টেস্টোস্টেরন হরমোন বেশি হলে কি হয়?
পুরুষের দেহে উচ্চ টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা প্রায় ৩০০ থেকে ১০০০ ন্যানোগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার হবার কথা, তবে যখন এই মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায়, তখন এটি বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এই ঝুঁকিগুলির মধ্যে শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস পাওয়া, হৃদরোগের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ঝুঁকি, ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, এবং মানসিক মনোভাবে পরিবর্তনের মতো প্রভাব অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
এ কারণে, ডায়েটে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন তৈলাক্ত মাছ, মাংস, ডিম, এবং দুগ্ধজাতীয় পণ্য রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট প্রচারের মাধ্যমে টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাব সুষম করা সম্ভব। এই হরমোনের সন্তুলন বজায় রাখা পুরুষের দেহ ও মনের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
টেস্টোস্টেরন কি?
টেস্টোস্টেরন হলো মেল সেক্স হরমোন যা পুরুষ জনন হরমোন ও বলা যায় এবং পুরুষদের শারীরিক এবং যৌন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই হরমোনটি মূলত পুরুষদের অন্ডকোষে এবং নারীদের ডিম্বাশয়ে তৈরি হয় এবং এটি শরীরের বিভিন্ন অংশে টেস্টোস্টেরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে থাকে।
টেস্টোস্টেরনের ভূমিকা
টেস্টোস্টেরনের প্রাথমিক ভূমিকা হলো যৌন বৈশিষ্ট্য এবং প্রজনন ক্ষমতার বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করা। এটি পেশী ভর এবং হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধির মতো অ্যানাবলিক প্রভাব দান করে, যা ভারোত্তোলন সহ শারীরিক কার্যক্রমের ফলে পেশী বাড়ায়। এছাড়াও, এটি মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনোভাব নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে, যা সাধারণত আত্মবিশ্বাস এবং চিন্তা-চেতনার সাথে যুক্ত।
টেস্টোস্টেরনের উৎস
টেস্টোস্টেরনের প্রধান উৎস হলো কোলেস্টেরল, যা শরীরের অন্ডকোষে টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে সাহায্য করে। এই হরড়িমোন পুরুষদের জননতন্ত্রের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং শারীরিক শক্তি এবং সহনশীলতা বৃদ্ধি করে। এটি সরাসরি মাংসপেশী বৃদ্ধি এবং হাড়ের ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য দায়ী কারণ এটি প্রোটিন সংশ্লেষণ উন্নত করে।
সাধারণভাবে, টেস্টোস্টেরন পুরুষদের শরীরে একটি অনুকূল হরমোন হিসেবে কাজ করে যা নানাবিধ শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে সহায়ক। তবে, এর মাত্রার তারতম্য বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই নিয়মিত মেডিক্যাল পর্যবেক্ষণ ও সঠিক ডায়েট অত্যন্ত জরুরি।
উচ্চ টেস্টোস্টেরনের লক্ষণ
উচ্চ টেস্টোস্টেরনের প্রভাব বিভিন্ন শারীরিক লক্ষণ এবং মানসিক পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যেহেতু টেস্টোস্টেরন একটি মুখ্য হরমোন, তার উচ্চ মাত্রা বিভিন্ন ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং জটিলতাসহ নানান লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
শারীরিক পরিবর্তন
- চুল পরিমাণে বৃদ্ধি, বিশেষ করে মুখে এবং শরীরে
- ত্বকে তেলতেলে ভাব এবং একনির সমস্যা
- মাসল মাস বৃদ্ধি এবং চর্বি হ্রাস
- প্রজনন অঙ্গের আকারে পরিবর্তন, যেমন অণ্ডকোষের সঙ্কোচন
- স্বল্প শুক্রাণুর সংখ্যা এবং বন্ধ্যাত্বের সমস্যা
মানসিক পরিবর্তন
- আচরণে অতিরিক্ত আগ্রাসন এবং ক্ষিপ্রতা
- ঘুমের প্যাটার্নে পরিবর্তন, যেমন ইনসোমনিয়া
- ধৈর্যহীনতা এবং সহজে রাগান্বিত হওয়া
- নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং স্ট্রেসের প্রতি বাড়িয়ে প্রতিক্রিয়া
এসব শারীরিক লক্ষণ ও মানসিক পরিবর্তন সাধারণত উচ্চ টেস্টোস্টেরনের সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা যায় এবং সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শ এই অবস্থার মোকাবিলায় অত্যন্ত জরুরি।
কিভাবে টেস্টোস্টেরন বাড়ে?
টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক পদ্ধতি এবং চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যবহার চলে। এই হরমোনের উৎপাদন প্রায়ই জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের উপর নির্ভর করে থাকে। নীচে এই দুই ক্ষেত্রের ওপর আলোচনা করা হল:
প্রাকৃতিক উপায়
- নিয়মিত ব্যায়াম: মাসেল ট্রেইনিং এবং হাই ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেইনিং (HIIT) ব্যায়াম টেস্টোস্টেরন উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সহায়ক।
- স্বাস্থ্যকর ডায়েট: উচ্চ প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেটের ভারসাম্যমূলক খাদ্য গ্রহণ করা। বিশেষ করে, জিংক এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।
- যথেষ্ট ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম টেস্টোস্টেরন উৎপাদনের জন্য অত্যাবশ্যক।
- স্ট্রেস কমানো: নিয়মিত মেডিটেশন এবং অন্যান্য স্ট্রেস রিডাকশন টেকনিক অনুশীলন করা।
চিকিৎসা পদ্ধতি
প্রাকৃতিক পদ্ধতির পাশাপাশি, কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে হরমোন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়, যা বিশেষ করে যেসব রোগীর টেস্টোস্টেরন স্তর অত্যধিক নিম্ন তাদের জন্য প্রয়োজনীয়। এই থেরাপিতে পাত্রোফর্মিক হরমোনগুলি ব্যবহার করা হয় যা টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে সাহায্য করে।
- টেস্টোস্টেরন ইনজেকশন: এটি সরাসরি রক্তে টেস্টোস্টেরন প্রবাহিত করে, দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।
- স্কিন প্যাচ: এই প্যাচগুলি ত্বকের মাধ্যমে ধীরে ধীরে হরমোন ছেড়ে দেয়, যা নিরাপদ এবং সহজ।
- জেল অথবা ক্রিম: এই পণ্যগুলি ত্বকে প্রয়োগ করা হয় এবং এরা হরমোন ধীরে ধীরে শরীরে মিশ্রণ করে।
স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলি
উচ্চ টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে, যা মূলত হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস ঝুঁকির সাথে জড়িত। উচ্চ টেস্টোস্টেরনের প্রভাবে হৃদরোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়, এটি শরীরের উচ্চ লিপিড লেভেলে প্রভাব ফেলে এবং দেহের ভেতরের প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও, উচ্চ রক্তচাপের প্রেক্ষিতে ডায়াবেটিস সংক্রান্ত সমস্যা হৃদরোগের ঝুঁকির মতোই বিপজ্জনক।
হৃদরোগের ঝুঁকি
টেস্টোস্টেরনের অতিরিক্ত মাত্রা হৃদযন্ত্রের পেশিকে অত্যন্ত চাপের মুখে ফেলে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। চলমান গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণ থেকে জানা গেছে যে, এ ঝুঁকি বিশেষ করে মধ্যবয়সী এবং প্রবীণদের মধ্যে বেশি।
ডায়াবেটিস সংক্রান্ত সমস্যা
ডায়াবেটিস ঝুঁকি স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে একটি প্রধান ফ্যাক্টর। উচ্চ টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ব্যক্তির বিপাক পদ্ধতিতে প্রভাব ফেলে, যা ইনসুলিন প্রতিরোধীতা তৈরি করে এবং শেষ পর্যন্ত টাইপ ২ ডায়াবেটিস আকারে প্রকাশ পেতে পারে। এই রকম সমস্যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে বৃদ্ধি করে।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি
বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা একটি প্রধান বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে, বিশেষ করে টেস্টোস্টেরন সংক্রান্ত বিষয়ে। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেশি হলে বা কম হলে উভয়ই শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
টেস্টোস্টেরন পরীক্ষা
রক্তের পরীক্ষার মাধ্যমে টেস্টোস্টেরন পরীক্ষা করা হয়, যা একজন পুরুষের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নির্ণয় করে। এই পরীক্ষা বিশেষত তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যাদের বয়স ৪০ বছরের উপরে এবং যারা হরমোন-জনিত লক্ষণগুলি অনুভব করছেন।
চিকিৎসকের পরামর্শের গুরুত্ব
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বা কম হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যক। পুরুষদের উচিত নিয়মিতভাবে তাদের টেস্টোস্টেরন মাত্রা পরীক্ষা করানো, কারণ এটি নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক অসুখের লক্ষণ হতে পারে। যদি কোনো অস্বাভাবিক মাত্রা পাওয়া যায়, তাহলে যথাসময়ে পরামর্শ নিয়ে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
- টেস্টোস্টেরনের উচ্চ মাত্রা মূড সুইং, শারীরিক অবস্থানের পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত চুল পড়া ঘটাতে পারে।
- টেস্টোস্টেরনের নিম্ন মাত্রা ক্লান্তি, হতাশা এবং যৌন উদ্দীপনার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
সার্বিকভাবে, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সঠিক টেস্ট এবং চিকিৎসা পরিকল্পনা থাকা অত্যন্ত জরুরি। টেস্টোস্টেরনের লেভেল যদি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে একজন চিকিৎসক এই হরমোনের মাত্রা সামঞ্জস্য করার জন্য যথাযথ চিকিৎসা নির্ধারণ করতে পারেন।
টেস্টোস্টেরন এবং পুরুষত্ব
টেস্টোস্টেরন মূলত পুরুষদের শারীরিক এবং যৌন বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সেক্স হরমোন শুধু পুরুষত্বকেই প্রভাবিত করে না, বরং পুরুষের যৌন স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক কর্মক্ষমতায়ও প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন গবেষণা এবং রিপোর্ট দেখায় যে, টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যাওয়া পুরুষত্বের বিভিন্ন দিককে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
পুরুষত্বের প্রতীক
- পুরুষের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের উচ্চ মাত্রা শারীরিক শক্তি এবং মাংসপেশীর বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
- এছাড়াও, টেস্টোস্টেরন হরমোন চুলের বৃদ্ধি, গভীর কণ্ঠস্বর এবং অন্যান্য পুরুষত্বের লক্ষণ বিকাশে সাহায্য করে।
- পর্যাপ্ত টেস্টোস্টেরন স্তর মানুষের আত্মবিশ্বাস এবং উদ্যমকে বৃদ্ধি করতে সক্ষম।
যৌনস্বাস্থ্য
টেস্টোস্টেরন পুরুষের যৌন স্বাস্থ্যের এক অন্যতম উপাদান। এটি সেক্স হরমোন হিসেবে যৌন চাহিদা, স্তম্ভন ক্ষমতা এবং যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। নিম্ন স্তরের টেস্টোস্টেরন নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি সৃষ্টি করতে পারে:
- যৌন ইচ্ছার হ্রাস
- ইরেকটাইল ডিসফাংশন
- মানসিক অবসাদ যা যৌন ক্ষমতা প্রভাবিত করে
সুতরাং, পুরুষত্ব এবং যৌন স্বাস্থ্যের পরিপূর্ণতার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন অপরিহার্য। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন এর মাত্রা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়।
নারীদের মধ্যে টেস্টোস্টেরন
যদিও সাধারণত টেস্টোস্টেরনকে পুরুষ হরমোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, নারীদের দেহেও এই হরমোন উৎপাদিত হয় এবং এর নিয়ন্ত্রণাধীন মাত্রায় থাকা নারী স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। উচ্চ বা নিম্ন মাত্রায় টেস্টোস্টেরনের উপস্থিতি হরমোন অসামঞ্জস্য ঘটাতে পারে, যা নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
নারীর স্বাস্থ্যে প্রভাব
-
টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক মাত্রা যৌন উত্তেজনা এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
-
হরমোনের ন্যূনতা বা অতিরিক্ত প্রভাব যেমন উচ্চাভিলাষী মানসিক যন্ত্রণা, ঊর্জার ঘাটতি, এবং চর্বি বৃদ্ধি সহ নারী স্বাস্থ্যে বিপর্যয় ঘটাতে পারে।
অসুবিধাগুলির সম্ভাবনা
-
নারীদের টেস্টোস্টেরনের অত্যধিক উৎপাদন মহিলাদের মধ্যে PCOS এবং অন্যান্য হরমোনজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
-
হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস, চুল পড়া, এবং মানসিক অস্থিরতা হতে পারে অতিরিক্ত টেস্টোস্টেরনের ফলে।
অতএব, নারীদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের সঠিক মাত্রা বজায় রাখার গুরুত্ব অপরিসীম, যা নারী স্বাস্থ্য এবং সার্বিক জীবনযাত্রার মানের জন্য অপরিহার্য। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা যদি অসামঞ্জস্য হয়, তবে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা জরুরি।
ইনসুলিনের সম্পর্ক
ইনসুলিন প্রতিরোধ এবং মেটাবোলিজমের সঙ্গে টেস্টোস্টেরনের একটি গভীর সংযোগ রয়েছে, যা মানব শরীরের হরমোন সংযোগ এবং বিপাকক্রিয়াকে প্রবাহিত করে। এই সম্পর্কগুলো বুঝতে গেলে আমাদের ইনসুলিন প্রতিরোধ এবং তার প্রভাব সম্পর্কে জানা জরুরি।
ইনসুলিন এবং টেস্টোস্টেরনের সংযোগ
ইনসুলিনের সঠিক কার্যকারিতা না থাকলে শরীরে বিপাক প্রক্রিয়ার মেটাবোলিজম ব্যাহত হয় এবং টেস্টোস্টেরনের উত্পাদনও প্রভাবিত হতে পারে। বিপাকীয় প্রক্রিয়াটির প্রাকৃতিক গতি কমে যাওয়ায় টেস্টোস্টেরনের মাত্রা প্রভাবিত হতে পারে।
বিপাকের প্রভাব
- ইনসুলিন প্রতিরোধ আরও বেশি হলে শরীরের মেটাবোলিজম ধীর হয়ে যায়, যা অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার সাথে সম্পর্কিত।
- টেস্টোস্টেরন এবং ইনসুলিনের এই অন্তর্ভুক্তি মেটাবোলিক সিন্ড্রোমে লক্ষণীয়। মেটাবোলিক সিন্ড্রোম হলো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের উন্নয়নশীল ঝুঁকি।
- মেটাবোলিজম বাড়ানো এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম এবং সাধারণ খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস জরুরি।
সঠিক ডায়েট এবং জীবনযাপনের পদ্ধতি গ্রহণ করে হরমোন সংযোগ ব্যবস্থাকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং এতে করে ইনসুলিন প্রতিরোধ এবং মেটাবোলিজমের উন্নতি সাধিত হয়।
চিকিৎসা ও হরমোন থেরাপি
পুরুষ ও নারী উভয়েরই বিভিন্ন অবস্থায় হরমোন থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। এই থেরাপি শারীরিক অসুস্থতা, যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা, এবং লিঙ্গ সংশোধনী চিকিৎসায় ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। তবে, এই চিকিৎসা সুবিধা এবং ঝুঁকি ও পার্শ্বপ্রভাব উভয়ই বিবেচ্য।
হরমোন থেরাপির সুবিধা
- লিঙ্গ সংশোধনী চিকিৎসায় হরমোন থেরাপি মানসিক যাতনা এবং নিরাপত্তাহীনতা কমাতে সাহায্য করে।
- মেনোপোজের পর নারীদের যৌন ইচ্ছা এবং সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পেতে হরমোন থেরাপি কার্যকর।
- নির্দিষ্ট কিছু হরমোনাল অবস্থা, যেমন লো টেস্টোস্টেরন স্তর বা পিসিওএস, সঠিক হরমোন থেরাপি দ্বারা উন্নতি সাধন করা সম্ভব।
ব্যবহারের ঝুঁকি
- অতিরিক্ত টেস্টোস্টেরনের ফলে হৃদরোগ, ব্লাড ক্লট এবং স্ট্রোকের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
- হরমোন থেরাপির পার্শ্বপ্রভাব হিসেবে ওজন বৃদ্ধি, মুখের রোম বৃদ্ধি, এবং মেজাজ পরিবর্তন দেখা যায়।
- প্রোস্টেট এবং স্তন ক্যান্সারের আগে থাকা অবস্থায় টেস্টোস্টেরন ইনজেকশন ঝুঁকিপূর্ণ।
সব মিলিয়ে, হরমোন থেরাপি হল এক জটিল চিকিৎসা প্রক্রিয়া যার চিকিৎসা সুবিধা অনেক, কিন্তু ঝুঁকি ও পার্শ্বপ্রভাবও কম নয়। তাই এই থেরাপি আদৌ আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণের জন্য অবশ্যই যোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
টেস্টোস্টেরন কমানোর পদ্ধতি
শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরী। বিশেষ করে, পুরুষ শরীরে এর প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টেস্টোস্টেরন হরমোন যা প্রধানত পুরুষ দেহ সংস্থানে বিদ্যমান, তা হলে হেয়ার গ্রোথ, মাসল স্ট্রাকচার এবং ভোকাল কর্ডের নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখে। অনিয়মিত জীবনধারা এবং খারাপ ডায়েট দেহের টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমাতে পারে। সুখী জীবনযাপনের জন্য এই হরমোনের ভারসাম্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
জীবনধারা পরিবর্তন
আধুনিক জীবনধারায় স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য। স্ট্রেস দ্বারা অতিরিক্ত কর্টিসল উৎপাদন হলে টেস্টোস্টেরন উৎপাদন কমে যায়। মাইন্ডফুলনেস এবং প্রাণায়ামের মতো টেনশন নিয়ন্ত্রণ কৌশলগুলি অনুসরণ করা বিশেষ উপকারী। আদর্শ মাত্রায় ঘুম এবং নিয়মিত ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং মতো উচ্চ তীব্রতার শারীরিক কার্যকলাপও টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি করতে পারে।
ডায়েটের প্রভাব
স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং খাদ্যাভ্যাসের উপর টেস্টোস্টেরনের মাত্রা অনেকটা নির্ভর করে। পেঁয়াজ এবং দুধ যা ক্যালশিয়াম এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ, সেগুলি রাতে খেলে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। ছোট শস্য ধরনের ফল যেমন পেয়ারা ভিটামিন এবং খনিজ সাপ্লাই করে, যা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। রসুন এবং ডিম, যা জিংক ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে পরিপূর্ণ, টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে ভালো অবদান রাখতে পারে। অন্ততপক্ষে উচ্চ মাত্রার মদ্যপান থেকে বিরত থাকা, যা টেস্টোস্টেরন হ্রাস করে এবং সাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলা, সর্বদা প্রশংসনীয়।