স্ট্রোক এর লক্ষণ কি?

স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলি মানুষের জীবনে আকস্মিক প্রভাব ফেলে। স্ট্রোক লক্ষণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও জ্ঞান থাকলে মস্তিষ্কের আঘাত থেকে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব। প্রতি বছর, অনেক ব্যক্তি মস্তিষ্কের আঘাত জনিত কারণে আক্রান্ত হয়, যা বিভিন্ন বয়সে এর ঝুঁকি দেখায়। উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস প্রভাব বাড়ানোর পাশাপাশি, ধূমপান এবং অলস জীবনযাত্রা এর প্রধান কারণগুলির মধ্যে অন্যতম।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ট্রোকের প্রাথমিক চিহ্ন গুলি যথা মুখের পেশীর দুর্বলতা, হাতে বা পায়ে কার্যকরিতা লোপ পাওয়া, দৃষ্টিশক্তি হারানো বা অস্পষ্ট দর্শন ইত্যাদি সনাক্ত করা জরুরি। স্ট্রোক চিকিৎসার ক্ষেত্রে সময় হচ্ছে অমূল্য; এটি কে আমরা ‘গোল্ডেন আওয়ার’ হিসেবে চিহ্নিত করি, যেখানে রোগীকে অতি দ্রুত প্রথমিক চিকিৎসা প্রদান মৃত্যু বা অঙ্গহানির ঝুঁকি হ্রাস করে। জানালের কথা, মানব জীবনকে আরও বেশি মূল্যবান ও সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে এখনই স্ট্রোক সম্পর্কে সজাগ হওয়া উচিত।

স্ট্রোক কি?

স্ট্রোক, যা ব্রেন অ্যাটাক নামেও পরিচিত, হল মস্তিষ্কে এমন এক পরিস্থিতি যেখানে রক্তপ্রবাহ হঠাৎ বাধাগ্রস্ত হয়ে যায়, যার ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মারা যায়।

সংজ্ঞা এবং প্রকারভেদ

স্ট্রোকের সংজ্ঞা অনুযায়ী, এটি এমন একটি মস্তিষ্কের রোগ যা হয় মস্তিষ্কের অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হও৯া বা অন্য কোনো মাধ্যমে ক্ষতি হওয়ার ফলে। এর প্রধান দুই ধরন হলঃ

  • ইস্কেমিক স্ট্রোক: যা 80% স্ট্রোকের জন্য দায়ী, এটি হয় মস্তিষ্কের রক্তনালি ব্লক হওয়ার কারণে।
  • হেমোরেজিক স্ট্রোক: এটি মস্তিষ্কের রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে ঘটে এবং প্রায় 13% স্ট্রোকের জন্য দায়ী।

কেন এটি ঘটে?

স্ট্রোকের প্রধান কারণগুলো হলঃ

  1. উচ্চ রক্তচাপ: এটা স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি এবং সব স্ট্রোকের অর্ধেকের জন্য দায়ী।
  2. তামাক জাতীয় পণ্য ও মদ্যপান: এগুলি রক্তনালির ক্ষতিসাধন করে এবং রক্তচাপ বড়িয়ে তোলার কারণ হতে পারে।
  3. অপর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম: অলস জীবনযাত্রা স্ট্রোকের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে
  4. পারিবারিক ইতিহাস ও বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে এবং পারিবারিক ইতিহাস থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
  5. হৃদরোগ: হৃদযন্ত্রের সমস্যাও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
আরও পড়ুনঃ  আঁচিল দূর করার উপায়

এসব কারণের সাথে সাথে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, এজন্য ধূমপান ত্যাগ, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস গ্রহণ করা আবশ্যক। এগুলি স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়ক

স্ট্রোকের সাধারণ লক্ষণ

স্ট্রোক ব্যক্তির মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের হঠাৎ ব্যাঘাতের ফলে ঘটে, যা মস্তিষ্কের কোষগুলির ক্ষতি সাধন করে। এর কিছু সাধারন লক্ষণ রয়েছে যা স্ট্রোকের প্রাথমিক চিহ্ন হিসেবে গণ্য হয়।

মুখের পেশীর দুর্বলতা

একটি প্রধান লক্ষণ হল মুখের বিকৃতি। রোগীর মুখের এক পাশ হয়তো ঝুলে যেতে পারে অথবা তিনি যদি হাসতে বা কথা বলতে গেলে মুখের একদিক দিয়ে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া না দেখান, তাহলে তা স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে।

হাত বা পায়ের পক্ষাঘাত

পক্ষাঘাতের লক্ষণ হিসাবে হাত বা পায়ের এক পাশ দুর্বল বা অকেজো হয়ে পড়া স্ট্রোকের একটি সাধারণ ইঙ্গিত। এটি বোঝার জন্য রোগীকে দু’হাত তুলে ধরতে বলা হতে পারে; যদি এক হাত অন্য হাতের তুলনায় নীচে ঝুলে যায়, তাহলে তা স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে।

চোখের সমস্যাগুলি

চোখের সমস্যা অন্যান্য সাধারণ লক্ষণের মধ্যে একটি। রোগী হয়তো চোখের এক পাশে দৃষ্টি হারাতে পারেন অথবা তাদের দৃষ্টি দ্বৈত বা ঘোলাটে মনে হতে পারে।

এই লক্ষণগুলি যদি কোনো ব্যক্তির মধ্যে দেখা দেয়, তাহলে অতি দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। প্রাথমিক চিকিৎসায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া গেলে পূর্ণাঙ্গ বা আংশিক রোগ মুক্তি সম্ভব।

দ্রুত শনাক্তকরণের ৩টি প্রধান লক্ষণ

স্ট্রোকের সময় কিছু লক্ষণ দ্রুত চিহ্নিত করা জীবন রক্ষার জন্য অত্যাবশ্যক। স্ট্রোক পরীক্ষা এবং চিকিৎসা প্রক্রিয়া সঠিক সময়ে শুরু হলে, রোগীর জীবনের উন্নতি ও রক্ষা সম্ভব। নিম্নে তিনটি লক্ষণ উল্লেখ করা হল, যেগুলি দ্রুত পর্যবেক্ষণ করার জন্য জরুরি।

মুখাবয়ব

স্ট্রোকের সময় মুখের একপাশে দুর্বলতা বা পক্ষাঘাত দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির মুখের একপাশ ঝুলে যেতে পারে। এটি দ্রুত চিহ্নিত করা একটি সহজ উপায় হলো, রোগীকে হাসতে বা দাঁত দেখাতে বলা, যেখানে মুখের বৈসাদৃশ্য স্পষ্ট হবে।

আরও পড়ুনঃ  পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়?

হাত

স্ট্রোক পরীক্ষায় ‘হাত’ উল্লেখের অর্থ হলো হাতের দুর্বলতা বা অসাড়তা। রোগীকে দুই হাত সমান উচ্চতায় উঠানোর জন্য বললে, স্ট্রোকের ক্ষেত্রে এক হাত অপর হাতের তুলনায় নেমে যাবে।

কথা বলার অসুবিধা

স্ট্রোক ঘটলে, চিন্তা বা বোঝার ক্ষমতার সাথে সাথে বাক অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির ভাষা অস্পষ্ট হয়ে যায় বা সঠিক শব্দগুলি বের করতে পারে না। এমন লক্ষণ দ্রুত প্রত্যয়িত হলে তা স্ট্রোকের সম্ভাবনা ইঙ্গিত করে। কোনও সন্দেহ হলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

স্ট্রোকের প্রথম তিন ঘণ্টায় চিকিৎসা শুরু হলে পুনর্বাসনে হার ব্যাপকভাবে উন্নতি হয়। সময় এবং সঠিক নির্ণয় একজন ব্যক্তির জীবনযাত্রা ও জীবনের গুণমান উন্নত করতে সক্ষম করে।

অন্যান্য লক্ষণ

স্ট্রোকের অন্যান্য উপসর্গগুলি অনেক সময় নজর কেড়ে নেয় যা অবশ্যই মনোযোগ দেওয়ার মতো। এর মধ্যে বিশেষ করে সংবেদন হ্রাস এবং জটিল মাথাব্যথা গুরুত্বপূর্ণ। এই উপসর্গগুলি স্ট্রোকের সংকেত হিসাবে খুবই সূক্ষ্ম হতে পারে, কিন্তু তার প্রভাব অত্যন্ত গভীর।

দৃষ্টি সমস্যা

স্ট্রোকের ফলে দৃষ্টি সংক্রান্ত সমস্যাগুলো যেমন এক অথবা দুটি চোখে অস্পষ্ট দেখা অথবা দুই দিকে আলাদা আলাদা দেখা যাওয়া বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

ভারসাম্যহীনতা

হাঁটতে গিয়ে বা নড়াচড়া করতে গিয়ে ভারসাম্য হারানো একটি সুস্পষ্ট লক্ষণ যা জটিল মাথাব্যথা সহ উপস্থিত হতে পারে।

অস্বাভাবিক মাথাব্যথা

হঠাৎ করে শুরু হওয়া প্রচণ্ড ও অস্বাভাবিক মাথাব্যথা যা আগে কখনো অনুভুত হয়নি, তা স্ট্রোকের গুরুতর উপসর্গ হিসাবে গণ্য হয়।

  • দ্রুত চিকিৎসায় গুরুত্ব
  • নিয়মিত চেকআপ ও পরীক্ষা
  • সুস্থ জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস

শেষ পর্যন্ত, স্ট্রোকের এই অন্যান্য উপসর্গগুলির সময়মতো চিহ্নিত করা এবং যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা জীবন রক্ষার্থে একান্ত জরুরি। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি পারে অকাল মৃত্যু এবং অক্ষমতা এড়াতে সাহায্য করতে।

লক্ষণগুলির প্রবণতা

স্ট্রোকের লক্ষণগুলি বয়স এবং জীবনযাত্রা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বিশেষত, শিশুদের এবং বৃদ্ধদের মধ্যে লক্ষণগুলির প্রকাশ ভিন্নতর দেখা যায় যা স্ট্রোক প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগ দাবি করে।

আরও পড়ুনঃ  হাতের অবশ ভাব দূর করার উপায়

শিশুদের মধ্যে লক্ষণ

শিশুদের স্ট্রোকের লক্ষণগুলি প্রায়শই বড়দের চেয়ে আলাদা হয়। পক্ষাঘাত এবং শিক্ষা সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ প্রধান হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় এই লক্ষণগুলোকে ঠিকমতো চিন্তে ও যথাযথ প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করাও জরুরী।

বৃদ্ধদের মধ্যে লক্ষণ

বৃদ্ধরা সাধারণত বৃদ্ধদের স্ট্রোক লক্ষণগুলির প্রতি বেশি প্রবণ। তাদের মধ্যে পক্ষাঘাত এবং কথা বলার ক্ষমতায় হ্রাস প্রায়ই দেখা যায়। বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে স্ট্রোক প্রতিক্রিয়া ও পুনর্বাসন পদ্ধতি আরও জটিল হতে পারে।

প্রত্যেক বয়সের গোষ্ঠীর জন্য সাময়িক, প্রাসঙ্গিক চিকিৎসা এবং যথাযথ সাহায্য স্ট্রোকের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল প্রদান করে। পারিবারিক সদস্য ও স্বাস্হ্যসেবা প্রদানকারীদের উচিত এই লক্ষণগুলি সম্যক জ্ঞান রাখা এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেওয়া।

স্ট্রোকের আগে এবং পরে লক্ষণ

স্ট্রোক, যাকে মস্তিষ্কের আঘাত হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়, তার আগে এবং পরে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়। বাংলাদেশের একটি চিকিৎসা কলেজ হাসপাতালে পরিচালিত সমীক্ষা অনুসারে, প্রতি ১০০০ জন ব্যক্তির মধ্যে ১১ জন স্ট্রোকের শিকার হচ্ছেন। মস্তিষ্কের এই আঘাতের মূল কারণ হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ, যার সাথে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও হৃদরোগও যুক্ত।

প্রাথমিক লক্ষণ

স্ট্রোকের পূর্বাভাস স্বরূপ প্রাথমিক লক্ষণ যেমন হালকা মাথাব্যথা, হাত বা পায়ের অস্বস্তি বোধ করা, বা মুখের পেশীতে টান লাগা গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেয় যে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। এরূপ স্ট্রোক পূর্বের চিহ্ন অনুভুত হলে, ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিটের মধ্যে মেডিকেল হেল্প নেয়া সম্ভাব্য ক্ষতিকর পরিণতি এড়ানোর জন্য অত্যাবশ্যক।

পুনর্বাসন সংক্রান্ত লক্ষণ

স্ট্রোকের পরবর্তী সময়ে, পুনর্বাসনে দেখা যেতে পারে নানান পুনর্বাসনের উপসর্গ, জেমন শারীরিক কাজে অক্ষমতা, ভাষায় বিপর্যয় বা মোটর সামর্থ্যের হ্রাস। এই উপসর্গগুলি পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া ও তার দীর্ঘস্থায়িত্বের সময়কাল নির্ধারণ করে দেয়। যে ব্যক্তিরা স্থূলতা, উচ্চ রক্তের চাপ, ধূমপান, ও মানসিক চাপের সাথে জীবনযাপন করেন তাদের পুনর্বাসনের পথ সাধারণত কঠিন হয়।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button