টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না?

টনসিলিটিস শব্দটি শুনলেই অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, কেননা এর সাথে জড়িত হয় গলার ব্যথা, ফোলা এবং অবিচ্ছিন্ন অস্বস্তি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং সচেতনতার মাধ্যমে এর প্রকোপ কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই টনসিলিটিস হলে কিছু খাবার এবং পানীয় বর্জন করা খুব জরুরি, যেগুলো প্রদাহ বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং গলার ইনফেকশনকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, টনসিল সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা এড়ানো অথবা সামলে উঠতে হলে পুষ্টির সাথে সাথে খাবারের গুণাগুণ এবং উষ্ণতা অথবা ঠান্ডার প্রকৃতি – উভয়ই বিবেচনায় নিতে হবে। এই প্রতিবেদন আপনাকে সেই সব খাবার এবং পানীয়র তালিকা প্রদান করবে যেগুলো টনসিলিটিসের সময়ে এড়িয়ে চললে এর উপসর্গগুলি শান্ত করা এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে।

টনসিল কি?

টনসিল হলো মানুষের গলায় অবস্থিত দুটি লিম্ফ টিস্যু যা আমাদের ইমিউন সিস্টেম এর একটি অঙ্গ। এই গ্রন্থিগুলি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

টনসিলের ভূমিকা

টনসিল আমাদের শ্বাসতন্ত্র দিয়ে প্রবেশ করা ক্ষতিকারক জীবাণুগুলোকে ফিল্টার করে এবং নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি উৎপাদন করে, যা প্রদাহ এবং ইনফেকশনে প্রতিরোধ করে।

রোগের লক্ষণ

যদি টনসিলে প্রদাহ ঘটে থাকে তবে গলা ব্যথা, সংবেদনশীলতা, এবং গলাভাতি হতে পারে। শ্লেষ্মাযুক্ত সংক্রমণের কারণে গলার ব্যথা অনুভূতি সাধারণত আরও বেশি তীব্র হয় এবং খাওয়াদাওয়া এবং গিলতে সমস্যা হতে পারে।

  • ইমিউন সিস্টেম: শরীরকে জীবাণুমুক্ত রাখতে টনসিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস: এই জীবাণুগুলি টনসিলাইটিস সৃষ্টির প্রধান কারণ।
  • প্রদাহ: টনসিলের প্রদাহ হলে বিভিন্ন ধরণের উপসর্গ প্রকাশ পায় যা চিকিৎসা প্রয়োজন করে।
আরও পড়ুনঃ  গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায়

খাওয়ার বিষয়ে সতর্কতা

টনসিল সমস্যায় খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের তাপমাত্রা এবং ঘরোয়া পদ্ধতি কীভাবে ইমিউনিটি বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে, তা নিয়ে বিশদ আলোচনা এখানে তুলে ধরা হবে।

ঠান্ডা এবং গরম খাবার

টনসিলের ক্ষেত্রে সঠিক খাবারের তাপমাত্রা নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। গরম খাবার গলা উষ্ণ রাখে এবং মিউকাস মেমব্রেনকে সুস্থ রাখে, যা ব্যথা উপশমে সহায়তা করে। অন্যদিকে, খুব ঠান্ডা খাবার বা পানীয় হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটিয়ে ইমিউনিটি কমিয়ে দিতে পারে। নিচের তালিকায় কিছু পদ সমূহের উদাহরণ দেওয়া হল:

  • গরম স্যুপ (যেমন: মুরগির স্যুপ)
  • গরম হার্বাল চা
  • এড়িয়ে চলুন: বরফ ঠান্ডা পানীয়

মুখের স্বাস্থ্যের গুরুত্ব

টনসিল সমস্যায় মুখের স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত মৌখিক পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপদ খাবারের চয়ন দ্বারা আমরা আমাদের ইমিউনিটি বাড়াতে পারি এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারি। ঘরোয়া পদ্ধতির মতো সাধারণ কিন্তু কার্যকর উপায়গুলি হল:

  • নিয়মিত ব্রাশ এবং ফ্লসিং
  • অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশের ব্যবহার
  • সুগন্ধি যুক্ত এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়ানো

এই সহজ সতর্কতাগুলি মেনে চলার মাধ্যমে আমরা টনসিলের সমস্যায় আরাম পেতে পারি এবং ইমিউনিটি বাড়াতে পারি।

দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য

টনসিলিটিস ডায়েটের ক্ষেত্রে দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য যেমন দই এবং পনির সম্পর্কে মতামত ভিন্ন ভিন্ন। অনেকে মনে করেন যে, এই ধরনের খাবারগুলো গলার প্রদাহ বৃদ্ধি করে এবং মিউকাস সৃষ্টি করে, যা অস্বস্তি বাড়ায়। তবে, সঠিক তথ্য ও ডায়েট পরামর্শ নির্ভর করে কিছু ক্ষেত্রে দই এবং পনির খাওয়া সুপারিশ করা হয়, বিশেষ করে যেখানে প্রোবায়োটিকের প্রয়োজন।

দুধের প্রভাব

দুধ, একটি প্রধান দুগ্ধজাত পণ্য, যা প্রায়শই টনসিলিটিস পর্বে এড়িয়ে চলা উচিত বলে গণ্য করা হয়। দুধ জাতীয় পণ্য শ্লেষ্মা উৎপাদন বাড়ায়, যা গলা ব্যথা ও অস্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি করতে পারে। একটি সুষম টনসিলিটিস ডায়েট পরিকল্পনায় দুধকে সাবধানতার সাথে গ্রহণ করা উচিত।

আরও পড়ুনঃ  কিডনি পাথরের লক্ষণ

দই এবং পনির

  • দই: প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ এই দুগ্ধজাত পণ্যটি পাকস্থলী ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যদিও দই মিউকাস সৃষ্টি করতে পারে, তবে এর প্রোবায়োটিক উপাদান অনেক ক্ষেত্রে উপকারী।
  • পনির: পনিরে প্রোটিন এবং ক্যালশিয়াম পাওয়া যায় যা শরীরের জন্য ভালো। তবে টনসিলিটিসের সময় অতিরিক্ত মিউকাস সৃষ্টির কারণে এটি এড়িয়ে চলা ভালো।

যদিও দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের ব্যবহার টনসিলিটিস ডায়েটে নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক, তবে খাবারের সাথে তাদের প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ গ্রহণের বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। সার্বিকভাবে, সব খাবারকে ডায়েটে সংযোজন করার আগে ডায়েটিশিয়ান বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মশলা এবং অতিরিক্ত স্বাদ

টনসিলিটিস সমস্যা যাদের আছে, তাদের জন্য খাদ্যাভ্যাসে কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে, মশলাদার খাবার এবং অম্লীয় খাবার টনসিলিটিসে অধিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

মশলাদার খাবার

মশলাদার খাবার গলা এবং মুখগহ্বরের শ্লেষ্মা পর্দার প্রদাহ বৃদ্ধি করে, যা টনসিলিটিসের ব্যথা এবং অস্বস্তি বাড়িয়ে তোলে। স্পাইসি উপাদান যেমন মরিচ, গোলমরিচ অবশ্যই এড়িয়ে চলা উচিত।

টক এবং লবণাক্ত খাবার

অত্যধিক টক এবং লবণাক্ত খাবারও টনসিলিটিস সমস্যায় যুক্ত হয়ে ব্যথা এবং অস্বস্তি বাড়ানোর কাজ করে। টনসিলিটিস আক্রান্তের জন্য অম্লীয় খাবারগুলি, যেমন লেবু ও কমলা, গলার রোগগুলির প্রদাহ ও ব্যথাকে বাড়াতে পারে।

  • খাদ্যে মশলা কমিয়ে দেওয়া
  • অতিরিক্ত লবণ বা টক খাবার এড়ানো
  • ঠান্ডা পানীয় এবং খাবার এড়িয়ে চলা

সুস্থ থাকার জন্য নিরাপদ এবং ভালো খাদ্যাভাস অত্যন্ত জরুরি। মশলাদার খাবার এবং টনসিলিটিস সমস্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি আরও সহজে আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে সক্ষম হবেন।

চি..

যখন আমরা টনসিলাইটিস অথবা টনসিলের প্রদাহের কথা বলি, তখন বোঝাতে চাই যে এটি প্রায়ই শিশুদের একটি সাধারণ সমস্যা। তবে চিরকালীন টনসিলাইটিস, যা ১৪ দিনের বেশি সময় ধরে থাকে এবং কখনও কখনও সপ্তাহ বা মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, এটি বয়স্কদের মধ্যেও প্রচলিত।

আরও পড়ুনঃ  হঠাৎ নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় কেন?

এর লক্ষণগুলো অত্যন্ত কষ্টদায়ক যেমন দুই সপ্তাহের বেশি সময় গলা ব্যথা থাকা, গিলতে ব্যথা, জ্বর, লাল এবং ফুলে ওঠা টনসিল এবং লিম্ফ নোডের ফুলে যাওয়া। অতএব, কোনও ব্যক্তি পাঁচ বা ততোধিক বার এক বছরে টনসিলের ইনফেকশন হলে চিরকালীন টনসিলাইটিসের অভিযোজন ঘটতে পারে। চিকিৎসা হিসেবে মুখ্যত অ্যান্টিবায়োটিক, হোম রেমেডিজ, পেইন রিলিভার্স, গলার লজেন্স, স্প্রে এবং সার্জেরি (টনসিলেক্টমি) অন্তর্ভুক্ত।

উল্লেখ্য, চিকিৎসা না পেলে টনসিলাইটিসের জটিলতা দেখা দিতে পারে যেমন ডিহাইড্রেশন, পেরিটনসিলার এবসেস, কানের ইনফেকশন এবং অবাধ শ্বাসের অসুবিধা। চিকিৎসার পর সাধারণত ১০ দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে যায়। এই বিষয়ে সচেতনতা ও সঠিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে, বিশেষ করে রোগীর অটোনোমি এবং ডিসিশন মেকিং ক্যাপাসিটির ওপর জোর দেওয়া, নীতি নির্ধারণের জ্ঞান এবং নিশ্চয়তায় উন্নতি করা সম্ভব।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button