জিয়াউর রহমান
বাংলাদেশের ৮ম রাষ্ট্রপতি, জিয়াউর রহমান একটি উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। জিয়াউর রহমান জীবনী তাঁর বর্ণাঢ্য সামরিক এবং রাজনৈতিক জীবন নিয়ে কিছু অসাধারণ ও তথ্যবহুল বিষয় তুলে ধরে। জানুয়ারি ১৯, ১৯৩৬ সালে বগুড়া জেলার বাগবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করা জিয়াউর রহমানের অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা।
জিয়াউর রহমানের অন্যতম বিশাল অর্জন হল তার মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রদর্শিত অসমসাহসী কার্যকলাপ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এক সেক্টর কমান্ডার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে তিনি “বীর উত্তম” উপাধিতে ভূষিত হন। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে তার নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দেশকে সংকটাপন্ন অবস্থান থেকে উন্নতির পথে নিয়ে আসে।
জীবনের প্রাথমিক অধ্যায়
জিয়াউর রহমান জীবনের প্রাথমিক অধ্যায়টি খুবই প্রেরণামূলক ছিল। তার জন্ম ও পরিবার এবং শিক্ষা ও প্রাথমিক জীবনের ক্ষণগুলি তাকে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছিল। আজ আমরা তার জীবনের এই প্রাথমিক অংশ নিয়ে আলোচনা করব।
জন্ম ও পরিবার
জিয়াউর রহমানের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি, বাগবাড়ি, বাংলা প্রেসিডেন্সিতে ঘটে। বাগবাড়ি জন্মস্থান হওয়ায় তার শৈশবটি গ্রামীণ পরিবেশেই কাটে। তার পরিবার মধ্যবিত্ত ছিল এবং তারা ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী ছিল। এই প্রেক্ষাপট থেকেই জিয়াউর রহমান জীবনী শুরু হয়।
শিক্ষা ও প্রাথমিক জীবন
প্রথমে তিনি গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করেন। তারপর ঢাকায় এসে ডি জে সায়েন্স কলেজ-এ ভর্তি হন। ডি জে সায়েন্স কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষা নেয়ার পর, জিয়াউর রহমান পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন। এখানেই তিনি মেধার পরিচয় দেন এবং মার্চণ্ড ও কৌশলগত শিক্ষায় বিশেষভাবে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তার প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা তাকে পরবর্তী নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করে।
সামরিক ক্যারিয়ার
জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের অতুলনীয় নেতৃত্বদাতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সাহসী বীর। তার সামরিক ক্যারিয়ারটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনে অসামান্য কৃতিত্ব রেখে গেছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান
জিয়াউর রহমান ১৯৫৩ সালে তার সামরিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান আর্মিতে দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন প্রাপ্ত হন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি নিজেকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠায় নিরলস ভূমিকা রাখেন। তার সাহসিকতার জন্য তিনি ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত হন।
বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন
জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনী রংপুর এবং চট্টগ্রাম বিভাগে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধকালীন তার ত্যাগ এবং বীরত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি পুরো দেশের শ্রদ্ধা অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর, কাণ্ডারী খন্দকার মোশতাক আহমেদের হত্যার পর তাঁকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর চিফ অফ আর্মি স্টাফ হিসেবে তার নেতৃত্ব কালকে সকলেই মুগ্ধ হয়ে স্মরণ করে।
রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা
জিয়াউর রহমান বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর সাহসী কৃতিত্বসমূহ স্বীকৃতি পেয়েছে এবং তিনি মুক্তিযুদ্ধের এক অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকা বিশিষ্ট এবং তিনি প্রশংসিত হয়েছিলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অংশগ্রহণ তাকে জনগণের প্রিয় নেতায় পরিণত করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিবাহিনীর একজন শক্তিশালী কমান্ডার ছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চলে তার কৌশলী নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধের গতি বাড়িয়ে দিয়েছিল, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অবদান রেখেছে।
১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তন
১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় জিয়াউর রহমান ছিলেন একটি কেন্দ্রীয় ব্যাক্তিত্ব। ওই সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরে জিয়াউর রহমান সামরিক অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরে, তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতি এবং পুনর্বিন্যাস নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। জিয়াউর রহমানের এই ভূমিকা পরে তাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদে অভিষিক্ত করে।
রাষ্ট্রপতি পদে অভিষেক
জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন ১৯৭৭ সালে। তার অভিষেক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসাবে ইতিহাসে চিহ্নিত। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার দায়িত্বপূর্ণ যাত্রা শুরু করেন, যেটি ছিল জাতির জন্য একটি নবদিগন্তের সূচনা।
ক্ষমতায় আসার প্রক্রিয়া
জিয়াউর রহমান দীর্ঘ সামরিক অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন। মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য ভূমিকার মাধ্যমে তিনি জাতির আস্থা অর্জন করেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার ক্ষমতায় আসার প্রক্রিয়া ছিল জাতির বিশ্বাসের প্রতিফলন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রথম পদক্ষেপ
রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশের উন্নতির জন্য বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ছিল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরি করা, প্রশাসনিক সংস্কার, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা। তার প্রথম দিকের পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে দেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করা।
তার প্রচেষ্টায় দেশের আভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নত হয়। সামগ্রিকভাবে, জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে জাতির জন্য একটি সুসংহত এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব নিশ্চিত করেন।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা
জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বের অধীনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিপুল পরিবর্তন এসেছে। তার উন্নয়ন পরিক্লনার ফলে দেশটি সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে পেরেছে। শিল্প ও অবকাঠামোর উন্নয়ন থেকে শুরু করে কৃষির ক্ষেত্রে সাফল্য, সব ক্ষেত্রেই তার কৌশল কাজে এসেছে।
শিল্প ও অবকাঠামো উন্নয়ন
জিয়াউর রহমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে শিল্প ও অবকাঠামো খাতে যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধন করেন। পরিকল্পিত কর্মসূচীর মাধ্যমে শিল্পক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। তার শাসনামলে রাস্তাঘাট, সেতু এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল উন্নতি হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি ত্বরান্বিত করার জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিকাশে এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতা দূরীকরণে বিশেষ নজর দেওয়া হয়।
কৃষি ও প্রতিরোধকতা দূরীকরণ
জিয়াউর রহমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কৃষিক্ষেত্রেও বিশেষ গুরুত্ব দেন। কৃষকদের সমস্যা সমাধানে এবং কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বাঁলাদের অর্থনীत উন্নয়নের প্রয়াসে, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রয়োগ এবং কৃষকদের সহজলভ্য ঋণের ব্যবস্থা তাঁর পরিকল্পনার অন্যতম অংশ ছিল।
আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা
জিয়াউর রহমানের আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলো বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তিনি তাঁর রাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালীন সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন ও উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেন।
প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্ক
জিয়াউর রহমান তাঁর রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুদৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য কাজ করেছিলেন। তাঁর সময়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের দেওয়া বিদেşı সাহায্য ও সহযোগিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণায় অনেক বড় ভূমিকা রেখেছিল। পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও সংহত হয়।
বিদেশি সাহায্য ও সহযোগিতা
জিয়াউর রহমান তাঁর প্রশাসনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের স্থানকে শক্তিশালী করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিদেী সাহায্য ও সহযোগিতা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তাঁর কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ অনেক আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে লক্ষ্য স্থির করে কিছু গঠনমূলক পরিকল্পনা করেছিল।
সমাজ সেবার উদ্যোগ
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বীর এবং দেশের ষষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে উল্লেখযোগ্য সংস্কার কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
শিক্ষা সংস্কারের প্রচেষ্টা
শিক্ষা উন্নয়নের লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির সংখ্যা বৃদ্ধি ও বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এসময়ে শিক্ষা সংস্কারের জন্য সরকারের নানা উদ্যোগ কার্যকর হয়েছিল, যা দেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। শিক্ষা সংস্কার কর্মসূচি দেশব্যাপী শিক্ষিত সমাজ গঠনে সহায়ক হয়েছিল। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করেছিল এবং দেশের শিক্ষা উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছিল।
স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের উদ্যোগ
স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন ছিল জিয়াউর রহমানের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। তিনি গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন এবং চিকিৎসা শিক্ষা প্রসারণে যথেষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। সমাজ সেবা এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের মাধ্যমে তিনি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সুরক্ষা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করেছিলেন, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন
জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন বাংলাদেশের রাজনীতিতে অগ্রগণ্য হিসেবে বিবেচিত। তাঁর নেতৃত্বে, দেশ মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ ভিত্তিতে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। তাঁর আত্মত্যাগ, রাজনৈতিক আদর্শ এবং বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে এই রূপান্তর সম্ভব হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তাঁর দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে, তিনি স্বনামধন্য নেতৃত্বে বাঙালিদের স্বাধীনতার ডাক দেন। বাংলার জনগণের মুক্তির জন্য তাঁর প্রচুর অবদান ছিল যা আজও জাতির মনে অম্লান।
গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ
তিনি গণতন্ত্রের মূল্যবোধে অত্যন্ত বিশ্বাসী ছিলেন এবং জাতীয়তাবাদ তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৭৬.৩৩ ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। দেশের ৮৮.৫০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছিল এবং তন্মধ্যে ৯৮.৯ শতাংশ হ্যাঁ ভোট দিয়েছিল। (Election commission, 1978).
জিয়াউর রহমান বিএনপির প্রধান হিসেবে গঠনতন্ত্র এবং কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলির কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন দিয়ে তিনি নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের উৎসাহ দেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয়।
ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার
জিয়াউর রহমানের জীবদ্দশায় ধারাবাহিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পরও, তাঁর প্রভাব দেশের রাজনীতিতে গভীরভাবে বিদ্যমান রয়ে গেছে। সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পর, তিনি একটি জাতীয় আড়ম্বর ও স্মৃতিতোষের কেন্দ্র হয়ে ওঠেন, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর অবদানের কথাকে মনে করিয়ে দেয়।
মৃত্যুর পর রাজনৈতিক প্রভাব
১৯৮১ সালের ৩০শে মে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব ছিল গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী। তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বের সময়ে, দেশটির অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। রেমিট্যান্স, বস্ত্রশিল্প এবং কৃষি উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিতে দেশটির সামাজিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা দৃঢ় হয়। তবে তাঁর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে।
আধুনিক বাংলাদেশে ভূমিকা
জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার আধুনিক বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। তিনি ১৯৭৮ সালে ৭৬% ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাঁর সময়ে, তৈরি পোশাক রপ্তানি শিল্পের বিকাশ আধুনিক বাংলাদেশের অর্থনীতির স্তম্ভে পরিণত হয়। বর্তমানে জিয়াউর রহমানের গোছানো রাজনৈতিক নীতির উত্তরাধিকার এবং প্রগতিশীল চিন্তা দেশের নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে প্রেরণা জোগায়। তাঁর বিপ্লবী চিন্তা ও কর্মশৈলী আধুনিক বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হয়েছে।
FAQ
জিয়াউর রহমান কে ছিলেন?
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন, যিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।
জিয়াউর রহমানের জন্ম কোথায় এবং কবে?
জিয়াউর রহমানের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি, বাগবাড়ি, বাংলা প্রেসিডেন্সিতে ঘটে।
তিনি কোথায় শিক্ষা লাভ করেছেন?
জিয়াউর রহমান ডি.জে. সায়েন্স কলেজ এবং পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে শিক্ষা লাভ করেন।
জিয়াউর রহমান কখন সামরিক ক্যারিয়ার শুরু করেন?
জিয়াউর রহমান ১৯৫৩ সালে সামরিক ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি মুক্তিযুদ্ধে কী ভূমিকা পালন করেন?
মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অগ্রণী ভূমিকা ছিল, তিনি মুক্তিবাহিনীর একজন কমান্ডার ছিলেন।
১৯৭৫ সালে তার রাজনৈতিক কার্যকলাপ কী ছিল?
১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি কবে হন?
জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার প্রথম পদক্ষেপ কী ছিল?
রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার প্রথম পদক্ষেপের মধ্যে রাষ্ট্রীয় সমস্যা সমাধান এবং দেশের উন্নতির জন্য পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কী করেছেন?
জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বের অধীনে শিল্প ও अवকাঠামোর উন্নয়ন অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কৃষির প্রতিরোধকতাও দূরীকরণ করা হয়েছে।
প্রতিবেশী দেশের সাথে তার সম্পর্ক কেমন ছিল?
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে স্থির সম্পর্ক স্থাপন করেন।