আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক কে?
আধুনিক ব্যবস্থাপনা এক সমৃদ্ধ ও বহুমাত্রিক শিল্পের বিকাশ লাভ করেছে এবং এর মূলে রয়েছেন কিছু অসাধারণ প্রতিভাবান প্রতিষ্ঠাতা ও তাত্ত্বিক। হেনরি ফেয়ল, যিনি ব্যবস্থাপনার ইতিহাসে অনন্য এক অধ্যায় রচনা করেন, তার “General and Industrial Management” গ্রন্থে শিল্প ও সাধারণ প্রশাসনের প্রতিটি দিক নির্মাণের পদ্ধতি তুলে ধরেছেন যা আজও ব্যবস্থাপনার তত্ত্বের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
আধুনিক ব্যবস্থাপনার অগ্রদূত হিসেবে ফেয়লের পাশাপাশি, ফ্রেডেরিক টেইলর, যিনি ‘বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা’র মূলনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য পরিচিত, ‘The Principles of Scientific Management’ নামক বিশিষ্ট গ্রন্থ রচনা করেন। এ তালিকায় আরও রয়েছেন ম্যাক্স ওয়েবার, লুথার গুলিক, এবং এলটন মেও, যারা কিনা নিজ নিজ ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার তত্ত্ব ও প্রকাশনার মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা শিল্পে অভূতপূর্ব অবদান রাখেন।
আধুনিক ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা
আধুনিক ব্যবস্থাপনা হচ্ছে একটি কৌশল, যা মানবীয় সম্পদ ও অন্যান্য উপকরণের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে সাংগঠনিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়। এটি ব্যবস্থাপনা নীতি এবং ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিকতা-র উপর নির্ভর করে থাকে।
ব্যবস্থাপনার মৌলিক নীতি
ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞানের মৌলিক নীতিগুলি হল সংগঠন, পরিকল্পনা, নিয়োগ, নির্দেশনা, এবং নিয়ন্ত্রণ। এই নীতিগুলির প্রয়োগ মাধ্যমে যে কোনো প্রতিষ্ঠান তার উদ্দেশ্য সাধনে সক্ষম হয়। উদাহরণস্বরূপ, ভালো পরিকল্পনা মাধ্যমে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারিত হয় এবং নিয়োগ মাধ্যমে যথাযথ মানবীয় সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব
ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের সমৃদ্ধি এবং টেকসই বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এটি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনশীল আবহে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম করে, যা ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে। তাছাড়া, একটি ভালো ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সংস্থানগুলির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে এবং মানবীয় সম্পদকে কার্যকর ভাবে ব্যবহারে উৎসাহিত করে।
ব্যবস্থাপনার পিতার পরিচয়
ব্যবস্থাপনা শিল্পের পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত, ফ্রেডেরিক টেইলর তাঁর অভিনব বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা কৌশল দ্বারা আধুনিক ব্যবস্থাপনার ধারণাকে পুনর্গঠিত করেন।
ফ্রেডেরিক টেইলর এবং তার অবদান
টেইলর সক্রিয়ভাবে কর্মক্ষেত্রে সময় এবং পদক্ষেপ বিশ্লেষণ প্রয়োগ করেন, যা প্রতিষ্ঠানের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও কোস্ট হ্রাসে সহায়ক হয়ে উঠে। তাঁর এই পন্থা ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞানের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
টেইলরের জীবন ও কাজ
১৮৭৮ সালে টেইলর Midvale Steel Company-তে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে তিনি Chief Engineer পদে উন্নীত হন। তাঁর অবদানের মধ্যে অন্যতম হল বৈজ্ঞানিক ব্যাবস্থাপনার সূত্র যা তিনি ১৯১১ সালে প্রকাশিত তাঁর “Principles of Scientific Management” গ্রন্থে ব্যাখ্যা করেন। তাঁর এসব কৌশল শিল্পাগারের উন্নতির পথিকৃৎ হয়ে ওঠে।
-
টেইলর “সময় গবেষণা” ও “পদক্ষেপ গবেষণা” নামে পরিচিত দুইটি পদ্ধতি উন্নয়ন করেন।
-
তিনি কর্মীদের জন্য নির্দেশিকা কার্ডের ব্যবহার চালু করেন এবং এটি কর্মদক্ষতা বাড়ানোর এক অনন্য উপায় হিসেবে কাজ করে।
-
তাঁর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বিশ্বজুড়ে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গৃহীত হয় এবং এখনো প্রাসঙ্গিক।
সব মিলিয়ে, ফ্রেডেরিক টেইলরের থেকে প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জ্ঞান এবং কার্যপদ্ধতি আধুনিক ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছিল, যা আজকের ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত উন্নতিসমূহে অপরিহার্য।
ব্যবস্থাপনার ইতিহাসের পটভূমি
ব্যবস্থাপনা বিদ্যার মূল উপাদানগুলি প্রাচীন সময় থেকেই পর্যায়ক্রমে বিকশিত হয়েছে, যা ইতিহাসের পটভূমি এবং প্রাচীন প্রশাসনিক পদ্ধতির মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌঁছেছে। আসুন, আমরা প্রাচীন ও মধ্যযুগের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির কিছু উল্লেখযোগ্য দিক নিয়ে আলোচনা করি।
প্রাচীন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি
প্রাচীন যুগের প্রশাসনিক পদ্ধতি পরিচালনা কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং সংগঠনের ভিত্তি স্থাপন করে। এর মধ্যে রাজকীয় আদেশ এবং নির্দেশিকাগুলি রাষ্ট্রের বিভিন্ন সামগ্রিক প্রকৃতির কাজে লাগানো হয়েছিল, যা মধ্যযুগের ব্যবস্থাপনা বিকাশে সহায়ক হয়।
মধ্যযুগের প্রশাসনিক কাঠামো
মধ্যযুগের প্রশাসনিক পদ্ধতি সমাজের আরো জটিল কাঠামো তৈরি করেছিল, যেখানে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষমতাসীনদের মধ্যে কার্যত বিচারব্যবস্থা এবং পরিচালনাগত বিভাগগুলি পরিচালিত হত। এই কাঠামোর মূলে ছিল সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত মডেল, যা বর্তমান ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উন্নয়নে অবদান রেখেছে।
সমগ্র মানব সভ্যতার ইতিহাসে ব্যবস্থাপনার এই ইতিহাসের পটভূমির গুরুত
টেইলরের নীতি
ফ্রেডেরিক টেইলরের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা নীতি আমাদের কর্মক্ষেত্র উন্নয়নে এক অনন্য দিক নির্দেশ করে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রতিটি কাজের জন্য সেরা পদ্ধতিটি নির্ধারণ করা হয়, যা পারফরম্যান্স পরিমাপে অপরিসীম গুরুত্ব রাখে। এটি না কেবল কার্যক্ষমতা বাড়ায়, বরং কর্মীদের নান্দনিকতা এবং পেশাদারিত্ব উন্নত করে।
বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা
টেইলরের বৈজ্ঞানিক নীতি অনুসরণে প্রধান লক্ষ্য হল ব্যবস্থাপনা এবং কর্মচারীদের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করা। এ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির অধীনে, কার্যকরী কৌশলাদি অধ্যয়ন ও প্রচলন করা হয় যাতে করে কর্মক্ষেত্র উচ্চতর প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
- প্রতিটি কর্মচারী তার কাজের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ পায়।
- কর্মী এবং ব্যবস্থাপনার মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ।
- ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির নিরীক্ষণ ও পরিমাপ।
সময় এবং পদক্ষেপ বিশ্লেষণ
একজন ব্যবস্থাপক হিসাবে টেইলরের পরিকল্পনা অনুসরণ করে, কর্মীরা সময় ব্যয় এবং পদক্ষেপ বিশ্লেষণের মাধ্যমে কর্মক্ষমতার উন্নয়ন ঘটান। এর ফলে সমগ্র প্রক্রিয়া আরও সহজতর এবং কার্যকর হয়। সময় এবং পদক্ষেপের যথাযথ বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিম্নলিখিত উপকারিতাসমূহ প্রাপ্ত হয়:
- কর্মক্ষেত্রের উন্নয়নের সাথে সাথে পরিচালনা উন্নতি।
- উচ্চতর পারফরম্যান্স পরিমাপ।
- কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক চাপ হ্রাস।
এই বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা নীতি ও কৌশলগুলি কেবল পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পেই নয়, সেবা খাতেও কার্যকর। তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিগুলো আজও বহু প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে, যা প্রমাণ করে তার নীতির সার্বজনীনতা এবং গুরুত্ব।
আধুনিক ব্যবস্থাপনা তত্ত্ব
বর্তমান যুগে আধুনিক তত্ত্ব ও কর্মপ্রবাহ ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে, ডিজিটাল প্রযুক্তির আবির্ভাবে এই তত্ত্ব এবং প্রক্রিয়াগুলি আরও বেশি জোরদার হয়েছে।
ব্যবস্থাপনা তত্ত্বের বিবর্তন
শিল্প বিপ্লবের সময় থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত মানবিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও কর্মপ্রবাহের ধারণা অনেক বদলে গেছে। প্রাথমিক শিল্পকালে শ্রমিকদের কাজের বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন এবং তাদের দক্ষতা উন্নয়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়াগুলি ধীরে ধীরে আধুনিক কর্মপ্রবাহ তত্ত্বে রূপ নেয়।
মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা
আধুনিক যুগের ব্যবস্থাপনা তত্ত্ব বিশেষভাবে মানব সম্পদের উপর জোর দেয়। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা হল এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে কর্মীদের নিযুক্তি, প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন ও তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে পালন করে একটি সুসংহত ও কার্যকর কর্মপ্রবাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
- কর্মীদের যথাযথ নিয়োগ
- নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন সেশন
- মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যা কর্মীদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
এর ফলে, প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং আধুনিক তত্ত্ব ও প্রযুক্তিগত উন্নতিসাধনের লক্ষ্যে এগিয়ে যায়। কর্মীদের মাধ্যমে কর্মপ্রবাহ এবং মানবিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার তত্ত্ব বাস্তবায়িত হয়।
ব্যবস্থাপনা কৌশল
প্রতিটি সফল প্রতিষ্ঠানের পেছনে রয়েছে দক্ষ ব্যবস্থাপনা কৌশল যা কৌশলগত ব্যবস্থাপনা, লক্ষ্য অর্জন এবং দূরদৃষ্টিপূর্ণ পরিকল্পনা দ্বারা পরিচালিত হয়।
কৌশলগত পরিকল্পনা
কৌশলগত পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলির সন্ধান করে থাকে এবং সামগ্রীক প্রক্রিয়াগুলির সহযোগিতায় এই লক্ষ্যগুলির দিকে এগিয়ে চলে। দূরদৃষ্টিপূর্ণ পরিকল্পনা অগ্রগামী ও ধারাবাহিক সফলতা নিশ্চিত করে।
- সংস্থান বরাদ্দকরণ
- বাজার গবেষণা
- ঝুঁকি মূল্যায়ন
অর্জনের নীতি
লক্ষ্য অর্জন একটি প্রাথমিক ধারণা যা সমস্ত স্তরের ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ। এটি দলগুলির মোটিভেশন এবং ফোকাস বজায় রাখার লক্ষ্যে কাজ করে। নিম্নলিখিত দিকগুলি এর অন্তর্ভুক্ত:
- স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ
- অবিচলিত অনুসরণ ও নিরীক্ষা
- কর্মীদের প্রেরণা এবং জড়িতকরণ
কেবল একটি দৃঢ় এবং সুসংহত কৌশলগত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা দ্বারা স্থায়ীভাবে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
ব্যবস্থাপনার নতুন দিক
ব্যবস্থাপনার প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল পরিবেশ, অটোমেশন এবং উন্নত প্রযুক্তি এর প্রভাব অপরিসীম। বাংলাদেশের ব্যবসা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি Organizational Development (OD) এর অধীনে বহুমুখী এবং বহুমাত্রিক ধারণাগুলিতে জড়িত এবং এই প্রসঙ্গে ব্যবস্থাপনা এবং সংগঠনের উন্নয়নের বিভিন্ন প্রতিমান ও দৃষ্টিকোণ জড়িত আছে। অব্যাহত বৃদ্ধি, ব্র্যান্ডিং, সিস্টেম আপডেট, লাভ সর্বাধিক এবং ব্যবসার টেকসইতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কোম্পানীগুলোকে মনোনিবেশ করতে হবে।
ডিজিটাল যুগের ব্যবস্থাপনা
ডিজিটাল পরিবেশে ব্যবস্থাপনা কেবলমাত্র কাজের বণ্টন নয়; বরং এটি কাজের গতি এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিপ্লবী পরিবর্তন এনেছে। এই অঙ্গ হিসেবে, দেশের বিমান পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ মানবসম্পদের চাহিদা পূরণের জন্য Sabre Travel Network Bangladesh Limited দ্বারা প্রদত্ত Sabre Global Distribution System (SABRE GDS) প্রশিক্ষণ বিবেচ্য। বিশ্বব্যাপী 400 এর অধিক এয়ারলাইন ও 4 লাখ ট্র্যাভেল এজেন্সি এই সেবা ব্যবস্থার ব্যবহার করছে।
অটোমেশন এবং ব্যবস্থাপনা
অটোমেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবস্থাপনার কার্যপ্রণালীতে শৃঙ্খলা এবং নৈতিক ব্যবসা সংস্কৃতির উন্নতি ঘটেছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদনের প্রক্রিয়া দক্ষ ও সময় উপযোগী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে, ক্রমেই বাড়ছে বিমান চলাচলের সংখ্যা এবং পাশাপাশি বিনিয়োগের সুযোগ, যা দেশের বেকারত্ব হ্রাস এবং নবীন প্রজন্মের জন্য চাকরির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে। এই দিক থেকে, এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি এবং তার ব্যবস্থাপনা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির মহান উৎসাহিত হিসাবে বিবেচিত।