রুনা লায়লা: সুরের রানী এবং কিংবদন্তি শিল্পী

রুনা লায়লা, বাংলা গানের বিশ্বনন্দিত কিংবদন্তি, তার সঙ্গীত জীবনে অসামান্য কীর্তির সাক্ষর রেখে গেছেন। উর্দু, হিন্দি এবং বাংলা ভাষায় তার অসাধারণ কণ্ঠস্বর সর্বদা শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। সঙ্গীত জীবনের প্রতিটি ধাপে তিনি আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। আধুনিক থেকে লোকগীতি, রোমান্টিক থেকে ডিস্কো—সকল ক্ষেত্রেই তার গায়কির বৈচিত্র্য লক্ষণীয়।

লাহোরে ১৯৬৪ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে রুনা লায়লা প্রথম প্লেব্যাক সঙ্গীত শুরু করেন। সেই থেকে শুরু হওয়া তার সঙ্গীত যাত্রা তাকে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের বহু চলচ্চিত্রে সাফল্য এনে দিয়েছে। তিনি প্রায় ১০,০০০ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এবং বিভিন্ন সুরের ক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। রুনা লায়লা শুধুমাত্র সুরেরই রানী নন, তিনি বিভিন্ন দেশে সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবেও ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন।

Contents show

রুনা লায়লার শৈশব এবং প্রাথমিক জীবন

রুনা লায়লা, সুরের রানী এবং কিংবদন্তি শিল্পী হিসেবে পরিচিত, ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার চাকুরির সূত্র ধরে তাদের পরিবার পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যায়। এর ফলে, রুনা লায়লার শৈশব অনেকাংশেই পশ্চিম পাকিস্তানে কেটেছে।

জন্ম এবং পরিবার

রুনা লায়লার জন্ম সিলেটের একটি সাংস্কৃতিক পরিবারে। তার পিতা পশ্চিম পাকিস্তানে চাকুরি করতেন, যা তাদের পুরো পরিবারের স্থানান্তরের কারণ হয়। পরিবারের সাংস্কৃতিক পরিবেশই রুনা লায়লার প্রাথমিক জীবনে সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ জাগে।

শৈশবের দিনগুলি

রুনা লায়লার শৈশব কেটেছে পশ্চিম পাকিস্তানে, যেখানে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তার প্রাথমিক জীবন সঙ্গীত শিক্ষার মধ্যেও পূর্ণ ছিল। ছোটবেলায়ই তিনি সঙ্গীতের প্রতি গভীর আগ্রহ প্রদর্শন করেন এবং এটি তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। তার প্রথম সঙ্গীত শিক্ষা এবং স্টেজ পারফরমেন্স পশ্চিম পাকিস্তানেই শুরু হয়।

প্রথম প্লেব্যাক এবং সঙ্গীত যাত্রার শুরু

রুনা লায়লার অসামান্য সঙ্গীত যাত্রার শুরুটা ছিল সত্যিই উল্লেখযোগ্য। শিশু বয়সেই ‘প্রথম প্লেব্যাক’ এর মাধ্যমে সঙ্গীত জগতে পদার্পণ করেছিলেন তিনি। তার জীবনের এই পর্বটি তার ভবিষ্যতের উজ্জ্বলতার বীজ বপন করেছিল।

লাহোরের প্রথম প্লেব্যাক

১৯৬৪ সালে, মাত্র ১২ বছর বয়সে রুনা লায়লা লাহোরে ‘গুড়িয়াছি মুন্নি মেরি’ গানটি গেয়ে তার ‘প্রথম প্লেব্যাক’ শুরু করেন। এটি ছিল যৌথ প্রযোজিত ‘জুগনু’ সিনেমার একটি অত্যন্ত প্রিয় গান। এই সাফল্যের পর তিনি পাকিস্তানের সঙ্গীত জগতে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

বাংলা চলচ্চিত্রে অভিষেক

১৯৭০ সালে রুনা লায়লা ঢাকাই চলচ্চিত্রে ‘স্বরলিপি’ সিনেমার ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’ গানটি গেয়ে তার অভিষেক ঘটান। এরপর থেকে তিনি ঢাকাই চলচ্চিত্রের জন্য অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দেন। তার এই ‘সঙ্গীত যাত্রা’ বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান।

রুনা লায়লার সুরের যাত্রা লাহোর থেকে শুরু হয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রের পথে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তার সঙ্গীত প্রতিভার আলো শুধুমাত্র পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ  সুরিয়া (অভিনেতা)

PAKISTANI AND INDIAN FILM INDUSTRY আপনার অভিজ্ঞতা

রুনা লায়লার সংগীত যাত্রা উদ্ভিদ ছড়িয়ে পড়েছে পাকিস্তান এবং ভারত দুই দেশেই। তার গানের দক্ষতা দু’দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে সমৃদ্ধ করেছে।

পাকিস্তানে সঙ্গীত ক্যারিয়ার

পাকিস্তানি চলচ্চিত্র জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে উঠেছেন রুনা লায়লা। তার অসাধারণ উর্দু গান দেশটির বিভিন্ন চলচ্চিত্রে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। লাহোরে গানের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি ইতিহাস তৈরি করেছেন, এবং তার স্বতন্ত্র স্টাইল আর সুরের জন্য দ্রুতই পরিচিতি পান। ফলে পাকিস্তানি চলচ্চিত্রে তার অবদান বিশেষ ভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকে।

ভারতে সঙ্গীত ক্যারিয়ার

১৯৭৪ সালে রুনা লায়লা মুম্বাইয়ে ‘এক সে বাড়কার এক’ ছবিতে গান গেয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করেন। তার সুরেলা কণ্ঠে হিন্দি গান শুনে মুগ্ধ হয়ে যায় দর্শকরা। ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতারা তার গানের প্রতিভার প্রশংসা করে তাকে একাধিক ছবিতে গান গাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি তার উর্দু এবং হিন্দি ভাষায় গানের পারদর্শিতা দিয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে একটি বিশেষ স্থান দখল করতে সক্ষম হন।

বৈচিত্র্যে পূর্ণ গায়কির স্টাইল

রুনা লায়লা সুরের জগতে এক অনন্য নাম, যার গায়িকি বৈচিত্র্যের জন্য স্বীকৃত। তিনি উর্দু, হিন্দি এবং বাংলা বিভিন্ন ধাঁচের গান পরিবেশন করেছেন। ১৯৬৪ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে লাহোরের জুগনু ছবির জন্য ‘গুড়িয়াছে মুন্নি মেরি’ গানের মাধ্যমে তার প্লেব্যাক যাত্রা শুরু করেন। তার গায়কির স্টাইল এতটাই বৈচিত্র্যময় যে, ফোক, গজল, ডিসকো থেকে শুরু করে নজরুলগীতি পর্যন্ত সব ধরনের গানে তিনি দক্ষতা দেখিয়েছেন।

রুনা লায়লার গানের ধরন অনন্য এবং প্রতিটি গানে তার স্বকীয়তা স্পষ্ট। বিভিন্ন ধরনের গানে তার কণ্ঠের সমৃদ্ধশালী ব্যবহার দর্শকদের মোহিত করে। ১৯৫২ সালে ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তি শিল্পী শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তান এবং ভারতে সমাদৃত। গোল্ডেন ডিস্ক, প্লাটিনাম ডিস্ক-জয়ী বিভিন্ন অ্যালবাম তার কৃতিত্বের সাক্ষর বহন করে।

রুনা লায়লা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতেও একটি অনন্য নাম। ঢাকাই চলচ্চিত্রে তার অভিষেক হয় ‘এক সে বাড়কার এক’ ছবির মাধ্যমে। তার গায়কির বৈচিত্র্যপূর্ণ স্টাইল বাংলা গানের জগতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই বৈচিত্র্যের জন্যই তিনি বিশ্বজুড়ে সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন।

তার বৈচিত্র্যপূর্ণ গায়কি শুধু তার নিজস্বতায় নয়, সমসাময়িক সঙ্গীত জগতের প্রতিটি প্রশংসকের জন্য একটি শিক্ষা লব্ধ করেছে। তার কণ্ঠস্বরের গাম্ভীর্য এবং দক্ষতা অনস্বীকার্য। বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীত, ভাষা এবং দেশ জুড়ে তার সঙ্গীতের বৈচিত্র্যতা তাকে সত্যিকার অর্থে কিংবদন্তি করেছে।

বিশ্ব জুড়ে স্বীকৃতি এবং পুরস্কারসমূহ

রুনা লায়লা একজন কিংবদন্তি শিল্পী, যিনি তার সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উল্লেখযোগ্যভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার বৈচিত্র্যময় সঙ্গীত কেরিয়ার তাকে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত করেছে, যা তার শিল্পের উজ্জ্বলতার প্রমাণ।

গোল্ডেন ডিস্ক এবং প্লাটিনাম ডিস্ক

রুনা লায়লার সঙ্গীত প্রতিভা কেবল বাংলা ভাষাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তার উর্দু এবং হিন্দি ভাষায় সুপার হিট অ্যালবামগুলো তাকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এনে দেয়। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলো অ্যালবামই গোল্ডেন ডিস্ক এবং প্লাটিনাম ডিস্ক অর্জন করেছে, যা তার দক্ষতার প্রমাণ। এই সম্মাননাগুলি তাকে সঙ্গীত জগতে এক অনন্য স্থান দান করেছে।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

রুনা লায়লা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রশংসিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন দেশে শো করেছেন। তার সঙ্গীত পারফরম্যান্স আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে যেমন ভূমিকা রেখেছে, তেমনি তার সুরেলা কণ্ঠ তাকে বিশ্বব্যাপী একটি পরিচিত নাম করে তুলেছে। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সঙ্গীত পুরস্কার অর্জন করেছেন, যা তার প্রতিভার স্বীকৃতির প্রমাণ।

আরও পড়ুনঃ  জেনে নিন বিটিএস জুংকুক সম্পর্কে সবকিছু

Runa Laila কনসার্ট এবং মঞ্চ পরিবেশনায়

রুনা লায়লার কনসার্ট এবং মঞ্চ পরিবেশনাগুলি তার গানের যাদুতে ভক্তদের হৃদয়ে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। তার গানের সুর আর ছন্দে মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতারা আকর্ষিত হয়েছে বছরের পর বছর। Runa Laila কনসার্ট মানেই বিশেষ কিছু, যা শ্রোতাদের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।

রুনা লায়লার মঞ্চ পরিবেশনাগুলির বৈচিত্র্য এবং পরিশীলিততা শুধু গানেই নয়, তার অত্যন্ত আন্তরিক উপস্থাপনাতেও প্রকাশিত হয়। তার গানের তালেমাত্রা এবং সুরের পরিষ্কারতা শ্রোতাদের মনোরঞ্জন করে। লাইভ পারফরমেন্সগুলিতে তিনি শ্রোতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে একটি অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে থাকেন।

  • একটি মনের দাম দিতে গিয়ে – শাহিদুল ইসলাম, কাজল রাশিদ
  • রুপালী নদীরে – আনিসুল হক চৌধুরী
  • এ লগনের, পথ চেয়ে আমি বসেছিলাম – ড. মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান, সত্য সাহা

রুনা লায়লার লাইভ পারফরমেন্সগুলি তাদের সুন্দর সঙ্গীত ও আত্মার গভীরতায় ভক্তদের মুগ্ধ করে। তার কণ্ঠের মাধুর্য এবং পরিশীলিত মঞ্চ পরিবেশনার সাথে তার দক্ষ নৃত্যকলার সংমিশ্রণ মঞ্চকে করে তোলে অনবদ্য এবং স্মরণীয়। তাই, Runa Laila কনসার্টগুলি সবসময়ই সুরের জাদু ছড়িয়ে দেয় সবখানে।

  1. কখন ছুটি হবে – শাহিদুল ইসলাম, কাজল রাশিদ
  2. তুমি সূর্যের মতো সোনালী অলংকারে – আনোয়ারউদ্দীন খান
  3. মন মাতোয়া বৌ গো, তুমি ঘোমটা খুলোনা – আপেল মাহমুদ

রুনা লায়লার লাইভ পারফরমেন্সগুলোতে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। তার মঞ্চ পরিবেশনা বিশেষ করে কনসার্টগুলি প্রমাণ করে যে তিনি সত্যিই সুরের রানী এবং কিংবদন্তি শিল্পী।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি

রুনা লায়লা শুধু বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগৎ নয়, সারা উপমহাদেশের চলচ্চিত্রে এই সঙ্গীত কিংবদন্তীর অবদান অমর। তার নজরকাড়া সঙ্গীত গায়কী ও সুরের যাদুতে মুগ্ধ হয়েছে অসংখ্য শ্রোতা ও দর্শক। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের গানে তার অসামান্য অবদান আজও সবার মনে গেঁথে আছে।

ঢাকাই চলচ্চিত্রে ফলপ্রসূ কাজ

রুনা লায়লা ঢাকাই চলচ্চিত্রের জন্য গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান, যা চলচ্চিত্রের সাফল্যে বড় ভূমিকা রেখেছে। তার গাওয়া গানগুলো চলচ্চিত্রের আবেগময় মুহূর্তগুলোকে আরও বেশি সংবেদনশীল ও স্মরণীয় করে তুলেছে। ‘নাগিন’ ছবির গান থেকে শুরু করে ‘ছুটির ফাঁদে’ পর্যন্ত, তার সুরেলা কন্ঠের যাদু ঢাকাই চলচ্চিত্রের গানের ক্লাসিকে স্থান পেয়েছে। এ কারণে তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের এক অপূর্ব ধ্রুবতারা।

চলচ্চিত্র সঙ্গীতে অবদান

রুনা লায়লার চলচ্চিত্র সঙ্গীতে অবদান অতুলনীয়। ঢাকাই চলচ্চিত্রে তার গাওয়া প্রতিটি গান সঙ্গীতপ্রেমীদের মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। তিনি আটবার শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালকের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন, যা বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে তার অবদানের অন্যতম স্বীকৃতি। তার সঙ্গীতে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন প্রজন্মের অনেক শিল্পী আত্মপ্রকাশ করেছে, যা ঢাকাই চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছে। এছাড়া তিনি বছরের পর বছর ধরে অসাধারণ সঙ্গীত অবদান রেখে প্রতিটি সঙ্গীতপ্রেমীর হৃদয়ে চিরস্থায়ী স্থানের অধিকারী হয়েছেন।

রুনা লায়লা’র দৃষ্টিতে বর্তমান সঙ্গীত জগৎ

রুনা লায়লা বর্তমান সঙ্গীত চর্চাআধুনিক গানের ভূবন নিয়ে বেশ কিছু মতামত দিয়েছেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে মানসম্মত সঙ্গীত চর্চা অত্যন্ত জরুরি। তার ভাষায়, “এখন কাটপেস্টের যুগ।” তার মানে অনেক সঙ্গীতশিল্পী মূলত পুরনো গানকে নতুনভাবে পরিবেশন করছেন বা তাদের সঙ্গীতে মৌলিকতায় ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  শ্রুতি হাসান

আধুনিক গানের ভূবন সম্পর্কে তার মতামত হলো, প্রথমেই সবার উচিত সঙ্গীতের গভীরতা এবং সৌন্দর্যকে বুঝে তা পরিবেশন করা। অনেককাল ধরে গোল্ডেন ডিস্ক এবং প্ল্যাটিনাম ডিস্ক জয়ী অ্যালবামগুলোতে যেমন মানসম্পন্ন কাজ করা হয়েছে, তেমনই বর্তমান সময়ের শিল্পীদেরও তা করা উচিত।

রুনা লায়লা আরও বলেন যে বর্তমান সঙ্গীত চর্চায় যতটা সম্ভব মৌলিক সৃষ্টির উপর জোর দিতে হবে। তার দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে তিনি উর্দু, হিন্দি, সিন্ধি, পাঞ্জাবি এবং পশতু ভাষায় গান করেছেন, সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানেন যে বৈচিত্র্যের মাঝে গানের আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে।

ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে রুনা লায়লা দেখেছেন যে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র এবং সংগীতের জগতে অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। তবে তার মতে, ভালো সঙ্গীত সব সময়ই মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। সুতরাং, আধুনিক গানের ভূবনকে আরও সমৃদ্ধ করতে, নবীন শিল্পীদের উত্সাহ দেওয়া এবং তাদেরকে মানসম্পন্ন সঙ্গীত চর্চায় লিপ্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি।

সমসাময়িক সঙ্গীত শিল্পীদের সাথে সম্পর্ক

রুনা লায়লা শুধু কিংবদন্তি গায়িকা হিসেবে নয়, বরঞ্চ প্রেরণা দানকারী একজন মহীয়সী হিসেবেও সমাদৃত। তার দীর্ঘদিনের সঙ্গীত ক্যারিয়ারে তিনি তরুণ শিল্পীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন এবং তাদের নতুন মাত্রা দিয়েছেন।

তরুণ শিল্পীদের জন্য প্রেরণা

রুনা লায়লা তরুণ শিল্পীদের জন্য সবসময়ই এক প্রেরণার নাম। তার জীবনের গল্প এবং সঙ্গীতে অবদানের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের শিল্পীরা প্রেরণা খুঁজে পান। তার সংগীত জীবন শুরু হয়েছিল মাত্র ১২ বছর বয়সে, যখন তিনি পাকিস্তানি ছবি ‘জুগনু’-তে প্রথম গান গেয়েছিলেন। তার এই সাফল্য অনেক তরুণ শিল্পীকে প্রেরণা যোগাতে সাহায্য করেছে, তাদের মধ্যে সঙ্গীতে ভালোবাসা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা জন্ম দিতে সহায়তা করেছে।

গানের মাধ্যমে ভালোবাসা

রুনা লায়লার সুরেলা কণ্ঠ তরুণ শিল্পীদের মধ্যে সঙ্গীতে ভালোবাসার প্রভাব বিস্তার করে। ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান গেয়ে তিনি তার প্রতিভার প্রদর্শনী করেছেন। এই গানগুলির মধ্যে ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’ একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় গান যা তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে এখনো অনুপ্রেরণা এবং সহানুভূতির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। তার সঙ্গীত ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয় এবং তরুণদের মনোবল দৃঢ় করে, সঙ্গীতে সত্যিকারের ভালোবাসা তৈরি করে।

তিন দেশের গানের ধারার বৈচিত্�

রুনা লায়লা শিল্পী জীবনে মোট ১৮টি ভাষায় ১০,০০০-এরও বেশি গান করেছেন। তাঁর অসাধারণ কন্ঠের মাধুরী এবং বহুমুখী গানের স্টাইলের কারণে তিনি চলচ্চিত্র, পপ, আধুনিক সংগীতের অন্যতম জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী হিসাবে পরিচিত। বিভিন্ন ভাষায় গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা তাকে বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান – এই তিন দেশের গানের ধারায় বৈচিত্রপূর্ণ করতে সহায়ক হয়েছে।

ঠাকুরদা এবং বাগদাদের কাছ থেকে প্রভাবিত হয়ে রুনা লায়লা নিজের গানের ক্যারিয়ার শুরু করেন। পাকিস্তানে তার প্লেব্যাক হিসেবে প্রথম গান “উনকি নজরোঁ সে মৃতীয়াদ” খুবই জনপ্রিয় হয়। ভারতে তার গাওয়া গান “দমাদম মাস্ত কালান্দার” সারেগামাপাতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

বাংলাদেশে রুনা লায়লা প্রথম সাফল্যের স্বাদ পান তার গাওয়া গানগুলি দিয়ে। যৌথ সহযোগিতায় কাজ করে শিল্পী, সংগীত পরিচালক এবং গীতিকারদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অনবদ্য সুর। তার বিখ্যাত এলবাম “সুপারুনা” বাপ্পি লাহিরীর সংগীতায়োজন এবং আঙুলে তুলেছে প্রতিটি শ্রোতার মন।

রুনা লায়লা তার কণ্ঠের সুরের জন্য সারা বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরষ্কারের পাশাপাশি নিজ দেশ এবং অন্য দেশেও বহু পুরস্কার সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এই সংগীত প্রতিভার মাধ্যমে তিনি তিন দেশের গানের ধারাকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button