ সালের ভূমিকম্পে মূল ভবনে বড় ধরনের ক্ষতি সাধিত হয় যা পরবর্তীকালে গোবিন্দ চন্দ্র রায়-এর তত্ত্বাবধানে পুনর্নির্মাণ করা হয়। পুনর্নির্মাণের সময় ভবনের উপরে একটি উচ্চ গম্বুজ যোগ করা হয় যা আহসান মঞ্জিলের স্থাপত্যশৈলীতে ভিন্ন মাত্রা প্রদান করে। গম্বুজটির উচ্চতা মাটির থেকে ২৭.১৩ মিটার পর্যন্ত পৌঁছায়, যা এক ধরনের পদ্মফুল আকৃতিতে ডিজাইন করা হয়েছে।

পুনর্নির্মাণের পর, আহসান মঞ্জিলের আকৃতি ও আকার কিছুটা পরিবর্তিত হয়। দ্বিতল বিশিষ্ট এই প্রাসাদের প্রধান ভবনের দৈর্ঘ্য ১২৫.৪ মিটার এবং প্রস্থ ২৮.৭৫ মিটার। ভবনের মেজানি থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ৫ মিটার এবং তলদেশের উচ্চতা ৫.৮ মিটার।

ঐতিহাসিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটির স্থাপত্যিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে, ১৯৮৬ সালে “আহসান মঞ্জিলের সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন ও জাদুঘরে রূপান্তর” প্রকল্পটি শুরু হয়। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল ঐতিহাসিক স্থাপনাটির সংরক্ষণ ও পুনঃনির্মাণ। ফলে, আহসান মঞ্জিল আজও তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও স্থাপত্যিক সৌন্দর্য ধরে রেখেছে।

ভূমিকম্পের পর পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস নতুন করে লেখা হয়, এবং এটি এখন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত।

আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে রূপান্তর

আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে রূপান্তরিত হওয়ার পর এটি দেশের অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক সংগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এখানে নবাবদের জীবনযাত্রা, শিল্পকলা ও ব্যবহারিক প্রসাধন সংরক্ষণের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। ১৯৮৫ সালে জাদুঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং ১৯৯২ সালে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

পরিকল্পনা ও কার্যক্রম

আহসান মঞ্জিল জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা এবং কার্যক্রমগুলো ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। ১৯৮৬ সালে ‘আহসান মঞ্জিল পুনর্গঠন, সৌন্দর্যবর্ধন ও জাদুঘরে রূপান্তর’ প্রকল্প শুরু হয় যা অনেক ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্য সংরক্ষণ কার্যক্রমের সাক্ষ্য বহন করে। পুনর্নির্মাণের সময়, প্রধান প্রাসাদটি বিভিন্ন প্রদর্শনী গ্যালারিতে রূপান্তরিত করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে ২৩টি রুম।

জাদুঘরের সংগ্রহ

আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে বর্তমানে ৪৭৭৭টি মূল্যবান ঐতিহাসিক সংগ্রহ রয়েছে। এটি ভীতরে রয়েছে ৩১টি রুম, যার মধ্যে ২৩টি প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত। এই সংগ্রহগুলির মধ্যে নবাবদের ব্যক্তিগত বস্তু, শৈল্পিক প্রদর্শনী, এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক সামগ্রী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ৯টি কক্ষ বিশেষভাবে প্রসাধন ও ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর জন্য সংরক্ষিত।

আরও পড়ুনঃ  কর্ণফুলী টানেল বিস্তারিত তথ্য

প্রাসাদের অভ্যন্তর ও বাহ্যিক অবকাঠামো

আহসান মঞ্জিলের প্রাসাদের অভ্যন্তর এবং বাহ্যিক অবকাঠামো দেখতে ভীষণ চমৎকার। প্রাসাদের আর্কিটেকচার নান্দনিক সৌন্দর্যের একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত। মূল ভবনটির নিচ এবং উপরের তলায় মোট ২৪টি রুম রয়েছে।

প্রধান ভবন ও অন্দরমহল

প্রাসাদের মূল ভবনে ১০টি রুম রয়েছে এবং এটি স্থাপত্য নকশায় ইন্দো-সারাসেনিক পুনর্জাগরণের স্পষ্ট ছাপ ফুটে উঠেছে। অন্দরমহলে নবাবদের ব্যবহৃত বর্ম, ধাতব আসবাবপত্র, ফানুস, ফলপাত্রের মতো নানাবিধ সংগ্রহ রয়েছে যা সেই সময়কার ঐতিহ্য প্রকাশ করে। এছাড়াও, এখানে একটি তাজা হাতির মাথার কঙ্কাল এবং বিশাল বিলিয়ার্ড টেবিল দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

দোতলার বৈঠকখানা ও পাঠাগার

প্রাসাদের দোতলা অংশে একটি বিশাল পাঠাগার এবং একটি বৈঠকখানা স্থান পেয়েছে। এই অংশটি আর্কিটেকচার ডিজাইনে আরও উন্নত এবং বৈঠকখানায় নবাবদের বৈঠকের আয়োজন করত। পাঠাগারটি বেশ বড়, যেখানে অনেক মূল্যবান পুস্তক, ধাতব আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও, এখান থেকে দৃষ্টিনন্দন বাগান এবং ফুল ও ফলের গাছের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন।

আহসান মঞ্জিলের সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ

ঐতিহাসিক স্থাপনা আহসান মঞ্জিলের সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নওয়াব আবদুল গণি ১৮৫৯ সালে এই স্থাপনাটির নির্মাণ শুরু করেন, যা ১৮৭২ সালে সমাপ্ত হয়। ১৮৮৮ সালের ৭ এপ্রিল ধারাবাহিক ভূমিকম্পে আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষতি ঘটে, তবে পরবর্তীতে এর পুনর্নির্মাণের কাজ চালানো হয়। প্রাসাদটি বর্তমানে প্রায় ৪০৭৭টি নিদর্শন সংগ্রহ করেছে, যা জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়েছে।

সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করার জন্য আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের পরিচালনা কর্তৃপক্ষ কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। মোট ৩৫টি গ্যালারি প্রতিষ্ঠিত হবে যাতে ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো সঠিকভাবে প্রদর্শন এবং সংরক্ষণ করা যায়। বর্তমানে এখানে ৫৬ জন কর্মী, ১৬ জন আনসার সদস্য ও ৪ জন পুলিশ কর্মী নিয়োজিত আছেন।

সবকিছুই পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি, এখানকার দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়ে গড়ে ৬-৭ হাজারে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের সংখ্যাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। ভবিষ্যতে এখানে একটি আন্তর্জাতিক ফ্যাশন শো আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে যা আরও বেশি বিদেশি পর্যটককে আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পরিবেশ উন্নয়ন এবং সম্পৃক্ত পথের উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছ, যাতে গুলিস্তান এলাকা থেকে আহসান মঞ্জিলে যাতায়াতের পথ সহজ করা যায়। পর্যটকদের অভিজ্ঞতা উন্নত করতে এবং স্থাপনার আশেপাশের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে আরও কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এভাবে, ঐতিহাসিক স্থাপনা আহসান মঞ্জিলের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ানো এবং কর্ণেই রাখা হচ্ছে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button