নুসরাত ইমরোজ তিশা

নুসরাত ইমরোজ তিশা, প্রধানত তিশা নামে পরিচিত, বাংলাদেশী একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী, মডেল এবং প্রযোজক। রাজশাহী, বাংলাদেশে ১৯৮৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম। তিশা তার অভিনয় জীবনের শুরুটা টেলিভিশন নাটক দিয়ে করেন। তিশা ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ে দক্ষতা দেখিয়েছেন, যার জন্য তিনি আজ বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত।

তিশার জীবনী অত্যন্ত সমৃদ্ধ, যেখানে তিনি প্রায় এক শতাধিক টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন এবং মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিশার কেরিয়ার ১৯৯৫ সালে শুরু হয়, এবং এরপর থেকে তিনি মডেলিং, চলচ্চিত্র ও প্রযোজনা জগতেও নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন। তাঁর শতাধিক নাটকে অভিনয় এবং চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তিশা বহু পরিচিত ও সম্মানিত হয়েছে।

প্রাথমিক জীবন

নুসরাত ইমরোজ তিশা বাংলাদেশের বিনোদন জগতের অন্যতম প্রতিভাবান নাম। তিশার শৈশব থেকেই তিনি বিভিন্ন শিল্পকর্মে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন।

জন্ম ও পরিবার

তিশা ১৯৮৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিশার পরিবারে রয়েছে শিল্পীসুলভ পরিবেশ, যা তাকে শৈশবকালীন শিল্পকর্মে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে। তিনি ছোটবেলায়ই পরিবার থেকে শিল্পের প্রাথমিক শিক্ষা পেয়েছেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অভিনয় করেছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা ও গান

তিশা প্রাথমিক শিক্ষা জীবনেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে খ্যাতি অর্জন করেন। তিশার শৈশব থেকেই গানে তিশার আগ্রহ ছিল প্রবল। পাঁচ বছর বয়সে তিনি গানের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন এবং ১৯৯৫ সালে NTV এর প্রতিভা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। গানে তিশার আগ্রহ তাকে পরবর্তীতে আরও বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত করে।

আরও পড়ুনঃ  মোনালি ঠাকুর

কেরিয়ারের শুরু

নুসরাত ইমরোজ তিশার অভিনয় শুরু হয়েছিল টেলিভিশন নাটকের মাধ্যমে। তিনি মূলত ‘সাত প্রহরের কাব্য’ নাটকের মাধ্যমে প্রথমবার পর্দায় অভিষেক করেন। এই নাটকের মাধ্যমে তিনি দ্রুত সবার নজরে চলে আসেন এবং অভিনয় জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন।

টেলিভিশন নাটকে অভিষেক

তিশার অভিনয় শুরু কেবল একটি নাটকের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। পরবর্তীতে তিনি একের পর এক জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেন এবং প্রশংসিত হন। এর মধ্যে ‘৪২০’ (২০০৯), ‘বৃষ্টিতে তোমাকে দিলাম’ (২০১০), ‘লং মার্চ’ (২০১২), এবং ‘ইফ আই ডোন্ট লাইক ইউ’ (২০১৩) অন্তর্ভুক্ত।

মডেলিংয়ের যাত্রা

তিশার মডেলিং ক্যারিয়ারও সমানভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি বিভিন্ন বিখ্যাত ব্র্যান্ডের জন্য মডেলিং করেছেন। এর মধ্যে মেরিল, কোকা-কোলা, সিটিসেল, এবং কেয়া কসমেটিক্সের মতো ব্র্যান্ডের নাম রয়েছে। নিজের অভিনয়ের পাশাপাশি মডেলিংয়ের মাধ্যমে তিশা নিজের প্রতিভা এবং দক্ষতাকে সকলের সামনে তুলে ধরেন।

টেলিভিশন নাটক

নুসরাত ইমরোজ তিশার অভিনয় প্রতিভা টেলিভিশন নাটকে বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে। তাঁর প্রথম নাটক ‘সাত প্রহরের কাব্য’ দিয়ে তিনি দর্শকদের নজর ধরে রাখেন। এ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তিশা প্রমাণ করেন যে তিনি একজন প্রাকৃত অভিনয়শিল্পী।

প্রথম নাটক: সাত প্রহরের কাব্য

‘সাত প্রহরের কাব্য’ তিশা অভিনীত প্রথম নাটক হিসেবে উল্লেখযোগ্য। এ নাটকটি শুধুমাত্র দর্শকদের মননকেই নবীনভাবে স্পর্শ করেনি, বরং তিশাকে শক্ত জমিতে দাঁড় করিয়েছে।

খ্যাতির প্রথম ধাপ

তিশার নাটক গুলোতে তাঁর অভিনয়ের দক্ষতা এবং পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে তিনি স্বল্প সময়েই প্রচুর সমর্থন ও খ্যাতি অর্জন করেন। তিশার খ্যাতির প্রথম ধাপ হিসেবে ‘সাত প্রহরের কাব্য’ তাঁর ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হয়ে আছে।

মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার

তিশার পুরস্কার সংগ্রহে অন্যতম প্রধান অর্জন ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’। তিনি এই পুরস্কারটি তাঁর উজ্জ্বল ও সফল ক্যারিয়ারে একাধিকবার অর্জন করেছেন। তিশার নাটক গুলোতে ধারাবাহিক সাফল্যের জন্যই তিনি এ ধরনের স্বীকৃতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  সালমান শাহ

চলচ্চিত্রে প্রবেশ

তিশার চলচ্চিত্র কেরিয়ার শুরু হয়েছিল অনন্য চলচ্চিত্র ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ দিয়ে। এই চলচ্চিত্রটিতে তার অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা প্রকাশ পায়, যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে তাকে পরিচিত মুখে পরিণত করে।

‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ এর প্রাথমিক সাফল্যের পর তিশার চলচ্চিত্র কেরিয়ার আরো উজ্জ্বল হয়। এর পর তিনি ‘টেলিভিশন’, ‘অস্তিত্ব’, ‘ডুব’, এবং ‘হালদা’ সহ অনেক উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। প্রতিটি চরিত্রে তার নিখুঁত অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে।

তিশার চলচ্চিত্র কেরিয়ার নতুন মাত্রা পায় ২০১৬ সালে ‘অস্তিত্ব’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এই চলচ্চিত্রটির জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে, ২০১৭ সালে ‘তিসার ডুব’ চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পান তিনি।

এছাড়াও তিশা ‘ফাগুন হাওয়ায়’, ‘হালদা’, এবং ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন, যেখানে তার প্রতিটি চরিত্র অনন্য রূপে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার ভূমিকা ও অভিনয়শৈলী উল্লেখযোগ্য এবং অনুপ্রেরণামূলক। এভাবেই তিশার করিয়ার দিনে দিনে আরো সফল ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে।

প্রধান চলচ্চিত্র

তিশার চলচ্চিত্র জীবনচক্রে আলোচিত কিছু চলচ্চিত্র রয়েছে, যা তার প্রতিভাকে মেলে ধরেছে এবং তাকে বিশিষ্টতা এনে দিয়েছে। নিচে তার প্রধান চলচ্চিত্রগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:

থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালনায় নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি তিশার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তিশার চলচ্চিত্র হিসাবে এটি তাকে সমালোচকদের প্রশংসা এনে দেয় এবং দেশব্যাপী আলোচিত হয়।

টেলিভিশন

তিশার চলচ্চিত্র তালিকায় এই চলচ্চিত্রটি অন্যতম প্রধান একটি। পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর এই চলচ্চিত্রে তিশার অভিনয় সকলের মন জয় করে নেয় এবং তার ক্যারিয়ারে একটি নতুন মাত্রা যোগ করে।

অস্তিত্ব

অনন্য মোহাম্মদের পরিচালনা করা এই চলচ্চিত্রটিতে তিশার অসাধারণ অভিনয় তাকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি সমসাময়িক সামাজিক ইস্যুগুলিকে তুলে ধরেন যা দর্শকদের আকৃষ্ট করে।

আরও পড়ুনঃ  বিদ্যা সিনহা সাহা মীম

ডুব

তিশার চলচ্চিত্র জীবনের অন্যতম একটি চলচ্চিত্র হল ‘ডুব’, এটি পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর আরেকটি সফল প্রয়াস। ইরফান খান এবং তিশার অভিনয় দর্শকদের মন কেড়ে নেয়, এবং এই চলচ্চিত্রটি দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়।

হালদা

তারেক মাসুদের পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটিতে তিশার চলচ্চিত্র হিসেবে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। হালদা নদী ও এর মানুষের জীবনের গল্পর মর্মস্পর্শী উপস্থাপনায় তিশার অভিনয় ফিল্ম প্রেমীদের হৃদয় স্পর্শ করে।

এই চলচ্চিত্রগুলোতে তিশার অভিনয় শুধু তাকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায়নি, বরং তার ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করেছে এবং তাকে বাংলার অন্যতম প্রখ্যাত অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

নুসরাত ইমরোজ তিশার জনপ্রিয়তা

নুসরাত ইমরোজ তিশা বাংলাদেশের বিনোদন জগতে একটি বহুল পরিচিত ও জনপ্রিয় নাম। তার অভিনয় প্রতিভার জন্য তিনি বহু পুরস্কার পেয়েছেন। তিশা ২০১৬ সালে “অস্তিত্ব” চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর খেতাব অর্জন করেন। এছাড়া, ২০১৭ সালে “ঢাকা অ্যাটাক” চলচ্চিত্রের জন্যও তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

তিশা তার ক্যারিয়ারে ১০টি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার জয় করেছেন, যা তার অভিনয়ের দক্ষতা ও জনপ্রিয়তার সাক্ষ্য দেয়। তার অনেক উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে “থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার” (২০০৯), “টেলিভিশন” (২০১২), এবং “ব্যাচেলর” (২০১৬)।

ব্যক্তিজীবনে তিশা ২০১০ সালে পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে, যার নাম ইলা ফারুকী। ২০১৭ সালে তিশা “ডুব” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জয় করেন। তার প্রতিভা এবং বিষয়ে গভীর এখলাস তাকে বিনোদন জগতে অপ্রতিরোধ্য করেছে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button