ঢাকা জেলা – বাংলাদেশের রাজধানী অঞ্চল
ঢাকা জেলা বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এটি দেশের রাজধানী হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত এবং এখানেই বাংলাদেশের জনজীবনের মূল স্পন্দন ঘটে। ঢাকার অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য জেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানকার বাজার, আধুনিক শিল্প জোন, হাইটেক পার্ক এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলি দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখে।
বাংলাদেশের বৃহত্তম সংসদ ভবন, সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলির অবস্থান ঢাকাতেই। প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের জনসংখ্যায় পূর্ণ এই মহানগর এলাকায় নানান ধর্ম, বর্ণ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য একসাথে মিলে মিশে বাস করছে, যা ঢাকার জনজীবনের অনুরূপ। ঢাকার অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছে, যাতে আগামীদিনে এই জেলা আরও উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী হতে পারে।
ঢাকা জেলার ইতিহাস: একটি সংক্ষিপ্ত অবলোকন
ঢাকা জেলার ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং বহু যুগ ধরে এটি বিভিন্ন শাসকের প্রভাব দেখেছে। মুঘল, ব্রিটিশ এবং বাংলাদেশী স্বাধীনতা যুদ্ধ সবই ঢাকা জেলার ইতিহাসের অংশ। এই শহর একসময় মুঘল রাজধানী হিসেবে গড়ে উঠেছিল এবং ব্রিটিশ শাসনকালে বাণিজ্যিক ও শিক্ষাগত প্রাচুর্যের জন্য পরিচিতি লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রস্থল ছিল, যার প্রভাব আজও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।
পুরনো ঢাকা: ঐতিহাসিক পটভূমি
পুরনো ঢাকা ঢাকার ইতিহাসের অন্যতম গৌরবময় অধ্যায়। এখানে অবস্থিত আহসান মঞ্জিল যে সময়ে নবাবদের প্রাসাদ হিসাবে ব্যবহৃত হতো, তা একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। ১৮৫৯ থেকে ১৮৭২ সালের মধ্যে নির্মিত এই প্রাসাদটি এখন একটি জাদুঘর হিসেবে পরিচিত। পুরনো ঢাকার আরেকটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হল লালবাগ কেল্লা, এটি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। কেল্লাটিতে রয়েছে মুঘল-মাসজিদ, দীউয়ানি আম এবং হামামখানার মত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
ব্রিটিশ শাসন ও ঢাকা
ব্রিটিশ শাসন ঢাকা জেলার উন্নয়নের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। ১৯০৪ সালে লর্ড কার্জনের উদ্যেগে নির্মিত কার্জন হল প্রথমে টাউন হল হিসেবে পরিকল্পিত হয়, পরে এটি ঢাকা কলেজে পরিণত হয় এবং বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া এই সময়ে বঙ্গভবন ও গণভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলি নির্মাণ করা হয়, যা বর্তমানে যথাক্রমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির অফিসিয়াল বাসভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব
ঢাকার ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব ব্যাপক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা একটি প্রধান কেন্দ্রস্থল ছিল। এই শহরে অনেক নির্যাতনের ঘটনার পাশাপাশি অসম্ভব সাহসিকতা ও দৃঢ়তার নজিরও রয়েছে। বাহাদুর শাহ পার্ক বা ভিক্টোরিয়া পার্ক, যা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের শহীদদের স্মরণে পুনঃনির্মিত হয়েছিল, এখনো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বুকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে। এই ইতিহাস ঢাকা জেলার সংস্কৃতি ও জনজীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং এটি আজও মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবোধ ও গর্ব জাগিয়ে রাখে।
ঢাকা জেলার ভৌগোলিক পরিচিতি
ঢাকা জেলা বাংলাদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু। ঢাকার ভৌগোলিক অবস্থান তাকে দেশের অন্যতম প্রধান জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত এই জেলা আয়তনে মোট ১,৫৫০ বর্গকিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে।
অবস্থান ও সীমানা
ঢাকা জেলা ভৌগোলিকভাবে ২৩.৭৬৩৮৯° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০.৩৮৮৮৯° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এর পশ্চিমে মানিকগঞ্জ, পূর্বে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর, উত্তরে গাজীপুর এবং দক্ষিণে মুন্সীগঞ্জ জেলা অবস্থান করছে। এ জেলার মোট জনসংখ্যা ২০২১ সালে ছিল ২,০০,৫১,৩৬১ জন, এ কারণে জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১৩,০০০ জন।
প্রধান নদী ও জলাশয়
ঢাকার নদী ও জলাশয়গুলো এই জেলার জীবনযাত্রার সাথে গভীরভাবে যুক্ত। ঢাকার প্রধান নদী হলো বুড়িগঙ্গা নদী, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার পানি মান নিয়ে বেশ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও তুরাগ, বালু এবং বংশী নদী প্রধান নদীর মধ্যে অন্যতম।
ঢাকার নদীগুলো কেবল ঐতিহাসিকভাবে নয়, বর্তমানেও অর্থনীতি এবং জীবিকার প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করছে। বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ঢাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক কেন্দ্র।
ঢাকা জেলার প্রশাসনিক কাঠামো
ঢাকা জেলা বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক বিভাগ হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলটি তার উন্নত প্রশাসনিক কাঠামোর জন্যও বিখ্যাত। বিভিন্ন পর্যায়ের লোকাল সরকার ব্যবস্থার সাহায্যে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়, যা জনসেবায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
উপজেলা ও ইউনিয়ন
ঢাকার প্রশাসনিক বিভাগ অধীনস্থ বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে বিভক্ত। উপজেলাগুলো হলো প্রশাসনিক কাঠামোর অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। প্রতিটি উপজেলায় রয়েছে বেশ কিছু ইউনিয়ন, যা আরও সুক্ষ্মভাবে সেবাসমূহ জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়। ঢাকার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন স্থানীয় সরকার কর্মচারীদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে।
স্থানীয় সরকার সংস্থা
ঢাকার প্রশাসনিক বিভাগে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার সংস্থা সক্রিয়ভাবে কাজ করে। এখানকার স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা জনগণের সমস্যার দ্রুত সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। স্থানীয় সরকার সংস্থার কেন্দ্রে উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে, যা লোকাল সরকার ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। এ সকল সংস্থা জনগণের চাহিদা পূরণে নানা প্রকল্প ও সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
অর্থনীতি ও শিল্পে ঢাকা জেলার অবদান
ঢাকা জেলা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ধরে রেখেছে। দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) ৪০% অবদান রাখে ঢাকার অর্থনীতি। দ্রুত শিল্পায়িত হওয়ার ফলে এখানে তৈরি হয়েছে নানা ধরনের ব্যবসায়িক সুযোগ।
বানিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে ঢাকা
ঢাকা একটি বড় বানিজ্যিক কেন্দ্র যা দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পকারখানার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। ঢাকার স্টক এক্সচেঞ্জ শেয়ারের পরিমাণ প্রায় $৪৮ বিলিয়ন ডলার। ঢাকার অর্থনীতির মূল স্তম্ভ হল বাণিজ্যিক খাত, যা সামগ্রিকভাবে দেশের বানিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
হাইটেক পার্ক ও শিল্প জোন
হাইটেক পার্ক এবং শিল্প জোন ঢাকা জেলার অর্থনৈতিক বিকাশে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ফার্মাসিউটিক্যাল ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যথাক্রমে ১৫.৬৮% এবং ৭.২৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই খাতের অবদান একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে তেমনই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে বেগবান করেছে।
শিক্ষা ব্যবস্থার অবকাঠামো ঢাকা জেলায়
ঢাকার শিক্ষা বিশেষ করে স্কুল এবং কলেজের সংখ্যা এবং মান উন্নয়নে বেশ শক্তিশালী অবকাঠামো গড়ে উঠেছে।
স্কুল ও কলেজের সংখ্যা
ঢাকা জেলায় বর্তমানে মোট ১,৫৫৭ টি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬২টি বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল বিভিন্ন ভবন সম্প্রসারণ করেছে এবং ৫৪টি স্কুল বর্তমানে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) প্রায় ৫৩০ কোটি টাকা সহায়তা প্রদান করেছে শিক্ষা পরিবেশের উন্নয়নে ছয়টি মাদ্রাসার মধ্যে। এছাড়া, আটটি উপজেলা প্রতিটাতে একটি করে কারিগরি স্কুল ও কলেজ স্থাপন করা হয়েছে এবং আরও তিনটি উপজেলার উন্নয়ন কাজ চলছে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান
ঢাকা জেলায় বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং প্রযুক্তি উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দশটি সরকারি কলেজে বিজ্ঞান শিক্ষার সীমানা সম্প্রসারিত হয়েছে এবং আরও ১৭টি কলেজে এই কাজ চলমান। মডেল স্কুলে রূপান্তর করা হয়েছে সকল বাছাইকৃত বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলের। এছাড়া, সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলিতে নতুন ভবন নির্মাণ এবং মেরামত কাজও চালু রয়েছে, যা ঢাকার শিক্ষা অবকাঠামোকে আধুনিক ও প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করতে সহায়তা করে।
সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা ঢাকা জেলায়
ঢাকা জেলার সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এবং সমৃদ্ধ। এখানে বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায়। ঢাকার সংস্কৃতি এর মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে, এবং এটি সমস্ত শ্রেণী ও শ্রেনীর মানুষের জন্য উৎসাহ এবং উদ্দীপনা নিয়ে আসে।
খাবারের বৈচিত্র্য
ঢাকা জেলার খাবারের বৈচিত্র্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এখানে স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ধরনের খাবারও পাওয়া যায়। ঢাকা শহরের বিখ্যাত খাবারের মধ্যে রয়েছে বিরিয়ানি, হালিম, বাখরখানি, মুগলাই পরোটা ও নানা ধরণের স্ট্রিট ফুড। ঢাকার খাবারের বৈচিত্র্য এখানকার জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ এবং এটি স্থানীয় অধিবাসী ও পর্যটকদের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয়।
উৎসব ও অনুষ্ঠান
ঢাকা জেলার উৎসব ও অনুষ্ঠানগুলি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে বছরজুড়েই নানা ধরণের উৎসব পালিত হয়। পোহেলা বৈশাখ, ঈদ উল-ফিতর এবং দুর্গা পূজা প্রধান উৎসব হিসেবে পালিত হয়। পোহেলা বৈশাখে ঢাকার রাস্তা ও অলিগলি মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী উৎসবের আয়োজন করা হয়, যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে। ঈদ উল-ফিতর এবং দুর্গা পূজা ধর্মীয় উৎসব হলেও এখানে নামাজের পাশাপাশি খাবার এবং পোশাকের বৈচিত্র্যকে ঘিরে রমরমা বেচাকেনা হয়ে থাকে। এসব উৎসব ঢাকার সংস্কৃতি এবং এখানকার মানুষের জীবনকে আচ্ছাদিত করে রাখে।
ঢাকার প্রধান দর্শনীয় স্থান
ঢাকা শহরটি তার ঐতিহাসিক এবং আধুনিক আকর্ষণীয় স্থানগুলোর জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। এখানে লালবাগ কেল্লা এবং জাতীয় সংসদ ভবনের মতো উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য অপরিহার্য গন্তব্য।
লালবাগ কেল্লা
ঢাকার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে লালবাগ কেল্লা একটি উল্লেখযোগ্য নাম। এটি মুঘল সাম্রাজ্যের এক অসাধারণ নিদর্শন যা মুঘল রাজপুত্র শায়েস্তা খাঁ দ্বারা নির্মিত হয়। লালবাগ কেল্লা তার মুঘল আর্কিটেকচারের দৃষ্টিনন্দন উদাহরণ হিসেবে পরিচিত, যেখানে রয়েছে মূল ফটক, মসজিদ এবং অন্যান্য পাব্লিক বিল্ডিং।
জাতীয় সংসদ ভবন
আধুনিক স্থাপত্যকলা প্রেমীদের জন্য জাতীয় সংসদ ভবন অবশ্যই একটি দর্শনীয় স্থান। এটি বিখ্যাত স্থপতি লুই কানের নকশা যা অভিনব নির্দিষ্টকরণ এবং স্থাপত্য নৈপুণ্যের এক অতুলনীয় উদাহরণ। জাতীয় সংসদ ভবনটি তার মনোমুগ্ধকর স্থাপত্য এবং সুন্দর পরিবেশের জন্য পরিচিত, যা প্রতিদিন শত শত পর্যটক আকৃষ্ট করে।
উপরোক্ত স্থানগুলি ছাড়াও ঢাকা শহরে আরও অনেক সুন্দর এবং ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে যা পর্যটকদের মোহিত করে।
পরিবহন ব্যবস্থা ও যোগাযোগ
ঢাকা জেলার পরিবহন ব্যবস্থা দেশের অন্যতম সেরা। এটি বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকায় সংযোগ স্থাপনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা অগ্রগতি লাভ করায় যন্ত্র চালিত যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পরিবহন খরচ তুলনামূলক ভাবে হ্রাস পেয়েছে।
সড়কপথের গুরুত্ব
ঢাকার মধ্যে সড়কপথ অসাধারণ গুরুত্ব বহন করে। শহরের প্রধান সড়কগুলি প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সহায়তা করে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক ঢাকা থেকে ছড়িয়ে তার শাখা প্রশাখা দেশের অন্যান্য এলাকায় পৌঁছে দেয়। সড়কপথের উন্নতির জন্য স্থানান্তর প্রক্রিয়াও দ্রুত এবং সহজ হয়ে উঠেছে। এই কারণে ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরণকে সহজ করেছে।
রেল ও বিমান যোগাযোগ
ঢাকা জেলার রেল যোগাযোগ দেশের অন্যতম প্রাচীন এবং কার্যকর পরিবহন মাধ্যম। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এবং মালামাল রেলপথে পরিবহন করা হয়। একাধিক আন্তঃনগর ট্রেন এবং লোকাল ট্রেন ঢাকা শহরের সাথে অন্যান্য শহরের তন্মধ্যে চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং সিলেটের সাথে সংযোগ স্থাপন করে।
এছাড়াও, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উড়ান এখানে প্রতিদিন যাত্রী পরিবহন করে। বিমান সুবিধা শক্তিশালী করনের ফলে, ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে এবং আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ আরো সহজ হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ঢাকা জেলায়
ঢাকা জেলার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা দেশের সর্বোচ্চ মানের অন্যতম প্রদানকারী। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলি একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা সরবরাহ করে। এই জেলার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উন্নত করে তোলার জন্য ধারাবাহিক ও সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল
ঢাকা শহরে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU) যা দেশের বৃহত্তম শিশুরোগ হেমাটোলজি কেন্দ্র। এছাড়া, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সেবা প্রদান করে। মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ৫০০ বেডের সাধারণ হাসপাতাল হিসেবে পূর্ব ঢাকার জনবহুল এলাকায় সেবা প্রদান করে। প্রাথমিক এবং জরুরী সেবা প্রদানের জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং মিটফোর্ড হাসপাতাল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র
ঢাকার প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে থাকে। জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে, যেখানে ২০২৪-২০২৫ সালের ভেতরে ১০০% সূচকিত সেবা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই, শিশু মৃত্যুহার ২১ প্রতি ১০০০ জীবিত জন্ম থেকে কমিয়ে ১৫৮ প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মে উন্নীত করা হয়েছে। উক্ত সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবদান অনস্বীকার্য।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলি বিশেষ করে মাতৃ ও শিশুর স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধের গুরুত্ব, এবং প্রতিকারমূলক চিকিৎসায় কৃতিত্বপূর্ণ কাজ করছে। এই কেন্দ্রগুলোতে প্রচুর নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদান করায়, ঢাকার স্বাস্থ্যসেবা মান দেশে এক অনন্য স্থান অর্জন করেছে।
FAQ
ঢাকা জেলা বাংলাদেশে কোথায় অবস্থিত?
ঢাকা জেলা বাংলাদেশে দেশের মধ্যভাগে অবস্থিত। এর প্রধান জলাশয় হলো বুড়িগঙ্গা নদী, যা ঢাকার ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ঢাকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
ঢাকা এক সময়ের মুঘল রাজধানী এবং ব্রিটিশ শাসন কালে বাণিজ্যিক ও শিক্ষাগত প্রাচুর্যের জন্য পরিচিতি পায়। মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা একটি প্রধান কেন্দ্রস্থল ছিল, যার প্রভাব আজও ঢাকার সংস্কৃতি ও জনজীবনে লক্ষ্য করা যায়।
ঢাকা জেলার প্রশাসনিক কাঠামো কী রকম?
ঢাকা জেলা বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে বিভক্ত। এখানে স্থানীয় সরকারের কাঠামো বেশ সমৃদ্ধ, যা জনগণের সেবায় কার্যকর ভূমিকা রাখে।
ঢাকায় কোন প্রধান নদী প্রবাহিত হয়?
ঢাকার প্রধান নদী হলো বুড়িগঙ্গা নদী, যা শহরের ইতিহাস ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ঢাকা জেলার অর্থনৈতিক অবদান কী?
ঢাকা জেলা বাংলাদেশের প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র, যেখানে হাইটেক পার্ক এবং শিল্প জোন অর্থনৈতিক বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
ঢাকায় শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন?
ঢাকা জেলায় শিক্ষার হার সবচেয়ে উচ্চ, এখানে বহু স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নে ঢাকা দেশের শীর্ষে।
ঢাকার প্রধান উৎসব কী কী?
ঢাকার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উল্লেখযোগ্য, বিভিন্ন ধরণের খাবার এবং উৎসব এখানকার জীবনযাত্রার অংশ। পোহেলা বৈশাখ, ঈদ উল-ফিতর এবং দুর্গা পূজা প্রধান উৎসব।
ঢাকায় কোন প্রধান দর্শনীয় স্থান রয়েছে?
ঢাকায় অনেক ঐতিহাসিক ও আধুনিক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে। লালবাগ কেল্লা মুঘল সাম্রাজ্যের এক অনন্য স্মারক এবং জাতীয় সংসদ ভবন আধুনিক স্থাপত্যের এক নজির।
ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা কেমন?
ঢাকা জেলার পরিবহনের হৃদয়স্থলী, যেখানে সড়ক, রেল এবং বিমান সংযোগের মাধ্যমে সারা দেশের সাথে সংযোগ স্থাপিত হয়। বিশেষ করে, ঢাকা বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক গেটওয়ের কাজ করে।
ঢাকায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা কেমন?
ঢাকা জেলায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে, যা এখানে জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে।