পিরিয়ডের সময় কি মিলন করা যায়?

পিরিয়ডের সময়ে মিলন নিয়ে সমাজে বিভিন্ন ধরনের ধারণা ও সংশয় বিদ্যমান থাকলেও, বিজ্ঞান ও চিকিৎসকদের মতামত অনুযায়ী মাসিকের সময় মিলনে কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে, যেমন ক্র্যাম্প উপশম ও উচ্চ মানসিক আনন্দ প্রাপ্তি। তবে, রক্তপাত বিষয়ে সাধারণ অস্বস্তি ও সম্ভাব্য সংক্রমণের ঝুঁকি কীভাবে ম্যানেজ করা যায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।

ঋতুস্রাবের সময় যৌনতা সম্পর্কে যতটা মিথ রয়েছে, তার বিপরীতে বাস্তবিক তথ্য বিবেচনায় নিয়ে দেখা যায় যে পিরিয়ড সেক্স নিরাপদ এবং পারস্পরিক সম্মতিতে দু’জনের জন্য সুখকর হতে পারে। মাসিকের সময় মিলনে সঠিক জ্ঞান ও সাবধানতা অবলম্বনের মাধ্যমে এই অভ্যাসকে আরো স্বাচ্ছন্দ্যময় ও সুরক্ষিত করা সম্ভব।

Contents show

পিরিয়ডের সময় মিলনের ব্যাপারে সাধারণ ধারণা

পিরিয়ডের সময় মিলনের প্রসঙ্গটি অনেক সমাজে নানাবিধ মিশ্রিত প্রতিক্রিয়া এবং ট্যাবুর মুখোমুখি হয়। যৌনতা একটি প্রাকৃতিক মানবিক প্রক্রিয়া হলেও, পিরিয়ডের সময় এটি নিয়ে একধরনের সংকোচের আবহ বিরাজ করে। প্রাচীন সংস্কৃতিতে এই সময়ে মিলনের ধারণা প্রায়শই উপেক্ষিত বা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে। সামাজিক মানসিকতায় একে অপরিষ্কার অথবা অধর্ম হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। তবে, আধুনিক চিকিৎসকের পরামর্শ এবং বিজ্ঞান বলছে অন্য কথা।

পিরিয়ডের সময় যৌনতা: সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

আধুনিক সমাজে এই বিষয়ে ধারণা ক্রমেই পরিবর্তিত হচ্ছে। যেখানে সামাজিক মানসিকতা এখনো অনেক ক্ষেত্রে একে নীরবে নিষেধ করে যায়, সেখানে অধিকাংশ উন্মুক্ত সংস্কৃতি এটি নিয়ে খুলে আলোচনা করছে এবং একে একটি স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়া হিসেবে গ্রহণের পথ প্রশস্ত করছে।

চিকিৎসকদের পরামর্শ

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, পিরিয়ডের সময় মিলন শুধু নিরাপদই নয়, এটি বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা বয়ে আনে। ডক্টর সাহানা কেপি এবং তার মতো অন্যান্য চিকিৎসক জানান, এই সময় যৌন ক্রিয়াকলাপ হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যা মুড উন্নতি, ক্র্যাম্প হ্রাস এবং সাধারণ অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে। তবে, পিরিয়ড সময়ে যৌন সঙ্গমের আগে পরিষ্কারতা ও নিরাপত্তা বিবেচনা করা উচিত, সুষ্টু সচেতনতা অবলম্বনে যেকোনো রোগজীবাণু থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়।

আরও পড়ুনঃ  কি খেলে পায়খানা হবে?

স্বাস্থ্যগত দিক থেকে পরিস্থিতি

মাসিকের সময় যৌন সম্পর্কের প্রসঙ্গ তুলে ধরা যখন স্বাস্থ্যগত দিক থেকে করা হয়, তখন মাসিকের সুবিধা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক বিবেচনা দুটি প্রধান বিষয়কে মাথায় রাখা জরুরি। মাসিক চলাকালীন সময়ে শারীরিক সংস্পর্শের ফলে উপকারিতা এবং সামান্য ঝুঁকি উভয়ই রয়েছে।

পিরিয়ডের সময় যৌনতার সুবিধা

মাসিকের সময় যৌনতায় একটি বড় সুবিধা হলো, মাসিকের রক্ত প্রাকৃতিকভাবে লুব্রিকেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা মিলনকে আরও মসৃণ ও সহজ করে তোলে। এছাড়াও, মাসিকের সময় অর্গাজমের ফলে নিষ্ক্রিয় হওয়া এন্ডোরফিন শরীরের ব্যথা এবং ক্র্যাম্প উপশমে সাহায্য করতে পারে এবং এটি যৌন স্বাস্থ্যের জন্যও ইতিবাচক।

স্বাস্থ্য বিষয়ে বিবেচনা

অন্যদিকে, মাসিক সময় যৌনসম্পর্কের সময় কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়, যেমন যৌনবাহিত রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি। তাই, সুরক্ষিত যৌন চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং সব সময় পরিচ্ছন্নতা ও যথাযথ সুরক্ষা ব্যবহার করা আবশ্যক। সঠিক তথ্য ও সচেতনতা এই স্বাস্থ্য বিষয়ক বিবেচনাগুলির মোকাবিলা করতে সহায়তা করে।

মিলনের সময় রক্তপাতের ঝুঁকি

মিলনের সময় রক্তপাত বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যার মধ্যে মাসিকের রক্তপাত অন্যতম। বিশেষ করে মাসিকের সময়ে অনেকের রক্তপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

সাধারণ রক্তপাত এবং অসাধারণ পরিস্থিতি

সাধারণত, মিলনের সময় সামান্য রক্তপাত হতে পারে, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণ নয়। তবে, যদি রক্তপাত অতিরিক্ত হয় এবং প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত ঘটে, তবে এটি মিলনের সময় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত।

যদি রক্তপাত বেশি হয় তবে কি করবেন

  • সাথে সাথে মিলন বন্ধ করে দিন।
  • শান্ত থাকুন এবং অবস্থা পর্যবেক্ষণ করুন।
  • যদি রক্তপাত বন্ধ না হয় বা বারবার ঘটে, তবে চিকিৎসা পরামর্শ নিন।

রক্তপাতের ঝুঁকি বুঝতে এবং ঠিক সময়ে প্রতিকার নিতে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

মনস্তাত্ত্বিক দিক

পিরিয়ডের সময় যৌন মিলন নিয়ে আলোচনায় মানসিক প্রস্তুতি এবং সামাজিক ট্যাবুর ভূমিকা অপরিহার্য। এই বিষয়ে খোলামেলা কথা বলা এবং সম্মতি পাওয়া উভয় পার্টনারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

উভয় সঙ্গীর মানসিক প্রস্তুতি

অনেক সময় মিলনের প্রভাব যতটা শারীরিক, তার চেয়েও বেশি মানসিক। এজন্য উভয় পার্টনারের প্রস্তুতি এবং সম্মতি খুব জরুরি। যৌন মিলনের আগে একে অপরের সাথে মানসিক প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা করা সম্পর্ককে আরও মজবুত করে।

আরও পড়ুনঃ  ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং এবং প্রেগন্যান্সি টেস্টের সম্পর্ক

সম্পর্কের ওপর প্রভাব

যদিও সামাজিক ট্যাবু অনেক সময় এই ধরণের আলোচনাকে প্রভাবিত করে তবে উপযুক্ত মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে মিলনে অংশ নেওয়া সম্পর্ককে আরও ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে। এই প্রবণতা খুবই জরুরি কারণ এতে করে উভয়ের মধ্যে ভরসা ও বোঝাপড়ার বিকাশ ঘটে।

  • আলোচনা দ্বারা উভয় পার্টনারের মানসিক স্বস্তি বাড়ে
  • সামাজিক ট্যাবু অতিক্রমে সহায়ক
  • মিলনের প্রভাব সম্পর্কে আরও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা

এই ধরণের বোঝাপড়া সম্পর্ককে আরও গভীরভাবে মজবুত করে, যা উভয় পার্টনারের জন্যে মনের শান্তি বয়ে আনে।

সঠিক সুরক্ষা এবং কনডমের ব্যবহার

পিরিয়ডের সময় যৌন সম্পর্ক রক্ষা করার ক্ষেত্রে সঠিক সুরক্ষা ও কনডমের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যৌন স্বাস্থ্য রক্ষার্থে এবং অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে কনডমের ব্যবহার একটি প্রধান সুরক্ষা পদক্ষেপ।

যৌন স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্ব

সুরক্ষিত যৌন জীবনের জন্য যৌন স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ। কনডম ব্যবহার করলে যৌনবাহিত রোগসমূহ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও কনডম ব্যবহার সম্ভাব্য রক্তাক্ত অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ হতে রক্ষা করে।

কনডম ব্যবহার এবং করোনা ভাবনা

করোনা মহামারীর সময়ে, যখন সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি, তখন কনডমের ব্যবহার একটি অতিরিক্ত সুরক্ষা পরত যোগ করে থাকে। এটি না শুধুমাত্র যৌন স্বাস্থ্য সুরক্ষার একটি পদক্ষেপ, বরং অতিরিক্ত ভাইরাল বা ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমণ থেকে সঙ্গীদের নিরাপদ রাখার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

  • কনডম সবসময় সঠিকভাবে ব্যবহার করুন।
  • কনডমের প্যাকেট খোলার পূর্বে, এর মেয়াদ এবং ব্যবহারের নির্দেশনাগুলো যাচাই করুন।
  • যেকোনো প্রকার যৌন ক্রিয়াকলাপের সময় কনডম পরিধান করা উচিৎ।

সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে, আমরা আমাদের যৌন স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে পারি এবং সম্ভবত জীবনযাত্রায় অন্যান্য সুরক্ষা পদক্ষেপগুলিও বজায় রাখতে পারি।

এই সময় যৌনতার জন্য কিছু টিপস

পিরিয়ডের সময় যৌন জীবনে অন্তর্ভুক্তি ও সুখানুভূতি বাড়াতে যৌনতার টিপসআরামদায়ক মিলন অত্যন্ত জরুরী। একটি আনন্দময় ও স্বাচ্ছন্দ্যময় যৌন অভিজ্ঞতার জন্য উভয় পার্টনারের অনুভূতি ও সুবিধামতো সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থান বেছে নেওয়া উচিত।

আরামদায়ক অবস্থান

যে কোনো আরামদায়ক অবস্থান বেছে নেওয়ার আগে, উভয় পার্টনারকে একে অপরের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা উচিত। এটি যৌনতার অভিজ্ঞতাকে আরও বেশি আরামদায়ক ও সহজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, চামচ অবস্থানের মতো কিছু অবস্থান উভয় পার্টনারের জন্য আরামদায়ক হয়েছে বলে পরিচিত।

অনুভূতি এবং দুইজনের মতামত

পিরিয়ডের সময় যৌনতায় অংশগ্রহণের আগে, প্রতিটি পার্টনারের সম্মতি ও আগ্রহী হওয়া অপরিহার্য। একটি খোলামেলা ও পরস্পর সম্মানজনক আলোচনা যে কোনো অস্বস্তি কমাতে পারে ও যৌনতার অভিজ্ঞতায় আনতে পারে আনন্দ।

  • উভয় পার্টনারের পছন্দসই অবস্থান নির্বাচন করুন।
  • যৌনতায় আনন্দ পেতে সহজাত অনুভূতিগুলোকে প্রাধান্য দিন।
  • পিরিয়ডের সময় তাদের শরীর ও অনুভূতি সম্পর্কে খোলাখুলি কথা বলার পরিবেশ তৈরি করুন।
আরও পড়ুনঃ  প্রস্রাবের সাথে সাদা তরল বের হয় কেন?

একটি সুন্দর ও সহমর্মিতা-সংবলিত যৌন সম্পর্ক গড়ে তুলতে এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরী।

পিরিয়ডের সময় হওয়া সম্ভব অস্বস্তি

পিরিয়ডের সময় অনেক মেয়ে এবং নারী বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করে থাকেন। এই অস্বস্তির মূল কারণগুলি হলো পেটে ব্যথা, ক্র্যাম্প, এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। এই সময়ের যত্ন নিয়ে সচেতন থাকাও একটি বিশেষ দরকার।

শারীরিক অস্বস্তির কারণ

  • হরমোনাল পরিবর্তন
  • উচ্চ প্রসারিত গর্ভাশয়ের চাপ
  • শরীরে আয়রনের অভাব যা ক্লান্তি বোধ করায়

কিভাবে অস্বস্তি কমানো যায়

পিরিয়ড সময়ের যত্ন এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য নিচের উপায়গুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:

  1. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম।
  2. সঠিক পুষ্টি যুক্ত খাবার খাওয়া।
  3. ব্যথা নিরাময়ের জন্য গরম সেঁক দেওয়া।
  4. হালকা ব্যায়াম যেমন যোগ।
  5. প্রচুর পানি পান করা।

এই উপায়গুলি অস্বস্তি কমানোর পাশাপাশি সার্বিক শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতেও সহায়ক।

পিরিয়ডের সময় যৌনতার বৈজ্ঞানিক দিক

পিরিয়ড বা মাসিক চক্রের সময় শারীরিক ও বৈজ্ঞানিক বিবেচনা যৌন জীবনে অনেকাংশে প্রভাব ফেলে। এই সময়, পুরুষদের ৭-১০ দিনের জন্য কষ্ট হতে পারে, এবং মাসের এই কয়েকদিনে তারা প্রায় ৫৩ মিলিওন জুলস শক্তি সাশ্রয় করে। এদিকে, মাসিক চক্র স্ত্রীর দেহে গড়ে ৩০-৭০ মিলি রক্তের বৃদ্ধি ঘটায়, যা প্রজনন ক্রিয়ার স্বাভাবিক ধরণের একটি অংশ।

গবেষণায় পাওয়া তথ্য

বিজ্ঞানের দিক থেকে, মাসিকের সময় জরায়ুর স্তর এমনভাবে নির্মিত হয় যেন ভ্রূণের স্বাস্থ্য যাচাই করে এবং অপরিপক্ব বা মৃত ভ্রূণকে গ্রহণ করা হয় না। এটা স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী, কিন্তু বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষা, যেমন ইসলাম, মেন্স্ট্রুয়েশন ও প্রসবোত্তর সময়ে (সাধারণত শিশু জন্মানোর ৪০-৪৫ দিন পর) যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকার কথা বলে, কারণ এই সময়ে নারীরা সংক্রমণের জন্য বেশি প্রবণ হন।

নারী ও পুরুষের দীর্ঘকালীন সুখ ও সন্তানের নিরাপত্তার জন্য এই কষ্ট ভোগ করা হয়। তবে, যৌন জীবনে অপরিণত অভিব্যক্তি যেমন বিনা সম্মতিতে সম্পর্ক, হোমোসেক্সুয়ালিটি, এবং অনৈতিক আচরণের ফলে মেডিক্যাল জটিলতা এবং অনেক গুরুতর দণ্ড নির্ধারিত আছে। সমাজের প্রত্যাশা ও নিয়মের বলয়ে বাঁধা যৌন সম্পর্কগুলি বিভিন্ন সমস্যা ও গবেষণার আলো করে তুলেছে যা মনোযোগের প্রয়োজন।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button