তাবু (অভিনেত্রী)
তাবাসসুম ফাতিমা হাশমী, যাকে তাবু নামে চেনা যায়, ১৯৭১ সালের ৪ নভেম্বর হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তাবু জীবনীতে দেখা যায় যে, তিনি অভিনয়ের মাধ্যমে বিপুল সম্মাননা অর্জন করেছেন, এদের মধ্যে পদ্মশ্রী ও দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। তাবু বলিউড অভিনেত্রী হিসেবে বিভিন্ন ভাষায়, বিশেষত হিন্দি, তেলুগু, তামিল এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে তার অসাধারণ অভিনয়ের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন।
তাবুর চলচ্চিত্র কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৮২ সালে, তবে তাকে মূল স্রোতে নিয়ে আসে ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “পেহলা পেহলা প্যায়ার” ছবি। তার কর্মজীবনে “মাছিস” ও “কাধাল দেসাম” ছবিতে অভিনয়ের জন্য অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছেন। পরবর্তীতে, “বর্ডার” (১৯৯৭), “চাঁদনী বার” (২০০১), এবং “হায়দার” (২০১৪) সহ বেশ কয়েকটি সফল ছবিতে অভিনয় করেছেন, যার জন্য তিনি বহু পুরস্কারও পেয়েছেন। তাবুর প্রশংসনীয় কর্মজীবন, বহুমুখী প্রতিভা, এবং বিভিন্ন ভাষার চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণ তাকে বলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
প্রারম্ভিক জীবন
তাবু, মূলত তাবাসসুম হাশমী, ১৯৭১ সালের ৪ নভেম্বর হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রখ্যাত অভিনেত্রী ও দক্ষতায় পূর্ণ এক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তার অভিনয় জীবনের শুরুতেই তিনি প্রতিভার আভাস দিয়েছিলেন এবং তার গ্ল্যামার, প্রতিভা ও দক্ষতা নিয়ে একজন সফল অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।
শৈশব ও পরিবারের পরিচিতি
তাবুর শৈশব কেটেছে হায়দ্রাবাদে, যেখানে তার পরিবার বসবাস করত। তার মা রিজওয়ানা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক এবং তার বাবা জামাল আলী হাশমী ছিলেন একজন অভিনেতা। যদিও তার বাবা পরবর্তীতে পাকিস্তান থেকে ভারতে ফিরে আসেন, তাবুর শৈশব মায়ের প্রভাবেই গড়ে ওঠে।
হায়দ্রাবাদে শিক্ষা জীবন
তাবুর শৈশব কাটে হায়দ্রাবাদে এবং তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন সেন্ট অ্যান’স হাইস্কুল থেকে। সেখানে তিনি শিক্ষার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আগ্রহ প্রদর্শন করেন, যা তার ভবিষ্যত জীবনে বড় ভূমিকা পালন করে। হায়দ্রাবাদে শিক্ষা তাকে একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করে, যা তাবুর ভবিষ্যত সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
তাবুর প্রাথমিক শিক্ষা মুম্বাইতে শুরু হয়েছিল। ছোটবেলা থেকেই তিনি পড়াশোনার প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন। মুম্বাইতে আসার পর, তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন। শিক্ষাজীবনে তার দক্ষতা এবং কঠোর পরিশ্রমের জন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছিলেন।
সংসার শিক্ষা
তাবুর পরিবার প্রথম থেকেই তার শিক্ষাগত উন্নতির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছিল। তাবুর প্রাথমিক শিক্ষা, অর্থাৎ স্কুল পর্যায়ে, তাকে একটি মজবুত ভিত্তি প্রদান করে। পরিবারের সহায়তায় তিনি শিক্ষাগ্রহণে কখনো পিছপা হননি। তার বৃদ্ধি এবং শিক্ষাগত অর্জনে পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য।
কলেজ জীবন
কলেজে তাবুর জীবন ছিল চমৎকার এবং শিক্ষামূলক। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে তার অভিজ্ঞতা ছিল অনন্য। এখানেই তিনি পড়াশোনায় তার প্রতিভা উন্নয়ন করেছেন এবং একাধিক একাডেমিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। শিক্ষকদের কাছ থেকেও তিনি অত্যন্ত প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। কলেজে তাবুর জীবন তাকে কেবল শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, নানা ধরনের জীবন দক্ষতাও শিখিয়েছে।
চলচ্চিত্রে আগমন
তাবুর চলচ্চিত্র অভিষেক ঘটে ১৯৮৫ সালে, ডেভ আনন্দ পরিচালিত ‘হাম নওজওয়ান’ চলচ্চিত্রে। এই চলচ্চিত্রে তিনি ডেভ আনন্দের কন্যার চরিত্রে অভিনয় করেন। এটিই ছিল তার প্রথম উল্লেখযোগ্য চরিত্র। এরপর তাবু তেলুগু চলচ্চিত্র ‘কুলি না. ১’-এ উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় অভিনয় করে নিজের অবস্থান শক্ত করেন। এটি ছিল ১৯৯১ সালে এবং এই চলচ্চিত্রে তার প্রধান চরিত্রের জন্য প্রশংসা পান।
তাবুর চলচ্চিত্র অভিষেক রিপোর্টিভ ফলাফল ছিল। তার প্রারম্ভিক অভিনয় দক্ষতা দর্শক ও সমালোচকদের নজর কেড়েছিল। এছাড়াও, তার চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে গান এবং সঙ্গীত অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। তাবুর অভিষেক তাকে না শুধুমাত্র বলিউডে, বরং তেলুগু ও অন্যান্য ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পেও স্থান দিয়েছিল।
ক্যারিয়ারের শুরু: তাবুর প্রথম কয়েকটি ছবি
তাবুর অভিনয় যাত্রা শুরু হয়েছিল অত্যন্ত প্রতিভাময় এবং প্রতিশ্রুতিময় কিছু ছবির মাধ্যমে। তার অভিনীত প্রথম দিকের কয়েকটি ছবি তাকে একটি শক্তিশালী ভিত্তি দিয়েছিল যা পরবর্তী বছরগুলিতে তার অসাধারণ ক্যারিয়ারের পাথেয় হয়ে উঠেছিল। এখন আমরা তার দুটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র সম্পর্কে কথা বলব, যা ছিল তাবুর প্রথম হিন্দি ছবি এবং তার ক্যারিয়ারের সাফল্য সূচনা করেছিল।
পেহলা পেহলা প্যায়ার
১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পেহলা পেহলা প্যায়ার’ ছিল তাবুর প্রথম হিন্দি ছবি যেখানে তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এই ছবিটি তাবুর অভিনয় প্রতিভার প্রথম উদাহরণ দেয় এবং দর্শকদের দ্বারা যথেষ্ট প্রশংসিত হয়। যদিও এই ছবিটি বক্স অফিসে বিশেষ সাফল্য অর্জন করতে না পারলেও, এটি তার ক্যারিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল।
বিজয়পথ
একই বছরে মুক্তি পায় ‘বিজয়পথ’ চলচ্চিত্রটি, যা তাবুর ক্যারিয়ারের জন্যে আরও একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হয়ে ওঠে। এই ছবি তাকে অভিনেত্রী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে এবং তার অভিনয়ের জন্যে প্রশংসা অর্জন করে। ‘বিজয়পথ’ ছবির মাধ্যমে তাবু ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন, যা তাকে একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় এবং তার শৈল্পিক যাত্রা নিশ্চিত করে।
প্রযুক্তিপূর্ণ চলচ্চিত্রসমূহ
তাবু তাঁর অভিনয় জীবনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিপূর্ণ চলচ্চিত্রগুলির মাধ্যমে প্রশংসা অর্জন করেছেন। বিশেষত, তাবু অভিনীত মাছিস চলচ্চিত্র ও বিবিসি চলচ্চিত্র দুটি দুটোই সমালোচকদের বিশেষ স্বীকৃতি আদায় করে।
মাছিস ও বিবিসিনেমাগুলি
১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মাছিস চলচ্চিত্রে তাবুর অভিনয় তাঁকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসন দেয়। গুলজারের পরিচালনায় এই বিশিষ্ট চলচ্চিত্রটি সমসাময়িক সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। মাছিস চলচ্চিত্রটি তাবুকে অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। পাশাপাশি বিবিসি চলচ্চিত্রগুলি তাবুর অভিনয় শৈলীকে নিয়ে আসে আন্তর্জাতিক মঞ্চে।
সাজান চলে সসুরাল ও জিৎ
১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সাজান চলে সসুরাল ও জীত চলচ্চিত্র দুটি তাবুর ক্যারিয়ারে বাণিজ্যিক সাফল্য নিয়ে আসে। সাজান চলে সসুরাল চলচ্চিত্রে কৌতুক ও রোমান্সের একটি মিশ্রণ ছিল যা নন্দিত হয়েছিল দর্শকদের মধ্যে। অপরদিকে, জীত চলচ্চিত্রে তাবুর অভিনয় ফ্যানবেসের মধ্যে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে আসে। এই সিনেমাগুলি তার বহুমুখী প্রতিভার উদাহরণ।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সফলতা
তাবু তার দীর্ঘ এবং সফল ক্যারিয়ারে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। তার অভিনয় ক্ষমতা এবং প্রবল উপস্থিতির জন্য তিনি অনেক পুরস্কার এবং সম্মাননা পেয়েছেন, যা তাকে চলচ্চিত্র জগতে একটি বিশেষ স্থান অর্জন করতে সহায়ক হয়েছে।
চাঁদনী বার থেকে লাইফ অফ পাই
২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ”চাঁদনী বার” তাবুর জীবনে একটি মাইলফলক ছিল। এই চলচ্চিত্রে তার অভিনয় এতটাই প্রশংসিত হয়েছিল যে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। ২০১২ সালে অ্যাঙ্গ লির পরিচালিত “লাইফ অফ পাই” ছবিতেও তাবু একটি গুরুত্ব পূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন এবং এই ছবি সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়। এই ধরনের আন্তর্জাতিক প্রজেক্টে কাজ করে তাবুর কর্মজীবন আরো উজ্জ্বল হয়।
গোলমাল অভিনেত্রীর জন্যে
পাশাপাশি তাবু জনপ্রিয়তা লাভ করেন তার বাণিজ্যিক সফলতার জন্য। ২০১৮ সালের থ্রিলার চলচ্চিত্র “আন্ধাধুন” চলচ্চিত্রে তার ভূমিকার জন্য তিনি প্রশংসা অর্জন করেন এবং এই ছবি সেবছরের সর্বাধিক ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে একটি হয়ে ওঠে। ২০২০ সালে তেলেগু চলচ্চিত্র “আলা বৈকুণ্ঠপুরামীলো” তে তার বিশেষ চরিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সহায়ক অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
সর্বশেষে, “ড্রিশ্যম ২” এবং “ভুল ভুলাইয়া ২” ২০২২ সালে ব্যবসায়িকভাবে সফল প্রমাণিত হয় এবং তাঁকে প্রচুর প্রশংসা এনে দেয়। এই সমস্ত সফলতা তাবুকে যা দেখায় তা হ’ল, তিনি একজন বহুমুখী অভিনেত্রী। তিনি নিজের কাজের মধ্যে প্রতিনিয়ত নতুনত্ব নিয়ে আসেন এবং চলচ্চিত্র শিল্পে তার অবস্থানকে একধাপ উপরে তুলে ধরেন।