ডায়াবেটিস এর লক্ষণ?

ডায়াবেটিস আজকের বিশ্বে একটি অতি প্রচলিত অসুখ। বাংলাদেশে, অনুমান করা হয় যে প্রায় ৫০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগীরা তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকার সত্য অবস্থা জানেন না। ডায়াবেটিসের প্রাথমিক সঙ্কেত অনেক সময় সামান্য ও সূক্ষ্ম হয়, যা সহজে অনুধাবন করা যায় না, এবং যার ফলে বহু মানুষ অজান্তেই এই অবস্থার অধীনে এগিয়ে চলে।

জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, দেশে তিন কোটি ১০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিস ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস বিভিন্ন লক্ষণ ধারণ করে। প্রকৃতপক্ষে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ হিসেবে প্রায় ৯০% ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়, যা বেশিরভাগই প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝে দেখা যায়। সঠিক ডায়েট এবং জীবনধারায় পরিবর্তন আনা এই রোগের মোকাবিলায় অত্যন্ত জরুরি।

ডায়াবেটিস কি?

ডায়াবেটিস একটি চিকিৎসাগত অবস্থা, যা ব্যক্তির রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটি ঘটে থাকে যখন শরীর ইনসুলিন হরমোন উৎপাদনে ব্যর্থ হয় অথবা ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না। এই অবস্থাটি দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে এবং এটি ব্যক্তির জীবনযাত্রা এবং স্বাস্থ্যে বিভিন্ন প্রভাব ফেলে।

ডায়াবেটিসের বিভিন্ন প্রকার

  • টাইপ ১ ডায়াবেটিস: এটি প্রায়শই শৈশব অথবা কিশোর বয়সে দেখা দেয়, যেখানে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন হরমোন তৈরি করে না।
  • টাইপ ২ ডায়াবেটিস: এই ধরনের ডায়াবেটিস সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়, যেখানে শরীরের কোষগুলি ইনসুলিনের প্রতি সাড়া দেয় না।
  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস: এটি গর্ভাবস্থায় ঘটে থাকে, যখন শরীরকে অতিরিক্ত ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়।

শারীরিক স্বাস্থ্য ও ডায়াবেটিসের সম্পর্ক

ডায়াবেটিস একটি জটিল অবস্থা যা বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি করে, যেমন হৃদরোগ, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, কিডনির সমস্যা, এবং নার্ভ ক্ষতি। তাই শারীরিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং নিয়মিত পরীক্ষা ডায়াবেটিকদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

আরও পড়ুনঃ  WBC বেশি হলে কি হয়?

সঠিক খাদ্যাভাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, নিয়মিত চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি ইনসুলিন হরমোন থেরাপির কার্যকারিতা বাড়াতে পারে।

ডায়াবেটিসের সাধারণ লক্ষণ

ডায়াবেটিস হল এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে শরীর রক্তের গ্লুকোজ বা চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ডায়াবেটিস সাধারণ লক্ষণ গুলি হল এমন কিছু উপসর্গ যা সাধারণত এই রোগের আগমনকে ইঙ্গিত করে।

অতিরিক্ত তৃষ্ণা

একজন ডায়াবেটিস রোগী প্রায়ই অতিরিক্ত তৃষ্ণা অনুভব করেন। এটি হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি থাকা) এর একটি প্রাথমিক লক্ষণ। শরীর অতিরিক্ত গ্লুকোজকে মূত্রের মাধ্যমে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি হ্রাস পায় এবং তৃষ্ণা বাড়ায়।

বারবার মূত্রত্যাগ

অতিরিক্ত তৃষ্ণা এর পাশাপাশি, বারবার মূত্রত্যাগের প্রয়োজন একটি অন্যান্য সাধারণ উপসর্গ। শরীর চেষ্টা করে বাড়তি গ্লুকোজকে বাহিরের মূত্রের সাহায্যে বের করে দিতে, যা প্রায়ই মূত্রত্যাগের পরিমাণ বাড়ায়।

অস্বাভাবিক খাদ্যভাস

ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়শই অস্বাভাবিক খাদ্যভাস লক্ষ্য করতে পারেন। এর অর্থ হল, তারা হয়তো খুব বেশি খাদ্য গ্রহণ করতে পারে অথবা খাবারের প্রতি অনিচ্ছা প্রকাশ করতে পারে। এটি সহজেই ওজন হ্রাস পাওয়া বা রোগীর সাধারণ শারীরিক অবস্থা নিয়ে সমস্যায় পরিণত হতে পারে।

এই ডায়াবেটিস সাধারণ লক্ষণগুলি যদিও সবসময় গুরুতর সমস্যা নির্দেশ না করে, তবুও এগুলি দেখা দিলে একজন চিকিৎসাবিদের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ

উচ্চ রক্তচাপ একটি প্রচলিত স্বাস্থ্যগত সমস্যা যা অনেক সময় প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণহীন থাকে। তবে, এর কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে যা বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেছেন। নিম্নে এর কিছু প্রধান লক্ষণ আলোচনা করা হলো।

ক্লান্তি ও শারীরিক দুর্বলতা

উচ্চ রক্তচাপ সাধারণত ক্লান্তি এবং অস্বাভাবিক শারীরিক দুর্বলতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যখন হৃদয়কে বেশি কাজ করতে হয়, তখন এই ধরনের লক্ষণগুলিতে প্রকাশ পেতে পারে।

দৃষ্টির সমস্যা

একটি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো দৃষ্টির সমস্যাউচ্চ রক্তচাপ চোখের রক্তবাহী নালীগুলোতে চাপ সৃষ্টি করে, যা দৃষ্টি সংক্রান্ত সমস্যাগুলির কারণ হতে পারে।

সাধারণত, এই লক্ষণগুলো অনুভব হলে বিলম্ব না করে অবিলম্বে মেডিকেল পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ভবিষ্যতে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো গুরুতর সমস্যা এড়ানো সম্ভব হয়।

আরও পড়ুনঃ  কি খেলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়?

টাইপ 1 ডায়াবেটিসের বিশেষ লক্ষণ

টাইপ 1 ডায়াবেটিস সকল বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা দিতে পারে যদিও এর প্রাথমিক নিদর্শনগুলি প্রায়ই শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। এই অবস্থাটি এমন একটি চিকিৎসা অবস্থা যেখানে অগ্নাশয় প্রয়োজনীয় ইনসুলিন উৎপন্ন করতে অক্ষম, যা রক্তের গ্লুকোজকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।

দ্রুত ওজন কমানো

টাইপ 1 ডায়াবেটিসের একটি প্রধান লক্ষণ হলো দ্রুত ওজন হ্রাস। এটি ঘটে থাকে কারণ শরীর যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপাদন না করায় খাবার থেকে যথাযথ শক্তি আহরণ করতে পারে না। ফলে শরীর তার ফ্যাট স্টোরেজ এবং মাংসপেশী টিস্যু ব্যবহার করে, অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস ঘটায়।

হাইপারগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি

টাইপ 1 ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে হাইপারগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। ইনসুলিনের অভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, যা খুবই বিপজ্জনক হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। চিকিৎসকের নির্দেশ মোতাবেক নিয়মিত রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা ও ইনসুলিন থেরাপি গ্রহণ এর প্রতিরোধক উপায়।

যদিও টাইপ 1 ডায়াবেটিস সাধারণত পূর্বানুমান দেওয়া যায় না, তবুও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা এই রোগের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এই লক্ষণগুলির সচেতনতা এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রোগীরা একটি সক্রিয় এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে পারে।

টাইপ 2 ডায়াবেটিসের লক্ষণ

টাইপ 2 ডায়াবেটিস বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ করে, যার মধ্যে ত্বকের সমস্যা এবং বারবার সংক্রমণ অন্যতম। এই উপসর্গগুলি কেবল রোগীর দৈনন্দিন জীবনে কঠিনাই তৈরি করে না, বরং স্বাস্থ্য পরিচর্যার উপর অতিরিক্ত চাপও তৈরি করে।

ত্বকের সমস্যা

টাইপ 2 ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায়সই বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে প্রদাহ, অসাড়তা এবং আঘাত সারার ধীর গতি প্রধান। এছাড়াও, ত্বক শুষ্ক হওয়া, চুলকানি এবং বিশেষ করে পায়ে বা হাতে ঘা দেখা দিতে পারে।

ঘন ঘন সংক্রমণ

সংক্রমণ, বিশেষত উরু, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ভিতরের অংশ, যেমন মৌখিক, যৌন, এবং পায়ের সংক্রমণগুলো টাইপ 2 ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে প্রচুর হারে ঘটে। যে কারণে এই রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা এবং নিজের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিসের লক্ষণ

শিশুদের ডায়াবেটিস, বিশেষ করে টাইপ 1 ডায়াবেটিস, ভারত সহ গোটা বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। বাচ্চাদের মধ্যে এই রোগের লক্ষণগুলি প্রায়ই তাদের স্বাভাবিক আচরণের মধ্যে লুকানো থাকতে পারে, যা অনেক সময় অবহেলিত হয়। চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ না করলে অনেক সময় শিশুর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়?

অতিরিক্ত ক্ষুধা

অতিরিক্ত ক্ষুধা শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিসের একটি প্রধান লক্ষণ। এ অবস্থায় শিশুরা সাধারণের চেয়ে বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়ার ঝোঁক দেখায়, কারণ তাদের দেহ খাবার থেকে গ্লুকোজ সঠিকভাবে শোষণ করতে পারে না।

আচরণগত পরিবর্তন

শিশুদের ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে তাদের আচরণগত পরিবর্তন ঘটতে পারে। তারা প্রায়ই চিড়চিড়ে বা ধৈর্যহীন হয়ে উঠতে পারে, যা কিনা তাদের শারীরিক ও মানসিক চাপের পরিচায়ক। এর পাশাপাশি, তাদের রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যা দিনের বেলা ক্লান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

  • শিশুদের স্কুলে এবং খেলার মাঠে তাদের পারফরম্যান্সে হ্রাস পরিলক্ষিত হতে পারে।
  • শিশুরা সাধারণত তাদের খাবারের আগ্রহ অত্যধিক বাড়িয়ে তুলতে পারে।

যদি আপনার শিশুর মধ্যে এই ধরণের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আদর্শভাবে, শিশুদের বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি নজরদারি করা উচিত।

দেহে ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

ডায়াবেটিস এমন এক রোগ যা শুধুমাত্র রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কঠিনতা সৃষ্টি করে না, বরং দেহের বিভিন্ন অঙ্গকে দীর্ঘমেয়াদে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। দীর্ঘকাল অব্যাহত রোগের প্রভাব থেকে জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন হৃদরোগ এবং কিডনি সমস্যা উদ্ভুত হতে পারে। এর মধ্যে আচমকা হৃদযন্ত্রের আক্রমণ অথবা স্ট্রোকের ঘটনা অত্যন্ত সাধারণ।

হৃদরোগ ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা

ডায়াবেটিসের সাথে যুক্ত হৃদরোগের ঝুঁকি বিপুল পরিমাণে বাড়ে কারণ উচ্চ রক্তে শর্করার মাত্রা শরীরের রক্তবাহী পথকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যা হৃদরোগের অন্যতম কারণ। ডায়াবেটিসে ভুগতে থাকা রোগীরা সাধারণত ঘাই রোগের সমস্যায় চারগুণ বেশি সম্মুখীন হয়।

কিডনি সমস্যা

ডায়াবেটিসের উচ্চ গ্লুকোজের মাত্রা দীর্ঘমেয়াদে কিডনির ছানিধরণ ক্ষমতায় গুরুতরভাবে প্রভাব ফেলে, যা কিডনি বিকলতা অথবা ক্রনিক কিডনি রোগের সৃষ্টি করে। এই প্রভাবগুলি অন্যান্য চাক্ষুষ ও তন্তুপূর্ণ সমস্যার সাথে ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য জটিলতাকে আরো বাড়িয়ে তোলে। ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এড়াতে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ এবং পরীক্ষা অত্যাবশ্যক।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button