অক্ষয় কুমার

অক্ষয় কুমার বলিউড চলচ্চিত্রের একটি বিশেষ সত্তা। ১৯৬৭ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর, অমৃতসর, পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন এই বিখ্যাত বলিউড অভিনেতা। ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে তার নামের সাথে ‘খিলাড়ি কুমার’ বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেছে। ত্রিশ বছরেরও বেশি সময়ের অভিনয় জীবনে, অক্ষয় কুমার ১০০টিরও বেশি বলিউড চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

অক্ষয় কুমার ১৯৯১ সালে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন “সৌগন্ধ” সিনেমার মাধ্যমে এবং ১৯৯২-এ খিলাড়ি সিনেমার মাধ্যমে প্রথম বড় সাফল্য পান। ২০১৩ সালে প্রথম বলিউড অভিনেতা হিসেবে তার সিনেমাগুলি ₹২০০০ কোটি টাকা আয় করে, এবং ২০১৬-এ এই সংখ্যা ₹৩০০০ কোটি ছাড়িয়ে যায়। তিনি ২০০৯ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার এবং ২০১৬ সালে রুস্তম সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রে তার অসাধারণ অবদান তাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

জীবনের প্রারম্ভিক দিনগুলি

অক্ষয় কুমারের জন্ম ১৯৬৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, অমৃতসর, পাঞ্জাবে। প্রকৃত নাম রাজিব হরি ওম ভাটিয়া, তিনি এমন এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন যা পাঞ্জাবি হিন্দু পরিবার হিসেবে পরিচিত। শৈশব থেকেই অক্ষয় দায়িত্ববান এবং অধ্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত ছিলেন।

জন্ম ও পরিবার

অমৃতসরে জন্মগ্রহণকারী অক্ষয় কুমার তাঁর পরিবারের সাথে প্রায়ই মুম্বাইয়ে বসবাস করতেন যেখানে তাঁর পিতা সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। পরিবারটি সবসময়ই অক্ষয়ের স্বপ্ন এবং লক্ষ্যের প্রতি সমর্থন দিয়েছিল, যা তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুর পক্ষে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

শিক্ষা ও প্রাথমিক জীবন

অক্ষয়ের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ডন বস্কো উচ্চ বিদ্যালয়, মাটুঙ্গা, মুম্বাই থেকে। অক্ষয় কুমারের শিক্ষা জীবনের প্রাথমিক পর্যায়টি ছিল প্রচুর সংগ্রামের, কিন্তু তাঁর পরিবার তাকে সবসময়ই মূল্যবান শিক্ষার সাথে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছিল।

আরও পড়ুনঃ  জায়রা ওয়াসিম

এভাবেই অক্ষয়ের শৈশব কেটেছে নানা চ্যালেঞ্জ ও শিক্ষার মাঝে, যা পরবর্তীতে তাঁর সাফল্যের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনের শুরু

অক্ষয় কুমার প্রাথমিক শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে মার্শাল আর্টসে অসাধারণ দক্ষতা অর্জনের জন্য পরিচিত হন। কারাতে এবং থাই বক্সিং এর মাধ্যমে তার মার্শাল আর্টস জীবন শুরু। এই প্রশিক্ষণ নিতে তিনি থাইল্যান্ডে যান এবং সেখানে বিশেষভাবে থাই বক্সিং শিখেন।

অক্ষয় কুমারের কর্মজীবন শুরু হয় থাইল্যান্ডেই। তিনি এক পর্যায়ে সেখানকার এক হোটেলে শেফ এবং ওয়েটার হিসেবে কাজ করেন। এই কাজের মাধ্যমে তিনি জীবনের মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এবং তার পরবর্তী জীবনের জন্য এক মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেন। প্রশিক্ষণ এবং কর্মজীবনের এই মিশ্রণ তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলেছিল এবং তাকে ভবিষ্যতে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত করেছে।

মার্শাল আর্টে তার দখল এবং থাইল্যান্ডে তার অর্জিত বাস্তব অভিজ্ঞতা তাকে একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়, যা পরবর্তীতে তার মডেলিং এবং অভিনয়ের ক্যারিয়ারেও সহায়ক হয়েছে। কারাতে এবং থাই বক্সিং এর প্রতি তার আবেগ ও নিষ্ঠা তার জীবন এবং কর্মজীবনের মূল প্রেরণা রূপে কাজ করেছে।

বলিউডে অভিষেক ও প্রাথমিক সাফল্য

বলিউডে অভিষেক হওয়া অক্ষয় কুমারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছিল। ১৯৯১ সালে ‘সৌগন্ধ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বলিউডে তাঁর পা রাখা সেই সময়ের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ ছিল। অক্ষয় কুমার তাঁর অভিনয় দক্ষতা প্রদর্শনের মাধ্যমে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হন।

প্রথম নাটকীয় ভূমিকা

‘সৌগন্ধ’ চলচ্চিত্রে প্রথমবার বলিউড অভিষেক করা অক্ষয় কুমার এতে নাটকীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে তার অভিনয় লক্ষ লক্ষ দর্শকের মনে দাগ কেটে গেছে। যদিও ছবিটি বক্স অফিসে বড় সাফল্য না পেয়েও, তাঁর অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।

এই সময়ের জনপ্রিয় সিনেমা

অক্ষয় কুমারের প্রথম সাফল্যের পর, তিনি আরও কিছু সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘খিলাড়ি’ চলচ্চিত্রটি তাকে বলিউডের একজন প্রতিষ্ঠিত অ্যাকশন তারকা হিসেবে তুলে ধরেছে। এই ছবির পর তিনি একের পর এক সফল ছবি উপহার দিয়েছেন, যা বলিউডে তার অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। বলিউডে অভিষেক করে অক্ষয় কুমার দ্রুত যতটা সম্ভব সফলতার শীর্ষে পৌঁছতে সক্ষম ছিলেন।

আরও পড়ুনঃ  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার

খিলাড়ি সিরিজ এবং তার প্রভাব

অক্ষয় কুমারের বলিউড এরিয়ার অন্যতম সফল নামগুলির একটি হল খিলাড়ি সিরিজ। এই সিরিজটি তার ক্যারিয়ারের এক নয়া মোড় আনায়নে সহায়ক হয়েছে এবং বলিউড অ্যাকশন সিনেমার মধ্যে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে।
অক্ষয় কুমার ‘খিলাড়ি সিরিজ’ একাই ১০০ কোটি ক্লাবে পৌঁছেছে, যা তার অভিনয় ক্ষমতা এবং অ্যাকশন ঘরানায় দক্ষতা প্রমাণ করে।

বলিউড অ্যাকশন সিনেমা এবং বিশেষ করে ‘খিলাড়ি সিরিজ’ অক্ষয় কুমারকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গিয়েছে। এই সিরিজের পরিপ্রেক্ষিতে তার সকল সিনেমা কিন্তু বক্স অফিসে মহান সাফল্য লাভ করেনি। যেমন ‘বেল বটম’, ‘বচ্চন পান্ডে’, ‘পৃথ্বিরাজ’, এবং ‘রক্ষা বন্ধন’ বক্স অফিসে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।

তবে, অক্ষয়ের কর্মজীবনের সামগ্রিক সাফল্য মূলত তার অভিনয়ের মুক্তিতে নয়; বরং সামাজিক দায়বদ্ধতার দিকে তার অভিজ্ঞতা এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৮৯ সালে খনি দুর্ঘটনায় ৬৫ কর্মী উদ্ধারের সময় তার সহায়তা প্রদানে তিনি বিরাট ভূমিকা পালন করেন।

তাছাড়া, এখনো তার নতুন সিনেমা ‘কাঠপুতলি’ যেখানে তিনি একজন পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করছেন, ২ সেপ্টেম্বর Disney+Hotstar এ মুক্তি পাচ্ছে। অক্ষয় কুমার তার কর্মজীবন এবং সামাজিক সচেতনতার প্রতিফলন সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরেন এবং প্রায় ১৫০টি সিনেমায় কাজ করেছেন।

হাস্যরসাত্�্ক চরিত্র এবং বহুমুখী নায়ক

অক্ষয় কুমার তার সাফল্যময় বলিউড যাত্রায় অভিনয়ের বিভিন্ন ধারার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে দক্ষ। বিশেষ করে হাস্যরসাত্মক চরিত্রে তার স্বতঃস্ফূর্ত বিতর্ক ভক্তদের মন জয় করেছে। এর সুস্পষ্ট উদাহরণ হলো ‘হেরা ফেরি’ সিরিজ।

হেরা ফেরি সিরিজ

১৯৯৯ সালে চলচ্চিত্র ‘জানওয়ার’ দিয়ে পুনরায় জনপ্রিয়তায় ফিরে আসার পর অক্ষয় পেয়েছিলেন আরও বড় একটি ব্রেক, যা তাকে বলিউডের হাস্যরসাত্মক চরিত্রে এক মূলমান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ‘হেরা ফেরি’ (২০০০) তার প্রথম উল্লেখযোগ্য কমেডি ছবি ছিল। এই সিনেমাটিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন পরেশ রাওয়াল এবং সুনীল শেঠি। বিশেষ করে হেরার ফিরির ব্যাবো চরিত্রটি আজও ভক্তদের মনে রয়ে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  সিতা রামম: এক অসাধারণ প্রেমের গল্প

অন্যান্য কমেডি সিনেমা

‘হেরা ফেরি’র পরে অক্ষয় কুমার আরও অনেক জনপ্রিয় কমেডি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ‘ভুল ভুলাইয়া’ (২০০৭), ‘হাউসফুল’ সিরিজ (২০১০, ২০১২, ২০১৬ এবং ২০১৯)। এছাড়াও ‘গরম মসলার’ (২০০৫) জন্য তার কমেডি ভূমিকা হিসেবে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডও অর্জন করেছেন। প্রতিটি গল্পেই তিনি তার অভিনয় দক্ষতা দিয়ে নিজের হাস্যরসাত্মক চরিত্রকে অনন্যভাবে উপস্থাপন করেছেন। অক্ষয়ের প্রিয়তা শুধু হাস্যরসাত্মক নয়, বরং অন্যান্য ধারার চলচ্চিত্রে যেমন সামাজিক ইস্যু কেন্দ্রিক ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’ (২০১৭)-তেও তাকে বিশেষভাবে দেখা যায়।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button