মাহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি
১৯৮১ সালের ৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করা মাহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতীয় ক্রিকেটের এক অবিস্মরণীয় নাম। এমএস ধোনি, যাকে ক্রিকেট ভক্তরা ভালোবেসে ডাকেন, তার ক্যারিয়ার জুড়ে ব্যাটিং ও উইকেটকিপিং দক্ষতার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। টেস্টে ৯০টি ম্যাচ খেলে ৪,৮৭৬ রান স্কোর করা ধোনি টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত, যেখানে তার ব্যাটিং গড় ৩৮.০৯।
মাহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতের একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে তিনটি ভিন্ন আইসিসি ট্রফি (২০০৭ সালের আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপ, ২০১১ সালের আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ এবং ২০১৩ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) জিতেছেন। তার নিখুঁত কৌশল ও নেতৃত্বের গুণাবলী ধোনিকে ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি হিসেবে স্থান দিয়েছে। ওডিআইতে ৩৫০ ম্যাচ খেলে ৫০.৫৭ গড়ে রান এবং টি২০আইতে ৯৮ ম্যাচে ৩৭.৬০ গড়ে রান করে ধোনি প্রমাণ করেছেন যে তিনি এক অসাধারণ ব্যাটসম্যান।
মাহেন্দ্র সিং ধোনির প্রারম্ভিক জীবন
মাহেন্দ্র সিং ধোনি, যিনি ক্যাপ্টেন কুল নামে পরিচিত, জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮১ সালের ৭ জুলাই, রাঁচিতে। ধোনির প্রারম্ভিক জীবন ছিল খুব সাধারণ এবং তার পরিবার চলত একসাধারণ মধ্যবিত্ত জীবনে। তার বাবা পান সিং ছিলেন এক জুনিয়র ম্যানেজমেন্ট পদে কাজ করতেন।
শৈশব এবং পরিবার
ধোনির পরিবার ছিল সহজ-সরল এবং সহানুভূতির মধ্যে গড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকেই ধোনির খেলাধুলার প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল। ধোনির পরিবার তার এই আগ্রহকে সবসময় সমর্থন করেছে, যা ধোনির উন্নতিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
শিক্ষা এবং শুরুর দিনগুলি
ধোনির শিক্ষা জীবনের শুরু থেকে তার মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলী ছিল। ধোনির শিক্ষা জীবনে তিনি শারীরিক শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি কমান্ডো ক্রিকেট ক্লাবে ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত উইকেট-কিপার হিসেবে খেলা শুরু করেন, যা তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের প্রথম দিকের বড় মাইলফলক ছিল। ২০০৩ থেকে ২০০৪ সময়কালে ধোনি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নাম করেন এবং ভিনু মানকাদ ট্রফির জন্য নির্বাচিত হন। ধোনির শিক্ষা এবং প্রাথমিক দিনগুলির অভিজ্ঞতা তাকে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলেছে।
ধোনির ক্রিকেটীয় যাত্রা
মাহেন্দ্র সিং ধোনির ক্রিকেট যাত্রা শুরু হয় এক বিশেষ ধরণের ক্রীড়াশৈলী নিয়ে, যা তাকে দ্রুত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ে যায়। ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়। এই সময়কালে, ধোনি তার ব্যাটিং এবং উইকেটকীপিং পারফরম্যান্সের মাধ্যমে নজর কাড়ে।
প্রথম দিকের সাফল্যগুলি
ধোনির প্রথম সাফল্য আসে ২০০৪-২০০৫ মরসুমে, যখন তিনি নিজের গভীর ব্যাটিং দক্ষতা প্রদর্শন করে দলকে শক্তিশালী ভিত্তি দেন। বিশেষ করে, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অভিষেকের পর ধোনি দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে ক্রিকেট বিশ্বের নজরে আসেন। সেই সময়ের তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস তাকে দ্রুত জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক
২০০৫ সালের ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার অভিষেক টেস্ট ম্যাচটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ধোনির সাহসী ও নির্ভীক ব্যাটিং তাকে দ্রুত পরিচিতি দেয়। তার কিপিং দক্ষতাও তাকে দলের অপরিহার্য অংশ করে তুলেছিল। ধোনির আন্তর্জাতিক অভিষেকটি ধোনির ক্রিকেট যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠেছিল, যা তাকে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে অবস্থান নিশ্চিত করে।
মহেন্দ্র সিং ধোনির অধিনায়কত্ব এবং সাফল্য
ধোনির অধিনায়কত্ব ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তার নেতৃত্বে ভারত ২০০৭ টি২০ বিশ্বকাপ, ২০১১ ওডিআই বিশ্বকাপ, এবং ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে। এই সাফল্যগুলি ধোনির সাফল্যকে নতুন করে প্রমাণ করে, যা তাকে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ উপাধিতে ভূষিত করে।
ধোনির নেতৃত্বশৈলী প্রথাগত অধিনায়কদের থেকে ভিন্ন। গ্রেগ চ্যাপেল ধোনির নতুনত্বপূর্ণ নেতৃত্ব বৈশিষ্ট্য এবং যুবা ক্রীড়াবিদদের সাথে তার প্রভাবিতকা আলোচনা করেছেন। ধোনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনার মাধ্যমে অন্যান্য ক্রিকেট অধিনায়ক থেকে আলাদা হন।
ধোনির ঠাণ্ডা মাথা এবং উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে স্থৈর্য বজায় রাখার ক্ষমতা অনেকবার প্রমাণিত হয়েছে, যেমন একটি ম্যাচে যেখানে মাত্র ১০ রান প্রয়োজন ছিল জয়ের জন্য। তখন মাঠে থাকা রোহিত শর্মাকে ধোনি বলেছিলেন, “উৎসব না করে শান্ত থাকো”। এটি ধোনির বিনয় এবং প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি উদাহরণ।
২০০৮ সালে, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ধোনির অধিনায়কত্বে ভারত ১৬০ রানে এগিয়ে ছিল, যা ধোনির ১৫তম ওডিআই অধিনায়কের হিসাবে চিহ্নিত হয়। এই বিজয়ে ধোনির সাফল্য আরও অধিক প্রশংসা পায়।
‘MS Dhoni: The Untold Story’ ধোনির জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, তার স্কুল দল থেকে ভারতীয় জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার গল্প এবং ২০১১ বিশ্বকাপের উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালের চিত্র তুলে ধরে। এই চলচ্চিত্রটি ধোনির জীবনের বিভিন্ন পর্যায় এবং তার ওপর আলোচিত বিভিন্ন দিকগুলি প্রদর্শন করে।
টেস্ট ক্রিকেটে ধোনির অবদান
টেস্ট ক্রিকেটে ধোনি তাঁর অসাধারণ নেতৃত্ব, ব্যাটিং এবং উইকেটকিপিং দক্ষতার কারণে এক অনন্য স্থান অধিকার করেন। মাহেন্দ্র সিং ধোনি ২০০৮ সালে ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় ক্রিকেট দল বহু সাফল্য অর্জন করে।
মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে সাফল্য
টেস্ট ক্রিকেট সাফল্য অর্জনে মাহেন্দ্র সিং ধোনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ২০০৯ সালে তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো আইসিসি টেস্ট র্যাংকিং-এ এক নম্বর স্থান অধিকার করে। ধোনি নেতৃত্বে ভারতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য হিসেবে ২০০৫ সালে সর্বোচ্চ ১৪৮ রান করেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় দল একাধিক স্মরণীয় জয় পায়।
- ধোনি ক্রিকেটে ৯০টি টেস্ট ম্যাচে ৬টি শতরান, ৩৩টি অর্ধশতরান, ২৫৬টি ক্যাচ, ও ৩৮টি স্ট্যাম্পিং—মোট ৪৮৭৬ রান করেছেন।
- টুস্টে সাফল্যের জন্য ধোনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবান ইনিংস খেলে দলকে বিজয়ে নেতৃত্ব দেন।
- ধোনির অধিনায়কত্বে ভারতের টেস্ট দল তার সেরা ফর্মে ছিল এবং অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে পরাজিত করেছে।
টেস্ট থেকে অবসর
ধোনির অবসর টেস্ট ক্রিকেটে ধোনির অসামান্য ক্যারিয়ার এবং নেতৃত্বের শেষে এক আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। ২০১৪ সালের অস্ট্রেলিয়ার সফরের পর, ধোনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন, যা ভারতীয় ক্রিকেটে এক যুগের সমাপ্তি ঘটায়। টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরও, ধোনির অবদান এবং তাঁর স্মরণীয় মুহূর্তগুলি আজও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং অনুপ্রেরণামূলক।
ওডিআই ক্রিকেটে ধোনির প্রভাব
মাহেন্দ্র সিং ধোনি শুধু তার দক্ষতা ও নেতৃত্ব দিয়ে ওডিআই ক্রিকেটে অমর হয়ে আছেন তা নয়, তার অসাধারণ ফিনিশিং ক্ষমতা তাকে একটি বিখ্যাত বেক্টি করে তুলেছে। ধোনির ব্যাটিং স্টাইল এবং নিখুঁত ফিনিশিং ক্ষমতা তাকে ওডিআই ক্রিকেটের এক আইকন করে তোলে। তার নেতৃত্বে ভারতীয় দল একাধিক ঐতিহাসিক মুহূর্তে জয় লাভ করেছে।
বিশ্বকাপ এবং অন্যান্য টুর্নামেন্ট
বিশ্বকাপ জয়ের কথা বলতে গেলে, ধোনির নেতৃত্বে ২০১১ সালে ভারতীয় দল ক্রিকেটের সবথেকে বড় শিরোপা জিতে নিয়েছিল। এই বিশ্বকাপ ফাইনালে ধোনির ইনিংস ছিল ৯১* রানের, যা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে আছে। ২০০৭ সালের আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপ এবং ২০১৩ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের ক্ষেত্রে ধোনির নেতৃত্বের গুন এবং স্ট্র্যাটেজিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের কৌশল খুবই প্রশংসিত হয়েছে। তার মাধ্যমে ভারতীয় দল এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।
ধোনির অসাধারণ ইনিংস
ধোনির ইনিংস নিয়ে আলোচনা করলে, ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি একদিনের ম্যাচে তার ১৮৩* রানের ইনিংস আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। এই ইনিংসটি এখনও পর্যন্ত ওডিআই ক্রিকেটে কোনও উইকেটকিপারের সর্বোচ্চ সংগ্রহ হয়ে আছে। এছাড়াও, ধোনির নেতৃত্বে অসংখ্য ম্যাচে তিনি অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে গেছেন। ধোনির ইনিংস বিশ্বকাপ, টি২০ এবং অন্যান্য সিরিজেও অনেকবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
টি২০ ক্রিকেটে ধোনির ভূমিকা
টি২০ ক্রিকেটের জগতে মাহেন্দ্র সিং ধোনির প্রভাব অনস্বীকার্য। ধোনির নেতৃত্বে ভারত ২০০৭ সালে প্রথম আইসিসি বিশ্ব টোয়েন্টি২০ জয় করে, যা টি২০ ফরম্যাটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়েছিল। ধোনির টি২০ ভূমিকা ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে আজও স্বচ্ছ।
আইসিসি বিশ্ব টোয়েন্টি২০
২০০৭ সালে, ধোনির নেতৃত্বে ভারত আইসিসি বিশ্ব টোয়েন্টি২০-এর শিরোপা জিতে সারা বিশ্বকে অবাক করেছে। তার কৌশলগত চিন্তা এবং ঠান্ডা মাথার অধিনায়কত্ব ভারতকে সেই গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য করেছিল। ধোনির নেতৃত্বে ভারতীয় দলটি মাত্র প্রথমবারের মতো বিশ্ব টোয়েন্টি২০ খেলতে নেমেই বিশাল সাফল্য অর্জন করে।
টি২০-তে সংবাদ শিরোনাম
ধোনির টি২০ ক্রিকেট জীবনে অনেক মুহূর্ত এসেছে যা সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। বিশ্ব টোয়েন্টি২০ জয়ের পর থেকে তার নেতৃত্বে ভারতীয় দল অসংখ্য স্মরণীয় ম্যাচ খেলেছে। ধোনির টি২০ ভূমিকার মধ্যে রয়েছে তার উল্লেখযোগ্য কিছু ইনিংস এবং ম্যাচ উইনিং স্ট্রাটেজিজ যা প্রতিপক্ষ দলগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধোনির এইসব অবদান টি২০ ক্রিকেটকে আরও রোমাঞ্চকর এবং জনপ্রিয় করে তুলেছে।
আইপিএল-এ ধোনির যাত্রা
মাহেন্দ্র সিং ধোনি নিজের এক অসাধারণ ক্রীড়া দক্ষতার জন্য ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে পরিচিত। আইপিএল-এ ধোনির যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে, যখন তিনি চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক হিসেবে দলটির নেতৃত্ব দেন। ধোনির নেতৃত্বে চেন্নাই সুপার কিংস দলটি তিনবার আইপিএল চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে।
ধোনি আইপিএলে শুরু থেকেই নিজের নেতৃত্বর গুণাবলী এবং ক্রিকেট জ্ঞানের প্রদর্শন করেছেন। তাঁর অধিনায়কত্বে চেন্নাই সুপার কিংস দলের উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে বিভিন্ন সময়ে। ধোনি আইপিএলে মোট ১৬৫ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যার মধ্যে ১০০ টি ম্যাচ তাঁর দল জিতেছে, যা তাকে সবচেয়ে সফল অধিনায়কদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ধোনির আইপিএল ক্যারিয়ারে তার ব্যাটিং এবং উইকেটকিপিং দক্ষতা দুটোই ছিল ক্লাসের শ্রেষ্ঠ। ধোনি আইপিএল-এ মোট ৪,০০০ এর বেশি রান করেছেন, এবং উইকেটকিপার হিসেবে অনেক ক্যাচ এবং স্টাম্পিং করেছেন। শুধু তাই নয়, ধোনির হাইলাইটেড ফিনিশিং স্টাইল তাঁকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে।
স্বাভাবিকভাবেই, ধোনি আইপিএল মানেই এক রোমাঞ্চকর জার্নি, যেখানে প্রতিবারই দর্শকদের নতুন কিছু দেখানোর সুযোগ থাকে। ধোনির প্রত্যাবর্তন এবং নেতৃত্ব এখনও চেন্নাই সুপার কিংসের ভক্তদের মনে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। তাঁর এই ইতিহাসে আমরা প্রতিফলন দেখতে পাই এক উজ্জ্বল ক্রীড়াবিশ্বের।
মাহেন্দ্র সিং ধোনির বিশেষ দক্ষতা
মাহেন্দ্র সিং ধোনি, ভারতীয় ক্রিকেটের এক অমূল্য নক্ষত্র, তাঁর বিশেষ দক্ষতার জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। তাঁর সেরা পারফরম্যান্সের পেছনে রয়েছে তার বিশাল অভিজ্ঞতা এবং চমৎকার কৌশল। ধোনির দক্ষতা নিঃসন্দেহে তাকে অনন্য করেছে।
ধোনির উইকেটকিপিং
ধোনির উইকেটকীপিং সবসময়ই অভূতপূর্ব এবং চমকপ্রদ। ধোনি অত্যন্ত ক্ষীপ্র এবং দক্ষ উইকেটকিপার হিসেবে পরিচিত। তার দ্রুতগামী স্টাম্পিং এবং আধুনিক দিনের ক্রিকেটে অসাধারণ রান আউট বিভিন্ন ম্যাচে তাকে আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে। উইকেটের পেছনে তার অবিশ্বাস্য তৎপরতা বারবার সাক্ষ্য দিয়েছে ধোনির দক্ষতা কতটা উচ্চশ্রেণীর। ধোনির প্রত্যেকটি ম্যাচে উইকেটকিপিং তাঁর প্রজ্ঞা এবং মেধার প্রকৃত প্রতিফলন।
ধোনির ব্যাটিং এবং ফিনিশিং স্টাইল
ধোনির ফিনিশিং স্টাইল অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ব্যাট হাতে মাঠে নামলে নিজের ক্রিকেট বুদ্ধিমত্তা এবং সতর্কতার সাথে খেলা শেষ করার ক্ষমতা দিয়ে ধোনি বহুবার ভারতীয় দলের সম্মান ফিরিয়ে এনেছেন। ধোনি একটি নাটকীয় পরিস্থিতিতেও ঠান্ডা মাথায় থেকে ফিনিশিং করতে পারদর্শী। ২০১১ বিশ্বকাপে তাঁর অপরাজিত ৯১ রানের ইনিংস আজও স্মরণীয়। ধোনির ব্যাটিং স্টাইল এবং ফিনিশিং ক্ষমতাই তাকে সবার থেকে আলাদা করে তুলেছে।
ধোনির পুরস্কার ও সম্মাননা
মাহেন্দ্র সিং ধোনি তার অসাধারণ ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারের জন্য অনেকগুলি সম্মাননা ও পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে আইসিসি ওডিআই প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার পুরস্কার লাভ করেন। ধোনির পুরস্কার তালিকায় রয়েছে পদ্ম শ্রী এবং রাজীব গান্ধী খেল রত্ন, যা তাকে ভারতের সর্বোচ্চ ক্রীড়া সম্মাননায় ভূষিত করেছে।
ধোনির সম্মাননা তালিকা আরও সমৃদ্ধ হয়েছে যখন তিনি পদ্মভূষণ পেলেন, যা ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা। ২০১৮ সালে, এই পুরস্কারটি তাকে অপূর্ব ক্রিকেটীয় অবদানের জন্য প্রদান করা হয়।
- ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে আইসিসি ওডিআই প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার পুরস্কার
- রাজীব গান্ধী খেল রত্ন
- পদ্ম শ্রী
- পদ্মভূষণ
ধোনি আইপিএল-এ চেন্নাই সুপার কিংস দলের অধিনায়ক হিসেবে বহুবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে অনন্য অর্জন করেছেন। ধোনির নেতৃত্বে, দলটি ২০১০, ২০১১, ২০১৮ এবং ২০২১ সালে আইপিএল ট্রফি জিতে সারা বিশ্বের কাছে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে।
ধোনির সম্মাননা জয়ী ইতিহাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুধুমাত্র তার রান করার ক্ষমতার কারণে নয়, তার অসামান্য নেতৃত্ব ও সাঙ্ঘাতিক উইকেটকিপিং পারদর্শিতার জন্যও একটি অনুপম উদাহরণ।
ধোনির পুরস্কার ও সম্মাননা বিশ্বব্যাপী ক্রিকেট অনুরাগীদের কাছে তাকে আরও বিশেষ করে তুলেছে। খেলার প্রতি তার অবিরাম নিষ্ঠা ও ভূমিকায় তিনি অনুপ্রাণিত করেছেন ক্রীড়াজগতের নবীন প্রতিভাদের।
মাহেন্দ্র সিং ধোনির ব্যক্তি জীबন
মাহেন্দ্র সিং ধোনি কেবল মাঠের মধ্যে নয়, মাঠের বাইরে তার নানা বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে অসাধারণ এক জীবন যাপন করছেন। ধোনির ব্যক্তি জীবন সম্পর্কে জানা যায় যে তিনি সবসময় তার পরিবার ও শখ নিয়ে সময় কাটাতে পছন্দ করেন।
ব্যক্তিগত পছন্দ এবং শখ
ধোনির ব্যক্তি জীবনে তার বিভিন্ন শখ রয়েছে। বাইক রাইডিং থেকে ফুটবল খেলা পর্যন্ত ধোনি একাধিক শখ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। বাইক রাইডিং তার একটি অন্যতম পছন্দ, এবং তিনি নানা ধরনের সুপারবাইক সংগ্রহে রাখেন। এ ছাড়াও ধোনি পোষা কুকুরদের খুব ভালোবাসেন এবং তাদের সাথে সময় কাটাতে ভালোবাসেন। ধোনির শখ হিসেবে স্ত্রী সাক্ষীর সাথে সময় কাটানোও অন্তর্ভুক্ত।
এছাড়া, ধোনির ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা অনেক দিনের। ক্রিকেটের ওপর চাপে থাকলেও, তার হৃদয়ে ফুটবল সবসময় বিশেষ স্থান পায়। তিনি অনেকবার ফুটবল খেলার ছবি এবং ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন, যা তার ভক্তদের কাছে খুবই প্রিয়।
ফিল্ম এবং ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্ট
ধোনির ব্যক্তিগত জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল তার ফিল্ম এবং ধোনি ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্ট. ধোনির জীবনী নিয়ে নির্মিত “এম এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি” চলচ্চিত্রটি ধোনির জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে, যা অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ধোনির ভক্তরা তার জীবনের নানা অজানা দিক জানতে পারেন।
ধোনি ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্টের ক্ষেত্রেও খুবই সক্রিয়। তিনি ক্রমাগত বহু ব্র্যান্ডের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। পেপসি, রিবক, স্যামসাং, আজারো টায়ার্সসহ কতিপয় বড় ব্র্যান্ডের সাথে ধোনির ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এই ব্র্যান্ডগুলির সাথে তার এনডোর্সমেন্ট সন্ধি তাকে কেবল অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেনি, বরং ধোনির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করেছে তার ভক্তকূলের মধ্যে।
মাহেн্দ্র সিং ধোনির নে�
মাহেন্দ্র সিং ধোনি, একজন অসাধারণ নেতা হিসেবে তার বিশাল অবদান রেখেছেন। ধোনির নেতৃত্বে ভারত জিতেছে ২০০৭ সালের টি২০ বিশ্বকাপ, ২০১১ সালের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ এবং ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি সব তিনটি আইসিসি গ্লোবাল ট্রফি জিতেছেন। তার নেতৃত্বে ২০০৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৮ মাস ভারত ছিল টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। এছাড়া ধোনির অধিনায়কত্বে ভারত ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল এবং ২০১৬ সালে এশিয়া কাপ টি২০ জিতেছিল।
ভারতের বাইরে, ধোনি চেন্নাই সুপার কিংসের (CSK) অধিনায়ক হিসেবে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন। তার নেতৃত্বে দলটি প্রথম ১৪ আইপিএল মরসুমে ১০ বার ফাইনালে পৌঁছেছে এবং পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে – ২০১০, ২০১১, ২০১৮, ২০২১ এবং ২০২৩ সালে। ধোনির অধিনায়কত্বে ২০১৮ সালে তিনি ৪৫৫ রান করেছিলেন, যার গড় ছিল ৭৫.৮৩ এবং স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫০.৬৬। ২০২৩ সালে তিনি আইপিএলে ২৫০ ম্যাচ খেলার মাইলফলক অর্জন করেন।
ধোনির ক্যারিয়ারের অন্য উল্লেখযোগ্য মাইলফলকগুলির মধ্যে রয়েছে ৯০টি টেস্ট ম্যাচে ৪৮৭৬ রান, ৩৫০টি ওডিআই-তে ১০৭৭৩ রান এবং ৯৮টি টি২০আই-তে ১৬১৭ রান। তার ব্যাটিং গড় টেস্টে ৩৮.০৯, ওডিআই-তে ৫০.৫৩ এবং টি২০আই-তে ৩৭.৬০। এমনকি উইকেটকিপার হিসেবেও তিনি বিরল প্রতিভাধর ছিলেন, টেস্টে ২৫৬টি ক্যাচ এবং ৩৮টি স্টাম্পিং, ওডিআই-তে ৩২১টি ক্যাচ এবং ১২৩টি স্টাম্পিং এবং টি২০আই-তে ৫৭টি ক্যাচ এবং ৩৪টি স্টাম্পিং করেছেন।
মাহেন্দ্র সিং ধোনি তার ক্যারিয়ারে ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও সফল অধিনায়কদের একজন হিসেবে রয়ে গেছেন, এবং তার অবদান ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরকাল অমর হয়ে থাকবে।