ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

সিলেটের হৃদয়ে অবস্থিত ওসমানি বিমানবন্দর বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত। সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত এ বিমানবন্দরটির আইএটিএ কোড ZYL এবং আইসিএও কোড VGSY। এটি সামরিক-বেসামরিক বিমান চলাচলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং মূলত অফশোর প্যাসেঞ্জারদের সাথে সিলেটের সংযোগ সাধন করে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী জেনারেল ওসমানীর নামে নামকরণ করা এ বিমানবন্দরটি বছরে প্রায় ৬,৩৪,০৩১ যাত্রী পরিবহন করে যা এর ব্যস্ততা এবং জনপ্রিয়তার প্রমাণ। ঢাকায় SkyAir এবং অন্যান্য গন্তব্যে যেমন কক্সবাজার এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ডেস্টিনেশনে বিমান সেবা প্রদান করে এ বিমানবন্দরটি সিলেটের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। বর্তমানে নতুন টার্মিনাল ভবনের নির্মাণের কাজ চলছে যা বছরে ২০ লাখ যাত্রী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হবে।

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইতিহাস

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের সিলেট শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। এর প্রতিষ্ঠা ১৯৮৬ সালে ঘটে এবং তা থেকে ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে। এই বিমানবন্দরের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ এবং বিদেশী পর্যটকদের আগমন ও জাতীয় অর্থনৈতিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

বিমানবন্দরের প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়ন

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রতিষ্ঠা ১৯৮৬ সালে শহরের ২৪°৯৫৭′৪৮″ উত্তর এবং ৯১°৫২′০১″ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে ঘটে। প্রথম দিকে এটি শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালিত করলেও, ২০০২ সালে এটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরিত করা হয়। এর পর থেকে বিমানবন্দরটি ধীরে ধীরে উন্নয়ন লাভ করে এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে।

নির্মাণের প্রক্রিয়া

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি এবং মানসম্মত উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে নতুন টার্মিনাল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় যা এখন পর্যন্ত ২২% সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণ প্রকল্পটির ধীরগতির কারণে অনেক সমালোচনা ও উদ্বেগের কথা শোনা গেছে।

আরও পড়ুনঃ  বেনাপোল সীমান্ত পারাপার

সময়ের সাথে পরিবর্তন

এই বিমানবন্দরের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল ২০০২ সালে এর আন্তর্জাতিক পরিবর্তন। এর ফলে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সিলেটের জনগণের প্রায় ৯৫% বিমানের যাত্রী হলে বাংলাদেশ বিমানের। সিলেট ও লন্ডনের মধ্যে মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে যা অর্থনৈতিকভাবে বিমানবন্দরের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি করেছে।

কিন্তু বিমানবন্দরের উন্নয়নের সাথে সাথে, ভাড়া বৃদ্ধির মতো কিছু সমস্যা লক্ষ্য করা গেছে যা যাত্রীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টিকারী। তবে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নয়ন অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বিমানবন্দরের ভূমিকা

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর হিসাবে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলকে বিশ্বের সাথে সংযুক্ত করেছে। এটি যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পৌঁছানোর যোগান দেয়। এই বিমানবন্দরটি শুধুমাত্র যোগাযোগই নয়, বরং আন্তর্জাতিক উড়ান এবং ব্যবসার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে

ওসমানী বিমানবন্দর সিলেটের মানুষের জন্য একটি প্রধান যোগাযোগ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এয়ারপোর্টটি শুধুমাত্র স্থানীয় যাত্রীদেরই নয়, বরং প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য, যেখানে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল করে। সিলেটে বসবাসকারী মানুষরা বৃটেন, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং আরও অনেক বিদেশী দেশে সহজেই যাতায়াত করতে পারেন এই বিমানবন্দরের মাধ্যমে। এই বিমানবন্দরটি সিলেট এবং লন্ডনের মানুষের মধ্যে মানবিক সংযোগ বৃদ্ধি করেছে।

আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলে অবদান

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরিত হয়। এটি এখন বিভিন্ন দেশের সাথে আন্তর্জাতিক উড়ান সেবা প্রদান করছে, যা বাংলাদেশের বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে বড় অবদান রেখেছে। বর্তমানে এখানে বাংলাদেশের জাতীয় এয়ারলাইনস বিমানের পাশাপাশি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস, তুর্কিশ এয়ারলাইন্স এবং আরও অনেক বিদেশী এয়ারলাইনসের ফ্লাইট পরিচালিত হয়।

ব্যবসা ও পর্যটনের উন্নয়ন

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সিলেট অঞ্চলে ব্যবসা উন্নয়ন এবং পর্যটন বৃদ্ধিতে এক বিশাল ভূমিকা পালন করেছে। এর ফলে সিলেটের অর্থনৈতিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সহজেই তাদের পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করতে পারছেন, এবং পর্যটকরা সহজেই সিলেটে আসতে পারছেন। এর ফলে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী স্থানসমূহ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  সদরঘাট, ঢাকা: নদীবন্দর ও নৌযানের প্রধান কেন্দ্র

সুবিধাসমূহ

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নত মানের সুবিধাসমূহ প্রদান করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যাত্রীদের আরাম এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কিছু বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

বিমানবন্দরের টার্মিনাল

বিমানবন্দরের টার্মিনাল পর্যাপ্ত আরাম এবং সুবিধাজনক স্থাপত্য নিয়ে গঠিত। যাত্রীদের অভিজ্ঞতাকে সহজ এবং কার্যকর করতে টার্মিনাল ডিজাইন করা হয়েছে। নতুন টার্মিনালে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি এবং স্বয়ংক্রিয় সেবা ব্যবস্থা যোগ করা হয়েছে, যা বিমান যাত্রার সময় সাশ্রয় করে।

লাউঞ্জ এবং অন্যান্য সুবিধা

বিমানবন্দরের লাউঞ্জ উচ্চ মানের সেবা এবং আরামদায়ক পরিবেশ প্রদান করে। এখানে বিভিন্ন বাণিজ্যিক এবং বেসরকারি লাউঞ্জ রয়েছে, যা যাত্রীদের বিশ্রাম এবং আরামদায়ক সময় কাটানোর সুযোগ দেয়। লাউঞ্জে ফ্রি ওয়াই-ফাই, রিফ্রেশমেন্ট বার এবং ব্যক্তিগতকৃত সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়াও দোকানপাট, খাবার দোকান, এবং পর্যটকদের জন্য সুবিধা সম্পন্ন আনুষঙ্গিক সেবা ব্যবহার করা যায়।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অত্যন্ত কার্যকরী এবং উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আধুনিক সিকিউরিটি চেক পয়েন্ট, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা সর্বদা সতর্ক থাকেন এবং যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সর্বদা প্রস্ত্তত থাকেন। এর ফলে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং নিরাপদ ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন।

পরিবহন সেবা

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন থেকে শহরে যাতায়াতের জন্য যাত্রীদের বিভিন্ন ধরণের পরিবহন সেবা প্রদান করা হয়। এই সেবাগুলি যাত্রীদের যাতায়াতকে দ্রুত এবং ঝামেলামুক্ত করে তোলার জন্য পরিকল্পিত।

বিমানবন্দর থেকে শহরে যাতায়াত

বিমানবন্দর থেকে শহরের কেন্দ্রীয় পয়েন্ট পর্যন্ত নিয়মিত শাটল এবং ট্যাক্সি পরিষেবা পাওয়া যায়। যাত্রীদের যাতায়াত সহজতর করতে এবং দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য এই পরিষেবাগুলি অত্যন্ত কার্যকর। শহরে যাতায়াতের জন্য যাত্রীদের প্রয়োজন অনুযায়ী শাটল বাস ও ট্যাক্সি পরিষেবার সুবিধা রয়েছে।

ট্যাক্সি এবং শাটল পরিষেবা

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শাটল বাস এবং ট্যাক্সি পরিষেবা সহজলভ্য। উবার এবং পাঠাও এর মত জনপ্রিয় ট্যাক্সি পরিষেবা প্রদানকারীগুলির মাধ্যমে যাত্রীরা সহজেই তাঁদের ভ্রমণের ব্যবস্থা করতে পারেন। ট্যাক্সি পরিষেবা ব্যবহার করলে যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে সরাসরি গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ  জামালপুর জংশন রেলওয়ে স্টেশন

রেন্টাল কারের সুযোগ

রেন্টাল কার পরিষেবাও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সহজলভ্য। শেবা রেন্ট এ কার এবং চালো রেন্ট এ কার মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাত্রীরা তাদের পছন্দের গাড়ি ভাড়া নিতে পারেন। শেবা রেন্ট এ কার ২৪/৭ সময়ে গাড়ি ভাড়ার সুবিধা দিয়ে থাকে এবং যাত্রীদের নির্দিষ্ট সময়ে তাদের গাড়ি পৌছানোর বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়। এ সকল সেবা তাদের স্বচ্ছ মূল্য নির্ধারণ এবং অতিরিক্ত খরচ বিহীন পরিষেবার জন্য প্রশংসিত।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button