গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কি? জেনে নিন

গণতন্ত্রের প্রকট বিশ্বাস ও অনুশীলনের মধ্যে নিহিত হলো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এটি নিয়ে আসে একটি সুশাসনের, যা ব্যাক্তির স্বাধীনতা, সমতা, এবং মানবতাকে উন্নত করে। সংজ্ঞা অনুযায়ী, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হলো এমন এক প্রথা যা সার্বজনীন অধিকার ও ব্যক্তির মর্যাদা রক্ষার্থে কাজ করে।

আন্তর্জাতিক দিবসের থিম, “Empowering the Next Generation” আমাদের কাছে বার্তা প্রেরণ করে যে, গণতন্ত্র কেবল আইন অনুযায়ী সমাজের বিধান নয়, তা হলো মানুষের হৃদয়ের গভীর থেকে আসা ভালোবাসা এবং বিশ্বাসের প্রতিফলন। গণতান্ত্রিক মানদণ্ড অনুসারে, আমরা মনে করি যে প্রত্যেক নাগরিকের মধ্যে সেই গভীর অনুভূতি বিকশিত হওয়া উচিত, যা মানবিক এবং ন্যায্য সমাজ গড়তে সাহায্য করে।

Contents show

গণতন্ত্রের ধারণা

গণতন্ত্রের প্রকৃতি ও প্রয়োগে ব্যাপক মাত্রায় ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব রয়েছে। এর মূল ধারনা হলো জনগণের শাসন যা সরাসরি বা প্রতিনিধি মাধ্যমে চালিত হয়। নিচে গণতন্ত্রের কিছু মৌলিক ধারণা তুলে ধরা হলো।

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা অনুসারে, এটি হলো এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যেখানে ক্ষমতা জনগণের হাতে থাকে। এর উৎপত্তি গ্রিক শব্দ ‘দেমোক্রাতিয়া’ থেকে এবং প্রথম প্রয়োগ অ্যাথেন্সসহ বিভিন্ন গ্রিক নগররাষ্ট্রে দেখা যায়।

গণতন্ত্রের ইতিহাস

গণতন্ত্রের ইতিহাস প্রত্নতত্ত্ববিদদের খননকার্য ও দলিলপত্রে মোতাবেক প্রাচীন গ্রিসের সময় পর্যন্ত পিছনে যায়। গ্রিক গণতন্ত্র ছিল এক ধরণের প্রাথমিক গণতান্ত্রিক চর্চা যা পরবর্তীতে গোটা বিশ্বে গণতন্ত্রের ধারণার বিকাশে প্রভাব ফেলে।

গণতন্ত্রের মূল উপাদান

  • স্বাধীন নির্বাচন: সকল নাগরিকদের অধিকার সাশ্রয়ী ও নিরপেক্ষ ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।
  • আইনের শাসন: একটি সুস্থিত আইনগত কাঠামো যা সকল নাগরিকের জন্য সমান আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করে।
  • মানবাধিকারের সুরক্ষা: প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলো রাষ্ট্র কর্তৃক গ্যারান্টি দেওয়া।
  • প্রেস ফ্রিডম: সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা যা রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সত্যনিষ্ঠার সম্পর্ক স্থাপন করে।

ইতিহাস ও বিশ্বের নানা প্রান্তের গণতন্ত্রের বিবর্তন এই মৌলিক উপাদানগুলোর চারপাশে ঘুরে ফিরে। গণতন্ত্রের সাফল্য ও দীর্ঘায়ু এসব উপাদানের উপর নির্ভরশীল।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সংজ্ঞা

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এমন একটি ধারণা, যা প্রতিটি নাগরিককে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। এই মূল্যবোধগুলি হল একটি সমাজের সুস্থ ও সুদৃঢ় গণতান্ত্রিক কাঠামোর মূল ভিত্তি।

সকলের সমান অধিকার

সমান অধিকার শব্দ দুটি থেকে প্রতিটি নাগরিকের সমান মর্যাদা ও অধিকারের ধারণা উঠে আসে। এর অর্থ হল যে প্রত্যেকের জন্য চাকরি, শিক্ষা, বিচারপ্রাপ্তি এবং সামাজিক অভিসরণে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা

মত প্রকাশের স্বাধীনতা হল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একটি মৌলিক উপাদান। এটি প্রতিটি ব্যক্তির ভাবনা, মতামত এবং তথ্য প্রকাশের অধিকার নির্দেশ করে। যখন এই স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়, তখন সমাজে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ বিচার এবং জবাবদিহির পরিবেশ সুনিশ্চিত হয়।

আরও পড়ুনঃ  ডেভেলপমেন্ট কি?

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সুরক্ষা ও প্রসারের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র তার নাগরিকদের কল্যাণ এবং সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে। এই মূল্যবোধগুলো প্রতিদিনের জীবনের প্রতিটি স্তরে লালন করা উচিত, যাতে একটি সমতাবাদী ও মুক্ত সমাজের গঠন সম্ভব হয়।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ একটি সমাজের জীবনের মূল্যবান অংশ হিসেবে কীভাবে কাজ করে, তা বুঝতে হলে এর দুই মূল উপাদান – রাজনৈতিক স্থিরতা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি – পর্যালোচনা করা উচিত। এই দুই উপাদানের মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সার্বজনীন গুরুত্ব সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিফলিত হয়।

রাজনৈতিক স্থিরতা

রাজনৈতিক স্থিরতা হল সেই অবস্থা যেখানে ক্ষমতার সঠিক বণ্টন এবং নাগরিকদের মধ্যে সার্বিক মতৈক্য থাকে। এমন একটি পরিবেশে, নাগরিকরা তাদের রাষ্ট্র ও তার নীতির প্রতি আস্থাশীল থাকে এবং সরকারের পরিবর্তনগুলি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। এর ফলে নাগরিকেরা ক্রমাগত সুস্পষ্ট এবং ঐক্যবদ্ধ উন্নয়ন প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে, যা আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে আরও গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।

সামাজিক অন্তর্ভুক্তি

সামাজিক অন্তর্ভুক্তি হলো সবার জন্য সমান সুযোগ এবং পরিবেশ। এটি নিশ্চিত করে যে কোনো সামাজিক ভিন্নতার ব্যাপারে কোনো বৈষম্য নেই, এবং প্রতিটি ব্যক্তি তার সামাজিক, আর্থিক, এবং রাজনৈতিক জীবনে বৃহত্তর অংশগ্রহণে সক্ষম। এই অন্তর্ভুক্তির ফলে আমাদের সমাজ আরও বেশি সহনশীল এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হতে পারে, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বাড়াতে সাহায্য করে।

সমগ্রভাবে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব, রাজনৈতিক স্থিরতা, এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে অপরিহার্য। এই মূল্যবোধগুলি কেবল রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যেই নয়, বরং প্রত্যেক নাগরিকের দৈনন্দিন জীবনেও তার প্রভাব রেখে যায়, যা একটি সুখকর ও সহযোগিতামূলক সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে অবদান রাখে।

নাগরিকের দায়িত্ব ও অধিকার

গণতান্ত্রিক সমাজে নাগরিকদের নানারকম দায়িত্ব এবং অধিকার আছে। এগুলি হল সমাজের স্থিতিশীলতা এবং একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশের মূল স্তম্ভ। সংবিধান গ্রহণের দীর্ঘ সময় পরও, সংবিধানের মধ্যে বিধৃত অধিকার ও দায়িত্বগুলি এখনো সমান মর্যাদা পায়। নাগরিকরা যখন তাদের অধিকার পালন করে, সেই সময়ে তাদের দায়িত্বগুলিও সচেতনভাবে পালন করতে হয়।

ভোট দেয়ার অধিকার

ভোট দেওয়া হল নাগরিকদের অধিকারের সর্বাধিক মৌলিক বিষয়। এই অধিকার গ্রহণ করা মানে দেশের অন্দরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সরাসরি অংশগ্রহণ করা। সংবিধান ২৮ অনুচ্ছেদ মতে, কোনো নাগরিককে ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ অথবা জন্মস্থানের কারণে প্রতিষ্ঠানিক বৈষম্যের শিকার হতে হয় না, যা সমান ভোটাধিকার নিশ্চিত করে।

প্রত্যেকের দায়িত্ব

নাগরিকদের মধ্যে আইন এবং স্বাধীনতার স্মরণের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে, এবং কর্ম – যাকে সংবিধানের ২০ ধারা আনুযায়ী ‘অধিকার’, ‘কর্তব্য’ এবং ‘সম্মানের’ বিষয় হিসাবে বিবেচিত করা হয়েছে – এর প্রতি নির্দিষ্ট দায়িত্ব আছে। আমাদের মধ্যে সজাগ থাকা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ, অর্থাত্‍ নাগরিকত্ব সচেতনতা অপরিহার্য হিসাবে গণ্য হয়।

গনতান্ত্রিক মূল্যবোধের উদাহরণ

বিভিন্ন সফল গণতন্ত্রের দেশের উদাহরণ দেখে বুঝা যায় যে নাগরিকদের স্বাধীনতা এবং অধিকার কতোটা মৌলিক। ঐতিহাসিক গ্রিক গণতন্ত্র থেকে আধুনিক যুগের গণতন্ত্রের জন্য তার অনুশীলন ও চ্যালেঞ্জ সামলানোর নানান উপায় পর্যালোচনা করা যায়। গণতন্ত্রের প্রসারে নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সচেতনতা অপরিহার্য।

আরও পড়ুনঃ  পরিবার কি? সংজ্ঞা ও পরিবারের গুরুত্ব

সফল গণতান্ত্রিক দেশ

প্রাচীন গ্রিসে অ্যাথেন্সের উদাহরণ আমাদের শিখিয়েছে কিভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নাগরিক স্বাধীনতাকে প্রসারিত করতে পারে। অ্যাথেন্সে নাগরিকরা সরাসরি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে পারত, যা সত্যিকারের গণতন্ত্রের এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত।

গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ

গণতন্ত্রের পথ সবসময় মসৃণ নয়। ঐতিহাসিক ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলী দেখায় যে নাগরিক স্বাধীনতা ও সমতা সবসময় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য, মেধাস্বত্বের লঙ্ঘন, এবং সরকারি নীতিমালার পরিবর্তন এই সব চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আমাদের সজাগ রাখা উচিত।

মানবাধিকার ও গণতন্ত্র

মানবাধিকার একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি, যা প্রত্যেক নাগরিকের ন্যায্য ও সুন্দর জীবন যাপনের অধিকার সুনিশ্চিত করে। এই অধিকারগুলো আমাদের সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করে। নিম্নে মানবাধিকার সংস্থা ও গণতন্ত্রের মানবাধিকারের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হল:

মানবাধিকার সংস্থা

  • মানবাধিকার রক্ষার্থে বিভিন্ন সংস্থাগুলি নাগরিকদের মূলধারায় অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে থাকে।
  • এসব সংস্থা শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং বিনোদনে সমান অধিকার সুরক্ষার জন্য কাজ করে।
  • সংবিধানের ২৮ ধারার অনুযায়ী, যেকোনো স্থানে প্রবেশাধিকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হয়।

গণতন্ত্রের মানবাধিকারের ভূমিকা

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মানবাধিকারের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে কিছু ভূমিকা তুলে ধরা হল:

  1. আইনের সামনে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করা।
  2. নাগরিকদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সুবিধা গ্যারান্টি দেওয়া (সংবিধানের ১৫ ও ২০ অনুচ্ছেদ)।
  3. রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সকল নাগরিকের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনে ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশ নারী মনোনয়ন সুযোগ প্রদান।

সব মিলিয়ে, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র একে অপরের পূরক, যা একটি সুন্দর এবং ন্যায্য সমাজ গঠনে অপরিহার্য।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কীভাবে গড়ে তোলা যায়

শিখতে ও বুঝতে পারার ক্ষমতা সবচেয়ে বড় সম্পদ, এবং তা থেকেই গণতান্ত্রিক মানসিকতার উন্নয়ন সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষা এবং সচেতনতা অপরিহার্য উপাদান। নীচে আলোচিত হচ্ছে কীভাবে এই দুটো উপাদান মানুষের গণতান্ত্রিক চর্চা এবং মূল্যবোধের গঠনে সাহায্য করে।

শিক্ষা ও সচেতনতা

শিক্ষায় মানুষের মধ্যে তার পরিবেশ, সমাজ, এবং রাষ্ট্রের প্রতি একটি গভীর অনুধাবন তৈরি হয়। সচেতনতা মানুষকে তার অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত করে, যা গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, সামাজিক আন্দোলন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিকাশের এক শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে।

সামাজিক আন্দোলন

সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষ তার মৌলিক অধিকারগুলোর জন্য সচেতন হয়ে উঠতে পারে এবং সমাজের মানদণ্ড স্থাপনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। এই ধরনের আন্দোলনগুলো শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে, এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।

এই পর্যায়ে, শিক্ষা ও সচেতনতার সমন্বয় এবং সামাজিক আন্দোলনের সক্রিয়তা , গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব, যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে।

গণতন্ত্র ও অর্থনীতি

গণতন্ত্রের সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে, ব্যক্তিগত উদ্যোগের স্বাধীনতা এবং ব্যবসায়িক মূল্যবোধ অর্থনীতির গতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি তৈরি করতে সাহায্য করে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গণতন্ত্র

গণতন্ত্রের প্রভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেক বেশি সুনির্দিষ্ট এবং টেকসই হয়। মেধা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা প্রত্যেকটি উদ্যোক্তাকে তার সৃজনশীল প্রয়াসে সাহায্য করে থাকে, যা অর্থনীতির বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়।

আরও পড়ুনঃ  ১ বর্গফুট=কত ইঞ্চি?

গণতন্ত্রের প্রভাব পড়ে ব্যবসায়

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে, ব্যবসায়ে ন্যায় এবং সমতার আদর্শ বজায় রাখার প্রতি জোর দেওয়া হয়, যা ব্যবসায়িক পরিবেশকে স্বাধীন, উন্মুক্ত এবং ন্যায্য করে তোলে। এই পরিবেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভবিষ্যৎ

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপ্রেক্ষিতে আধুনিক সমাজে প্রযুক্তির অবিস্মরণীয় ভূমিকা এবং যুব সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এই দুই ফ্যাক্টর কিভাবে গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণ করছে, তা আমাদের বিবেচনায় অত্যন্ত জরুরি।

প্রযুক্তির প্রভাব

প্রযুক্তি তথ্য ও জ্ঞানের অভাবিত পরিমাণ প্রবাহিত করে গণতন্ত্রের গভীরতা বাড়িয়ে তোলে, যা গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ-এর জন্য অপরিহার্য। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে জনগণ তাদের অধিকার এবং দায়িত্বকে আরও ভালোভাবে বুঝতে এবং পালন করতে পারছে।

যুব সমাজের ভূমিকা

যুব সমাজপ্রযুক্তি-দক্ষ এবং সচেতন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে বিকশিত এবং প্রসারিত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। তাঁদের নতুন ধারণাগুলি এবং উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ড দেশ এবং সমাজকে গণতান্ত্রিক লক্ষ্যসমূহ অর্জনে সহায়তা করছে।

  • প্রযুক্তি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলিকে সহজ, স্বচ্ছ ও দ্রুততর করে তোলে।
  • যুব সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ নতুন প্রজন্মের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা বৃদ্ধি করে।

এই দুই মৌলিক শক্তি মিলিত হয়ে গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ মূল্যবোধকে নিশ্চিত করতে পারে, যাতে সমাজে বিশ্বাস এবং সমন্বয়ের এক শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে উঠে।

উপসংহার

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসাবে ভারতের সাংবিধানিক মূল্যবোধ, যা মানুষের সার্বভৌমত্ব, আইনের শাসন, সমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার, মৌলিক অধিকার, স্বাধীন বিচার বিভাগ, স্বচ্ছ নির্বাচন, রাজনৈতিক বহুত্ববাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা ও ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ এই দশটি মূল্য প্রতিপালন করে। এই ভাবনাগুলি নাগরিক অংশগ্রহণ, মানব অধিকারের সংরক্ষণ এবং সুষম সমাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আর্থ-সামাজিক মর্যাদা, জাতি, লিঙ্গ অথবা জন্মসূত্র যাই হোক না কেন, গণতন্ত্রে সকলের জন্য সমান আইনের বিধান নিশ্চিত করা হয়।

ভবিষ্যতের জন্য আমাদের দায়িত্ব

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে নির্মিত একটি সমাজের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে – সেই মানদণ্ডগুলি বজায় রাখা এবং তার উন্নতি সাধন করা। রাষ্ট্রীয় স্তরে সেইসাথে ব্যক্তি হিসেবেও আমাদের উচিত দায়িত্ব ও নাগরিক কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠা বজায় রাখা। গণতান্ত্রিক সংরক্ষণ মানে সেই সকল পদক্ষেপ নেওয়া যা প্রতিটি নাগরিকের প্রাপ্য অধিকারকে নিশ্চিত করে এবং সকলের সমান উন্নতির পথ প্রশস্ত করে।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ

গণতন্ত্রের স্তম্ভ হিসেবে মুক্ত মত প্রকাশের অধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সরকারের জবাবদিহিতা যে কোন রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। সংরক্ষণ ও উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখার মাধ্যমে, ওয়াশিংটনের ইন্টার-আমেরিকান কমিশন ফর হিউম্যান রাইটস (IACHR) এবং আমেরিকাস স্টেটস অর্গানাইজেশন (OAS) মতো সংস্থাগুলি এই মূল্যবোধকে জোরদার করেছে। যেমন তারা সেপ্টেম্বর ১১, ২০০১-এ ইন্টার-আমেরিকান ডেমোক্রেটিক চার্টার গৃহীত করে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রকে বলিষ্ঠ ও সুরক্ষিত করেছে, যা মানবাধিকার, ফ্রি ও ফেয়ার নির্বাচন, ক্ষমতার বিভাগ এবং মুক্ত মত প্রকাশের মর্যাদা স্থির করে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক অঙ্গনেই নয়, চিনের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের গণতান্ত্রিক চাহিদা ও প্রজন্মের পূর্তি তত্ত্ব অনুসারে যৌবনের সঙ্গে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সংযোগের নেতিবাচক প্রবণতা যেমন প্রমাণ করে, তেমনি শিক্ষার মাধ্যমে গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন গঢ়ে তোলাকে উৎসাহ দেয়।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button